আবুল হাশেম, স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলামের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ইয়াবা সেবনের অপবাদ দিয়ে এক অসুস্থ শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নুরুল মারধোর করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আটকিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষার্থী ও তার অবরুদ্ধ বাবাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ভর্তি করেন।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে স্কুল চলাকালীন সময়ে কম্পাউন্ডে ভেতরে ওই শিক্ষার্থীকে মারধোর করেন অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী ছাত্র জানান, হৃদ রোগে আক্রান্ত মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী বখতিয়ার গালিব ইয়াসির চিকিৎসা শেষে ঘটনার দিনে স্কুলে আসেন। ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসার পর শিক্ষক নুরুল ইসলাম ইয়াবা সেবনের তকমা লাগিয়ে কৌশল করে কিছু ছাত্রদের দিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে মারপিট করান এবং শিক্ষক নিজেই বিদ্যালয়েরর ভিতরের এলোপাতাড়ি মারধোর করেন। পরে আহত শিক্ষার্থী ফোনে তার বাবাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি এসে তার সন্তানকে হাসপাতালে নিতে চাইলে অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক ও তার অনুগত ছাত্ররা মিলে আবারো তাদের পিটিয়ে
প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আটকিয়ে রাখেন। এদিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন।
এ বিষয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীর পিতা একই উপজেলার মহব্বতপুর খানপুর ডিগ্রি কলেজের প্রদর্শক মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে স্ট্রোক করেছে। সে অনেক অসুস্থ এটা আমি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারপরেও আমার ছেলে শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে মারধর করেছে আমি এর প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমাকেও মারধর করতে ছাড়েনি। এই বলে তিনি একটি প্রেসক্রিপশন দেখান।
ভুক্তভোগী ছাত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী গালিব জানান, আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় কারেন বিদ্যালয়ে আসতে পারিনি। নুরুল স্যারের কাছে পদার্থ বিজ্ঞান পাইভেট না পড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কৌশলে এ হামলা চালিয়েছেন। এমন অভিযোগও করেন অবরুদ্ধ সেই ছাত্র অবিভাবক।
উল্লেখ্য, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করার পরেও ফেল করানো, শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ভয়ভীতি দেখানোসহ নানাবিধ অনিয়মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
মোহনপুর থানা কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. সেলিম বাদশাহ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী ও তার বাবাকে অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্ত করে তাদের মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি। ওই শিক্ষার্থীকে ইসিজি করে তার শারিরীক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক ওই ছাত্রকে পিটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে বক্তব্য জানাতে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীনকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে কলটি কেটে দেন। অনেক ছাত্র অভিভাবক জানান বিভিন্ন বিষয় জানতে, প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলে তিনি কোন সময়ই ফোন রিসিভ করেন না। নামিদামি স্কুলে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবককে মারধোরের ঘটনায় বিব্রত অভিভাবকরা।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মিছিল, তাদের স্কুল হতে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিউজ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের।
আর কত শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট না পড়ায় পেটালে, ফেল করালে, প্রধান শিক্ষক ও তার সহকারী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলী ও স্কুলের যথাযথ পরিবেশ রক্ষা করে শিক্ষার্থীদের প্রশান্তি ফিরবে বলে প্রত্যাশা করেন
শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সচেতন সমাজ।