মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
নওগাঁর বদলগাছীতে ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী ইনস্টাক্টার প্রেম কুমারের সহযোগিতাই মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভিজিএফ এর ৩১শ’ ৭৭ কেজি চাল উধাও করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁয় ১০ কেজি হারে বিনামূল্যে ভিজিএফ এর খাদ্যশস্য (চাল) বিতরণ করা হয়। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ২১শ’ ১৮ জন উপকার ভোগিদের মাঝে ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ করার কথা।
সরেজমিনে দেখা যায় (১৮ই’ এপ্রিল) মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যেক উপকারভোগীকে ১০ কেজি চাল দাঁড়িপাল্লা বা ডিজিটাল ওজনে চাল দেওয়ার পরিবর্তে বালতিতে করে অনুমান করে চাল দেওয়া হয়েছে। যা চাল পাওয়া উপকারভোগী কয়েকজনের চাল পুনরায় ডিজিটাল ওজনে মাপা হলে কেউ ৮ কেজি দুইশত আবার কেউ সাড়ে ৮ কেজি করে চাল পেয়েছেন। উপকারভোগীরা বলেন, আমরা ৮ কেজি দুইশত, ৮ কেজি পাঁচশত গ্রাম চাল পেয়েছি।স্লিপ প্রতি দেড় কেজি চাল কম দিলে ২১১৮ টি স্লিপে ( ২১১৮*১.৫) ৩১৭৭ কেজি চাল কম দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেক উপকারভোগী বলেন, চাল কম দেওয়ার কথা বললে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হন। আমরা গরীব অসহায় মানুষ আমাদের করার কিছু নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ মতে এই ভিজিএফ চাল প্রকৃত গরীব অসহায় দুঃস্থদের দেওয়ার কথা থাকলেও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে ভূয়া তালিকা করে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য গণ কিছু উপকারভোগী অসহায়দের মাঝে স্লিপ বিতরণ করেছেন। আরোও দেখা যায় চাল ব্যবসায়ী মোঃ বেলাল হোসেন, মোঃনাসির হোসেন,মোঃমাসুদ রানা এলাকার ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষেদর দিয়ে একাধিকবার এবং একই ব্যাক্তিকে দিয়ে ৮-১০ টা স্লিপে চাল তুলেছেন। এতে প্রকৃত গরীব অসহায় দুঃস্থরা সরকারি ভিজিএফ এর চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে।তালিকা অনুযায়ী যারা চাল পাওয়ার কথা তারা পায়নি।
চাল বিতরণের সময় মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন সহ ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসারের উপস্থিত থাকার কথা থাকলে ও ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী ইনস্টাক্টার প্রেম কুমারকে সকাল থেকে দেখা যায়নি তবে তিনি বেলা আনুমানিক ১২ টার সময় চাল বিতরণের স্থানে উপস্থিত হয়েছিলেন।আবার চাল বিতরণ শেষ না হতেই মেম্বারদের সাথে গোপন বৈঠক করে বেলা আনুমানিক ২ টার সময় চাল বিতরণের স্থান থেকে চলে যান।
উপকার ভোগীদের চাল কম দেওয়া হচ্ছে ও একই ব্যাক্তি একাধিকবার এবং একই ব্যাক্তি ৮-১০ টা স্লিপে চাল তুলছেন, এব্যপারে জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী ইনস্টাক্টার প্রেম কুমার বলেন, আমি অসুস্থ জনিত কারণে আমার আসতে দেরি হয়েছে। উপকার ভোগীদের চাল কম দিচ্ছে কি না এটা আমার দেখার বিষয়।কিন্তুু একই ব্যাক্তি একাধিকবার এবং ৮-১০ টা স্লিপের চাল তুলছেন সেটা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা বলতে পারেন।আর দলীয় এবং ছাত্রলীগের কার্ডের চাল হিসাব করে এক বারেই দেওয়া হয়।উপকারভোগীদের নামের তালিকায় দলীয় নেতা কর্মী ও ছাত্রলীগের ছেলেদের নাম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেন নাই।
উপকারভোগীদের নামের পাশে একই ব্যাক্তির ৬-৭,৮-১০ টা করে টিপ সহি নেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বরত ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম বলেন,প্রতিবছর এভাবেই চাল দেওয়া হয়।এটাই নিয়ম।আর জনগণের মাঝে বেশি স্লিপ বিতরণ করা হয়নি।আর চাল ব্যবসায়ী গণ স্লিপ কিনে নিয়েছে। ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সহ এলাকার কতিপয় যুবক চেয়ারম্যানে উপস্থিতে তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের সাথে দূরব্যবহার করেন।
এব্যপারে মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে ১০ কেজি হারে ভিজিএফ চাল বিতরন করা হয়। আমাদের ইউনিয়নেও সুষ্ঠভাবে ভিজিএফ এর ১০ কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে। চাল কম দেওয়ার কথা বললে তিনি অস্বীকার করে বলেন, যদি কোন উপকার ভোগী চাল নিয়ে বাহিরে গিয়ে ওজন কম হয়েছে বললে সেটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে না।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন,তিনি বলেন, ট্যাগ অফিসার চাল বিতরণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকার নিয়ম।চাল বিতরণে অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করাহবে।