1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার স্মৃতি জাদুঘর ও ইতিহাস 
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নবাবগঞ্জে শ্রমীকলীগ নেতার বিরুদ্ধে সরকারি খালের মাটি লুটের অভিযোগ ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি প্রনয়ন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস চাপায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন নামঞ্জুর জেল হাজতে প্রেরন ফুলবাড়িতে যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্রবাহিনী দিবস উদযাপিত বাসে উঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ ছাত্রদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাইন্সল্যাব এলাকা আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম পুঠিয়ায় সাথী ক্লিনিককে ১০ হাজার জরিমানা, সাংবাদিকের হুমকি নড়াইলে মদ্যপানে ১স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু,আরও ১ জন হাসপাতালে ভর্তি

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার স্মৃতি জাদুঘর ও ইতিহাস 

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ৮.০৬ পিএম
  • ১৭৩ বার পঠিত

হাসনাত তুহিন (ফেনী প্রতিনিধি) : 

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার স্মৃতি জাদুঘর ও ইতিহাস বাংলাদেশের ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর যা বর্তমানে তাঁরই নামানুসারে সালাম নগর গ্রামে অবস্থিত। ভাষা শহীদ সালামে স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘরটি স্থাপন করে বাংলাদেশ সরকার।

 

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম ফেনী জেলার দাগনভুঁইঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। লক্ষণপুরের বর্তমান নাম সালাম নগর। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া এবং মাতার নাম দৌলতের নেছা। তিনি স্থানীয় মাতুভূঁইঞা করিমুল্লা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়ন হিসাবে চাকরি পান। ঢাকায় ৩৬বি, নীলক্ষেত ব্যারাকে তিনি বসবাস করতেন। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আবদুস সালাম ছিলেন সবার বড়। বর্তমানে জীবিত আছেন শহীদ সালামের এক ছোটভাই আবদুল করিম ও বোন বলকিয়ত নেছা।

 

মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে টগবগে তরুণ সালামের হৃদয়েও আন্দোলনের ডাকে ছুঁয়ে যায়। ২১শে ফেব্রয়ারী (১৯৫২) এবং ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বাংলা সাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় সরকার কর্তৃক জারিকৃত ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ছাত্র-জনতা বাংলা ভাষার দাবীতে যে মিছিল করে আবদুস সালাম সে বিক্ষোভ মিছিলে স্বপ্রণোদিত ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে সালামও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়লে মিছিলে পুলিশ নির্বাচারে গুলি চালায়। বিকেল সাড়ে তিনটায় পুলিশের বেপরোয়া গোলাগুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ গুলিবিদ্ধ হন অনেকে। গুরতর আহত অবস্থায় আবদুস সালামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সালামের ম্যাচের কাজের বুয়ার ছেলে তেজগাঁ নাবিস্কুতে কর্মরত সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়াকে জানান তার চাচা সালাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মকবুল ছুটে যান সালামের আরেক জেঠাতো ভাই হাবিব উল্যাহর কাছে। তারা দু’জনে মিলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন, পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মেডিক্যালের বারান্দায় পড়ে আছেন। তারা ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিগ্রামে সালামের বাবা ফাজিল মিয়াকে সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি জানান। ফাজিল মিয়া তার অন্য এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ছুটে আসেন। পর দিন সকাল ৯টার দিকে বেশ কিছু ছাত্র সালামের যথাযত চিকিৎসা না করার অভিযোগে হাসপাতালে বেশ কিছুক্ষণ হট্টগোল করেন। মকবুল ও হাবিব উল্যাহ হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও সংজ্ঞাহীন সালামের বিছানার পাশ থেকে তার বাবা কোথাও আর যায়নি। বাবার উপস্থিতিতে হাসপাতালেই ২৫ ফেব্রুয়ারী বেলা সাড়ে ১১টায় আবদুস সালাম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর গোরস্থানে নেওয়া হয়।সেখানে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, জেঠাতো ভাই হাবিব উল্লাহসহ শত শত ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন। একুশে পদক প্রদানকালে গেজেটে তার মৃত্যুর তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারির স্থলে ৭ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়। সেই থেকে সালামের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সাল পযন্ত ভাষা শহীদ আবদুস সালামের কোন ছবি কোথাও সংরক্ষিত ছিলনা। তার কারন ৬০ এর দশকে তত্কালীন স্থানীয় সংসদ জনাব খাজা আহমদ শহীদ আবদুস সালামের পিতা ফাজিল মিয়াকে দুই হাজার টাকা দিয়ে আব্দুস সালামের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শার্টটি ও তাঁর দুটি আলোকচিত্র জাতীয় জাদুঘরে দেবেন বলে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি ছবি এবং আবদুস সালামের রক্তাক্ত শার্টটি কি করেছেন তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

