রুপা শীল ওরফে প্রিয় শীল ওরফে রিয়া তালুকদার (২৮) নামে পরিবারের এক অবাধ্য তরুণী ২০১৩ সালের পালিয়ে বিয়ে করেন। তখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গঠিতও হয়নি। কিন্তু পরিবার বিষয়টি জ্ঞাত হয়েও গ্রামের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার তৎকালীন বড়উঠান গ্রামে। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষের ৬ জনের নামে করা মামলাটি প্রায় ১০ বছর পর মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে পিবিআই।শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) মামলার কথিত ভিকটিম রুপা শীল ওরফে প্রিয়া শীল ওরফে রিয়া তালুকদার এবং তার চার বছরের শিশুসন্তানকে নোয়াখালীর সুধারাম থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপরেই ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসে।শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে উদ্ধার হওয়া শিশুপুত্রসহ কথিত ভিকটিম রুপা শীলকে আদালতে হাজির করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট। রুপা শীল চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া থানার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর শীলপাড়া গ্রামের তিলক শীলের মেয়ে।পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, উদ্ধার হওয়া কথিত ভিকটিম রুপা শীল ২০১৩ সালে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। বিষয়টি রিয়ার পরিবার জানার পরেও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আদালতে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করে। মামলায় ৭ বিবাদীর মধ্যে চারজন গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাসও করেছেন।তিনি বলেন, ২০২১ সালের মামলাটি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পাই আমরা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাদী তদন্ত কর্মকর্তাকে কোনো সহযোগিতা না করায় আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর মামলার বাদী ও তাদের নিকটাত্মীয়দের দীর্ঘদিন নজরদারির পর কথিত ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পিবিআই টিম। শুক্রবার নোয়াখালীর সুধারাম পৌরসভার গুপ্তাংক গ্রামে অভিযান চালিয়ে কথিত ভিকটিম রুপা শীল ও তার চার বছরের শিশু সন্তানকেও উদ্ধার করা হয়। তাদের শনিবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়েছে। মামলার প্রায় ১০ বছর পর ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।পুলিশ সুপার বলেন, মূলত ভিকটিমের বাবা তিলক শীল তার মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে লোকজনকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। একই কায়দায় একটি পক্ষ থেকে লাভবান হয়ে এ মামলার বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মূলত মামলার বিবাদীরা এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময়ে রুপা শীলের বয়স ছিল ১৭ বছর। সে মামা বাড়িতে বসবাস করতো। কিন্তু প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে রনি নামের এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দেয় তিলক শীল।২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দায়ের করা ওই মামলায় আনোয়ারা থানার তিসরী মাহহা দ্রামের মৃত প্রমোত দাশের ছেলে মিন্টু দাশ (৫৫), তার স্ত্রী শোভা দাশ (৪৫), তাদের চার ছেলে সুপ্লব দাশ ওরফে শিপলু, বিপ্লব দাশ, সুমন দাস, তাপস দাশ এবং মানিক দে’র ছেলে সুজন দাসকে বিবাদী করা হয়। এ মামলায় প্রথমে ভিকটিম উদ্ধার না হলেও নারী শিশু ট্রাইব্যুনালের আদেশে জুডিসিয়াল তদন্তে ঘটনা সত্য বলে উল্লেখ করায় মামলার সাত বিবাদীর মধ্যে শিপলু, বিপ্লব দাশ, সুজন দাশ প্রায় ৬ মাস এবং মিন্টু দাশ এক সপ্তাহ হাজতবাস করেন।
পরবর্তীতে বিচার চলাকালীন সময়ে আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত ও ভিকটিম উদ্ধারের জন্য মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তীতে বিচার চলাকালীন সময়ে বাদী তিলক দাশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর আদেশে মামলাটি তদন্ত ও ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ সুপার পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো, চট্টগ্রামকে আদেশ প্রদান করেন।মামলার তদন্ত পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মো. আবু হানিফ বলেন, উদ্ধার হওয়া কথিত ভিকটিম রুপা শীল ২০১৩ সালে প্রথমে রনি নামের একজনকে সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। রনির সঙ্গে দুই বছর সংসার করার পর আবার আলাদা হয়ে যায় রুপা। বিষয়টি তার পরিবার জানতো। পরিবারের পরামর্শে রুপা শীল কখনো প্রিয়া শীল, কখনো রিয়া তালুকদার নাম ধারণ করে। পরবর্তীতে নোয়াখালীর টিপু তালুকদারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৮ সালে টিপু তালুকদারকে বিয়ে করে রুপা শীল। তখন নাম পাল্টিয়ে রিয়া তালুকদার রাখা হয়। এই সংসারে তার চার বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। মূলত অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন রুপা শীলের বাবা তিলক শীল।