চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার হিলভিউ এলাকায় দিনদুপুরে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে সশস্ত্র মহড়ায় দেওয়া ১৭ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তলসহ দশটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হল : সাব্বির হোসেন শাওন (২১), মোঃ ইমরান (২৭), পিতা-মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ নজরুল (২৬), ইসমাইল উদ্দিন আকাশ (২৫), মোঃ হাসান (২৬), মোঃ সজিব (২৩), ইয়াসিন রায়হান হৃদয় প্রঃ বাবু (২৪), মোঃ রমজান (২২), মোঃ শাকিল হোসেন প্রঃ রনি (২৪), মোঃ হাবিব (৩৯), মোঃ রাসেল (২২), ইমরান হোসেন (৩০), মোঃ ইমন (২২), আরিফুল ইসলাম (৩০), মোঃ মানিক (৩৫), মোঃ সুমন (২৯) ও মোঃ মনির হোসেন (২৪)।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী আব্দুল আল মনির পিন্টুর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে
গত ১২ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩টায় বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বার্মা কলোনীর মুখ থেকে সাব্বির হোসেন শাওন (২১) এর নেতৃত্বে ৪০ জনের অধিক এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে
পিস্তল উঁচিয়ে সশস্ত্র মহড়ায় দেয়। এসময় তাদের হাতে থাকা পিস্তল, কিরিচ, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, লাঠি ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল শুরু করে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আলীনগর ১নং রোড দিয়ে আমিন কলোনী হয়ে আমিন কলোনী ১০নং কোয়াটার সংলগ্ন মোহাম্মদ নগর ৯নং রোডস্থ মরহুম কালা মিয়ার জেয়াফতে আসা স্থানীয় কাউন্সিলর সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপর এলোপাতাড়ি ইট, পাটকেল মারিতে থাকে।
স্থানীয় কাউন্সিলর’সহ উপস্থিত লোকজন তাদের বাঁধা দিলে মোঃ শাওন (২৫) এর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাস্তুহারা কলোনীর মুখে ডাক্তার মতিনের বাড়ীর সামনে ফাঁকা ফায়ার করে। ঐদিন বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হিলভিউ মসজিদ সংলগ্ন আলী নগর ১নং রোডের মুখে স্থানীয় লোকজনদের মারধর ও বাদী আব্দুল আল মনির পিন্টুর সঙ্গীয়দের দোকান পাট ভাংচুর করতে থাকে।
এই সময় বাদী আব্দুল আল মনির পিন্টুর ভাই আবদুল্লা আল মাহমুদ (৩৭) তাদের বাঁধা দিলে মোঃ ইউসুফ (৩৫)’র হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে পায়ে গুরুতর জখম করে এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটায়।
সেই ঘটনায় আব্দুল আল মনির পিন্টু বাদী হয়ে লিখিত বায়েজিদ বোস্তামী থানা একটি মামলা দায়ের করেন । মামলা নং-১৬, তাং-১৩/০১/২০২৪ ইং।
পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনা করে গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শেরশাহ বাংলাবাজার এলাকা হতে সাব্বির হোসেন শাওন (২১) ও মোঃ শাকিল হোসেন প্রঃ রনি (২৪) কে গ্রেফতার করা হয়। তাহাদের স্বীকারোক্তিমতে ঘটনাস্থলে প্রদর্শনকৃত ১টি সিলভার রংয়ের এ্যালমুনিয়ামের তৈরী খেলনা পিস্তল উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি সারা রাত অভিযান পরিচালনা করে বায়েজিদ থানাধীন বার্মা কলোনী এলাকা হতে অভিযুক্তসহ মামলার ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রকাশিত আরো ১৫ (পনের) জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বার্মা কলোনী সংলগ্ন ফাঁটা পাহাড় এর পাদদেশে মাটির নিচ হইতে ১০টি ধারালো কিরিচ জব্দ করা হয়।
অভিযুক্তদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। বর্ণিত অভিযুক্তরা এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোরগ্যাং এর সদস্য। চাঞল্যকর অত্র মামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আকারে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার এবং প্রকাশ হয়। উক্ত অভিযুক্তদের কিশোরগ্যাং এর আধিপত্যের জন্য এলাকায় আতংক বিরাজ করছিল। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকটি অভিযুক্তের আতংকে ও ভয়ে থানা এলাকায় কেউ কোন মুখ খুলতে চায় না। তারা প্রতিবারেই জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়িত হয়। মামলার এজাহার ভুক্ত ৭ জন ও ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রকাশিত ১০জনসহ মোট ১৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, বিস্ফোরক দ্রব্য, ডাকাতি প্রস্তুতি ও গণধর্ষণ মামলা আছে বলে থানা সূত্রে জানা যায়।