রংপুর ব্যুরো:
রংপুর কোর্ট চত্ত্বরের গ্যারেজ ব্যবসায় রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ-তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
বিচারপতি তোমার কাছে বিচার না পেলে, কোথায় বিচার পাবো আমি কার কাছে গেলে, কালজয়ী এই গানের রেশ পুরোটা রপ্ত হয় এখন রংপুর জেলা দায়রা জর্জ আদালত এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সুপ্রাচীনকাল থেকে এই জেলা গৌরবময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাসের অধিকারী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর জেলা দায়রা জজ আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কারণে প্রতি বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে সেই টাকা লুটে খাচ্ছে আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী সিন্ডিকেট। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যখন দেশের উন্নয়নকল্পে সর্বসাধারণকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ তথা রাজস্ব প্রদানে উদ্বুদ্ধ করছেন। সেই সময়ে রংপুরের আদালত চত্ত্বরে গড়ে ওঠা দু’টি সাইকেল গ্যারেজে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা লুটে নিচ্ছে আদালতের কর্মচারী সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষের নিকট আদায়কৃত টাকার ১ পার্সেন্টও জমা হয় না রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। গ্যারেজ এবং সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূলফটকে এবং আইনজীবী সমিতির মূলফটক সংলগ্ন গড়ে ওঠা সাইকেল গ্যারেজ দু’টি নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে দৈনিক হাজার-হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ইজারাদার পরিচয়দানকারী মালিক মুমিনুল ইসলাম জানান, ভাই আমরা এই গ্যারেজটি বছর কন্টাক্ট হিসেবে নিয়েছি, দুই বছরের জন্য আমি ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে কোন টেন্ডারের মাধ্যমে আমি এই গ্যারেজ নেইনি। তিনি আরও জানান কয়েকটি ক্যাটাগরিতে গ্যারেজে বাহন রাখা হয় এবং রেটও আলাদা। পুলিশের গাড়ি হলে ১০টাকা, কোর্ট স্টাফদের গাড়ি হলে ১০ টাকা। সাধারণ মানুষ গাড়ী রাখলে ২০ টাকা। সেখানে উপস্থিত হিসেব করে ২৭৫টি বাহন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ব্যাটারি চালিত অটো, অটো রিকশা, বাই সাইকেল, প্যাডেল চালিত রিকশা ও মোটরসাইকেল। গ্যারেজের ভাড়া কে নেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো গ্যারেজ চীফ স্যারের দায়িত্বে। পরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান’র নিকট গ্যারেজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীফ ম্যাজিস্ট্রেট নয় গ্যারেজ দেখভালের দায়িত্ব মুলত কোর্ট নাজির মশিউর রহমান এর। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি এডভোকেট রেজাউল হক রেজার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যারেজের বিষয়ে আমাদের জানা নেই, এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে কোর্ট নাজির।
এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট নাজির মশিউর রহমান বলেন, চালান মুলে রাজস্ব খাতে টাকা জমা দেয়া হয়। সর্বশেষ কবে কত টাকা জমা হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে নাজির মশিউর বলেন, আমি দেড়-দুই বছর যাবৎ এখানে আছি তবে কখন টেন্ডার হয়েছে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমিতো ছোট চাকুরী করি এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলতে পারবেন।
জেলা দায়রা জর্জ আদালতেরর নিয়ন্ত্রাধীন গ্যারেজ এর পরিচালক আহসান হাবিব বলেন, আমার এখানে ১৩৫ টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। আমি প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে জেলা দায়রা জজকে দেই। পরে তাদের উপস্থিতিতে গাড়ি হিসেব করে তার গ্যারেজে, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল মিলে সর্বমোট ২৩৬টি গাড়ী পাওয়া যায়।
জেলা দায়রা জর্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্দুল মালেক জানান, বিগত সময়ে বিচারিক নিজামুদ্দিন স্যারের আমলে তাকে অনুরোধ করে আইনজীবীদের বাহন রাখার স্বার্থে একটি সেড করার পরামর্শ দেই আমরা। পরে তিনি গণপুর্ত বিভাগের নিকট আবেদন করে মোটরসাইকেল রাখার জন্য গ্যারেজ করে দিয়েছেন। এখন গ্যারেজ দৈনিক ভাড়া সিস্টেমে চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন গ্যারেজ ভাড়ার টাকা আদালতের বিভিন্ন মেহমান আসলে তাদের পিছনে খরচ করা হয়ে থাকে।
জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, আদালতের গ্যারেজ সরকারি বিধি অনুয়ায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়। কত টাকা টেন্ডার হয়? সে বিষয়ে জানতে চাইলে তার বক্তব্যের সমুলে কোন তথ্য উপাত্ত দিতে পারেনি। এবং পরে তিনি বলেন ভাই আমি নতুন এসেছি তবে আমার জানামতে টেন্ডার ছাড়া গ্যারেজ চলার কথা নয়।