ভোটের দিনের আগের রাতে ভোট কেন্দ্রে অবস্থান না করায় নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কয়েড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাফফর হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. সানাউল্লাহের স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে শিক্ষক মোজাফফর হোসাইন বলেন তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে বাসায় এসেছিলেন।
বরখাস্তের চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, উপজেলার কয়েড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাফ্ফর হোসাইনকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে উপজেলার সমাসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রে রাত্রিযাপন করতে বললে তিনি অসম্মতি জানান এবং পরদিন সকাল ৬ টায় কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন জানিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন। প্রিজাইডিং অফিসার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটারিং অফিসারকে অবহিত করলে তিনিও ব্যক্তিগতভাবে উক্ত প্রধান শিক্ষককে নিজ কেন্দ্রে রাত্রিযাপন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু উক্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ অমান্য করে ভোটের দিন কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন বলে বক্তব্য প্রদান করে ভোট কেন্দ্রে আসতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও রাতে কেন্দ্রে অবস্থান করবেন না, সকালেই আসবেন। সেই শিক্ষকের এমন আচরণে সহকারী রিটানিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি জেলা প্রশাসকে জানান। জেলা প্রশাসক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
এমতাবস্থায় সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক এ আইন লঙ্ঘন, সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশ অমান্য ও নির্বাচন কাজে সহযোগিতা না করার কারণে তাকে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপীল) (খ) বিধির আলোকে অসদাচরণের দায়ে দোষী সনাক্ত করে বিধির ১২(১) এর আলোকে তাকে ৮জানুয়ারি থেকে চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এসময় তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ছাড়া প্রাপ্য হবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মো. মোজাফফর হোসাইন বলেন, আমার বাসায় আমার ছেলেমেয়ে থাকে না। আমার স্ত্রী মেয়েলি অসুখে ভুগছেন তাই আমি কেন্দ্রের আগের দিনের আনুসঙ্গীক কাজ শেষ করে সন্ধ্যার সময় প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্র থেকে বাসায় আসি। বাসায় আসার পর রাত ৮টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ফোন দেন। তাকে আমি বলি আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি বাসায় আসি এবং আগামীকাল সকাল ৬ টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবো। এরপর আমার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যার আমাকে ফোন দেয় তার ফোন পাওয়ার পর আমি যখন কেন্দ্রের পার্শ্বে পৌঁছি তখন আমার প্রিজাইডিং অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আমার আর কেন্দ্রে আসার কোন প্রয়োজন নেই। আমার স্থানে অন্যজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং সে কেন্দ্রে চলে এসেছেন। তখন আমি আমার জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারকে জানিয়ে বাসায় চলে আসি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সোনালী ব্যাংক আত্রাই উপজেলা শাখার (অফিসার আইটি) বিষ্ণদেব কুমার বলেন, তিনি আমার কাছে তার পারিবারিক সমস্যার কথা বলে গেছেন। তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলেননি। সেটা আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি। তাকে যে এভাবে বরখাস্ত করা হবে তা আমি বুঝতে পারিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ওই শিক্ষককে ফোন করেছিলাম। তিনি পরের দিন কেন্দ্রে যাবেন বলে আমাকে জানালে আমি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করি।
চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষকের বরখাস্তের চিঠি শিক্ষা অফিসে এসেছে এবং সেই চিঠিটি তাকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।