মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ
নওগাঁর বদলগাছী বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর ও ব্যক্তি মালিকানাধীন অপারেটরদের বিরুদ্ধে সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ কৃষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎস ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে নলকূপ মালিকরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের দিনের পর দিন হয়রানি করে থাকে। এসব বিষয়ে কোনও কৃষক অভিযোগ করলে, সেচ যন্ত্রের অপারেটররা প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগকারী কৃষকের বিরুদ্ধে হয়রানি আরো বেড়ে যায় বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সব ইউনিয়নেই প্রায় সেচ কমিটির নির্ধারিত ফির থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে কৃষকদের সাথে অপারেটরদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকছে। এরপরও অপারেটররা প্রভাবশালী হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় কৃষকরা।
উপজেলার বদলগাছী ইউনিয়নের পিন্ডিরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি সেচযন্ত্রের আওতায় কৃষকের নিকট থেকে ১৪শ থেকে ১৬ শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে প্রতি বিঘা হিসেবে। এরপরও কারো কিছু বলার নেই। পিন্ডিরা মৌজার গভীর নল কূপের অপারেটর মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি রেট ৯৯০ টাকা এটা দেখে আমাদের কোনও লাভ নেই।আমি বিঘা প্রতি ১৪০০-১৬০০টাকা নিচ্ছি। তিনি আরো জানান, আমার পাশের জিধিরপুর মৌজার ডিপ টিউবওয়েলের অপারেটর সেচের জন্য ২০০০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। উপজেলার সব ডিপ টিউবওয়েলর সেচ রেট এরকমই।
উল্লেখ্য, উপজেলা সেচ কমিটির সভায় বোরো মৌসুমে ব্যক্তিগত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে উপজেলার বদলগাছী সদর ইউনিয়নে ৯৯০ টাকা, আধাইপুর ইউনিয়ন ১০৩০, মথুরাপুর ইউনিয়নে ১০০০, পাহাড়পুর ইউনিয়নে ১০৬০,মিঠাপুর ইউনিয়নে ১০৫০, কোলা ইউনিয়নে ১০৪০, বিলাসবাড়ী ইউনিয়নে ১০২০,বালুভরা ইউনিয়নে ১০৯০ টাকা বিঘা প্রতি নির্ধারণ করা হয়।
বদলগাছী উপজেলার কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, গভীর নলকূপের কোনো অপারেটর বিঘা প্রতি ১৮০০ টাকা, আবার কোনো অপারেটর ১৬০০ টাকা, কোন অপারেট ২০০০ টাকা করে আদায় করছেন। অথচ উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৯০ টাকা বিঘাপ্রতি সেচের পানির রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতেই অগ্রিম ১ হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়। তা না হলে সেচের পানি পেতে কৃষকেরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খাঁন বলেন, বোরো মওসুম শুরুতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মাইকে সেচের মূল্য প্রচার করলে সব কৃষকের জন্যই ভালো হতো।
কৃষকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী জোনের সহকারী প্রকৌশলী বলেন, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কৃষকেরা ঘন্টা চুক্তি পানি নিবেন আর প্রতি ঘন্টা পানি সেচের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ১২৫ টাকা। ঘন্টা চুক্তি পানি সেচের সমস্যার কারণে প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের মাঝে নায্যমূল্যে সেচের পানি বন্টনের জন্য সেচ কমিটি করে দেওয়া আছে। ওই সব সেচ কমিটির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনুযায়ী একেক এলাকার জন্য একেক ধরণের সেচ রেট নির্ধারণ করে দেন। গভীর নলকূপের অপারেটর ও মালিকেরা সেচ কমিটি নির্ধারিত রেটে কৃষকদের মাঝে সেচের পানি দেওয়ার কথা। কোনো অপারেটর কিংবা মালিক সেচ কমিটি নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে থাকলে ওই সব এলাকার কৃষকেরা ডকুমেন্ট সহকারে অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বদলগাছী উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি কেউ সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী আদায় করে থাকেন তবে কৃষকদের নিকট থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।