 

পরবর্তীতে বর্তমানে ব্যবহৃত শহীদ আব্দুস সালামের ছবিটি ভাস্কর রাসা উদ্দ্যেগে শিল্পী সাহজাহান আহমেদ বিকাশের মাধ্যমে তৈরী করা হয়। এই মহতী উদ্যোগ নিতে গিয়ে ভাস্কর রাসাকে বহু প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম জানতে পারেন ভাষা শহীদ আব্দুর সালামের কোন ছবি নেই। এ কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য শহীদ সালামের পরিবার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের সংগে তখন তিনি যোগাযোগ করেন। তারপর থেকে তিনি চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে শহীদের হারানো প্রতিকৃতি উদ্ধার করা যায়। এভাবে বেশ কিছু সময় চলে যায়। ১৯৯০ সালে তাঁর ছবি জোগাড়ের চেষ্টা অর্থনৈতিক কারণে পিছিয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে একটি প্রামাণ্য চিত্রের পরিকল্পনা করে তিনি তত্কালীন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর উৎসাহ ও অর্থায়ণে ভাস্কর রাসা “অস্তিত্বের শেকড়ে আলো” শিরোনামে প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণে এগিয়ে যান এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণ তাঁকে সহযোগিতা করেন। এ কাজে ভাস্কর রাসার অন্যতম সহযোগী ছিলেন সহকারী পরিচালক রানা সিদ্দিকী এবং স্থানীয় প্রতিনিধি শিমুল ও সমীর।

বর্তমানে ব্যবহৃত শহীদ আব্দুস সালামের ছবিটি আঁকার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ সালে শহীদের স্বজনদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। যোগাযোগ বিষয়ক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্বপ্ন দশীর’ মাধ্যমে টি,এস,সি সুইমিং পুল এলাকায় ছবি আকার অনুমতি মিলে। ২০ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টায় উক্ত স্থানে শহীদের ভাই-বোনদের বর্ণনা শুনে ছবি আঁকা শুরু হয় এবং দিনব্যাপি এই ছবি আঁকা চলে। এ ধরণের কর্মসূচী বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। বোন বলকিয়ত নেছা তাঁর ভাই শহীদ সালামের চেহারার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- আমরা ভাই বোনের মধ্যে সালামের গায়ের রঙ ছিল বেশ ফর্সা। ছোট বেলায় স্থানীয় মসজিদে পড়তে গিয়ে তিনি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলেন ফলে তাঁর কপাল কেটে গিয়েছিল। সেই কাটা দাগটি তাঁ চেহারার একটি বিশেষ চিহ্ন হিসাবে থেকে যায়। যখন আব্দুস সালাম শহীদ হন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল সাতাশ বছর। শহীদ আব্দুস সালামের ভাই বোনের বর্নণা মতে শিল্পীরা তাঁর ছবি আঁকতে থাকেন। ছবি আঁকা শেষ হলে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর শহীদের ভাই বোনেরা জনশিল্পী সাহজাহান আহমেদ বিকাশের তৈল চিত্রটিকে ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। মহান দেশপ্রেমে অন্তঃপ্রাণ ভাস্কর রাসা ও খন্দকার জামিল ছবিটি জাতীয় যাদুঘরে দান করেন। উক্ত ছবিটি বর্তমানে জাতীয় যাদুঘরের একুশে গ্যালারীতে শোভা পাচ্ছে।

 

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি ফেনী শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের ডান পাশে মাতুভূঞা ব্রিজের কাছে সালামনগরে আবস্থিত।এডিপির অর্থায়নে ১২ শতক জমিতে সাড়ে তেষট্টি লাখ টাকা ব্যয়ে সালামনগরে জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ২০০৮ সালের ২৬শে মে সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করেন।

তথ্য সূত্র পারিবারিক ও অনলাইন।‌

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews