শাহজাহান খন্দকার
কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌ পথে যাতায়াত যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের তিন চারদিন আগে থেকে এই নৌ রুটে নিয়মিত ভাড়া ৯০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে ভাড়া আদায় করাকে ‘প্রকাশ্য নৈরাজ্য’ অভিযোগ করে অবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী যাত্রীগণ।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) চিলমারী নৌ বন্দরে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। কোনও যাত্রী প্রতিবাদ করলে তার টাকা ফেরত দিয়ে ভ্রমণে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটতেও দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেয়া যায়নি।
রবিবার চিলমারী থেকে বিকাল ৩ টার নৌকায় রৌমারী ভ্রমন করা আব্দুল মালেক নামে এক যাত্রী বলেন, ‘টিকিটে লেখা রয়েছে মূল্য ৯০ টাকা। কিন্তু সেই ছাপানো মূল্যের ওপর কলম দিয়ে ২০০ টাকা লিখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কোনও ধরণের ঘোষণা ছাড়া এভাবে ভাড়া আদায় করা অন্যায়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে টিকিট না দিয়ে যাত্রায় বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা এই যাত্রী আরও বলেন, ‘এই নৌ পথে অনেক দরিদ্র মানুষ যাতায়াত করেন। তাদের অনেকে একসাথে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের চার পাঁচ জন যাত্রা করেন। ওই পরিবারগুলো অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। এদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এটার বিহিত প্রয়োজন।
সোমবার সকালে চিলমারী নৌ ঘাট থেকে রৌমারীর উদ্দেশে যাওয়া নৌ যাত্রী সুজন বলেন, ‘ ঈদের কয়দিন আগে আসছি ৯০ টাকা ভাড়া। এখন যাওয়ার সময় নিচ্ছে ২০০ টাকা। জিজ্ঞাসা করলে বলে ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বেশি। এটা কোনও কথা হলো! এখানে তো দেখারও কেউ নাই।’ এমন অভিযোগ সকল যাত্রীর। চিলমারী-রৌমারী কিংবা রৌমারী-চিলমারী উভয় পথেই একই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীগণ। কেউ প্রতিবাদ করলেও তাকে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, নৌ যাত্রায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে, ভাড়া আদায়ে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে টিকিটে থাকা মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তা রিসিভ করেন মোঃ নয়ন। নিজেকে ইজারাদারে প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছি না। এটা নিচ্ছেন নৌকার মাঝিরা। আমরা শুধু ১০ টাকা টোল নিচ্ছি। আমরা এতে বাধা দিলে তারা ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছেন।’
এ ধরণের বক্তব্য দায় এড়ানো কিনা, এমন প্রশ্নে নয়ন বলেন, ‘ ইজারাদারের নিজস্ব নৌকা নেই। এ জন্য কিছু করা যাচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষ্যে নৌকার মাঝিরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। এই টাকা ইজারাদার পাচ্ছেন না।’
দুপুর সাড়ে ১২ টায় রৌমারী উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া নৌকার মাঝি সুজন বলেন, ‘ঈদের তিন চারদিন আগে থেকে ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা ঘাটে টিকিট মাস্টারের মাধ্যমে আদায় হচ্ছে। ঈদের কারণে এই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও চিলমারী নৌ বন্দর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন।কেন এভাবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো।