গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক ইউপি সদস্য ও তার চক্রের প্রতারণার শিকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। ওই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে প্রতারক চক্রটি সম্পত্তি বিক্রি, সরকারী অনুদানের ঘরবাড়ী, টিউবওয়েল প্রদান ও বেদখলকৃত সম্পত্তি দখল করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইউপি সদস্য ও তার চক্রের প্রতারণার শিকার একজন সম্প্রতি কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডাইরীভুক্তও করেছেন।
অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের মৃত নোয়াব আলীর পুত্র ও ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম (৪৩) এবং মৃত দেলোয়ার হোসেনের পুত্র মাহফুজুর রহমান জাবেদ (৩৪) একটি চক্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। প্রায় দুই বছর পূর্বে নজরুল ও জাবেদ ১২.২৫ শতাংশ নিষ্কন্টক জমি বিক্রির কথা বলে খলাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র আবুল কাশেমের নিকট থেকে বায়না বাবদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে সরকারী সম্পত্তি হস্তান্তরের দুইটি ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প প্রদান করে। সরকারী সম্পত্তি নিতে অনীহা প্রকাশ করে কাশেম বায়নার টাকা ফেরত চাইলে তারা তাকে প্রাণনাশের হুমকি ও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ও ধারদেনা করে বায়না বাবদ দেয়া টাকা হারিয়ে আবুল কাশেম প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে কাশেম কালীগঞ্জ থানায় অভিযুক্তদের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্ত জাবেদ ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ আগষ্ট খলাপাড়া জুট মিল সংলগ্ন রাস্তায় কাশেমের পথরোধ করে হত্যার হুমকি দিলে তিনি ওইদিনই থানায় একটি সাধারণ ডাইরীভুক্ত করেন, নং ১০৯। একই এলাকার আলী আকবরের পুত্র শফিকুল ইসলাম রাসেলকে নিষ্কন্টক জমি ক্রয় করে দিবে বলে নজরুল ও জাবেদ ২লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সরকারী ভিপি সম্পত্তি গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
একই ভাবে নজরুল মেম্বার ও জাবেদ একই এলাকার বাদলের স্ত্রী সফুরা, তাইজুল ইসলামের পুত্র জিন্না, মৃত লাল বিহারী দেবনাথের পুত্র চা দোকানী নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ, আলমগীর ও বাহাদুরসাদী গ্রামের মৃত সুলতানের মেয়ের জামাই আমানুল্লাহকে সরকারী অনুদানের ঘর, টিউবওয়েল, জমি ক্রয় এবং জবরদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কেউ কোন টাকা ফেরত পায়নি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, নজরুল মেম্বার ও জাবেদ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছে। টাকা ফেরত চাইলে নজরুল মেম্বার ও জাবেদ তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে বাহাদুরসাদী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, নজরুল মেম্বার ও জাবেদের প্রতারণার কিছু বিষয় শুনে আমি তাদেরকে সতর্ক করি। প্রতারণার শিকার আবুল কাশেম লিখিত অভিযোগ দিলে আমি দুইজন মেম্বারকে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেই। কিন্তু অভিযুক্তদের অসহযোগীতায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। পরে প্রতিবেদকের সামনে নজরুল মেম্বারের ফোনে চেয়ারম্যান কল দিয়ে ইউপি কার্যালয়ে আসতে বললে মেম্বার আসতে অস্বীকৃতি জানায়।
কালীগঞ্জ থানার এসআই মশিউর রহমান জানান, আবুল কাশেমের অভিযোগের ভিত্তিতে মাহফুজুর রহমান জাবেদকে থানায় ডেকে আনা হয়। প্রতারণার কথা স্বীকার করে সে ২ অক্টোবর টাকা পরিশোধেরে নিশ্চয়তা দিয়ে চলে যায়। এখন সে পলাতক আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।