বিচারের নামে মুহাম্মদ ইসমাইল নামের মসজিদের এক খতিবকে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউ-পি সদস্য সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। ইউপি সদস্য কপিল উদ্দিন বাবু’র এই নির্যাতনের ভিডিও ২৪-০১-২০২৪ বুধবার থেকে ভাইরাল হতে শুরু করে। ঘটনাটি ঘটেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১১নং জুঁইদন্ডির ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এতে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় ক্ষোভ। এ ঘটনায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কপিল উদ্দিন বাবু সহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার খতিব মুহাম্মদ ইসমাইল। সংঘটিত ঘটনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারা, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও আনোয়ারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে অনুলিপির কপি দেয়া হয়েছে। ইসমাইল বাঁশখালি উপজেলার ৩ নম্বর খানখানাবাদ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড রায়ছাটা গ্রামের মৃত ইদ্রিস মৌলভীর পুত্র। মেম্বার কপিল উদ্দিন বাবু’র অন্যান্য সহযোগীরা হলেন, সালাউদ্দিন জাহেদ পিতা- আমির হোছাইন, শারজিনা আক্তার পিতা- আমির হোছাইন, বয়ানুল করিম পিতা- বজলুল করিম, আবু ছালেহ পিতা মৃত সোলতান আহমদ। উভয়ই ১১ নম্বর জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ইসমাইলের লিখিত অভিযোগ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ২ নং অভিযুক্ত শারজিনা আক্তার মুহাম্মদ ইসমাইল এর স্ত্রী হন। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়াতে বিগত ১৫-১-২০২৩ ইংরেজি তারিখ শারজিনা আক্তারকে তালাক দেয় স্বামী ইসমাইল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শারজিনা আক্তার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩৬/২০২৩ ইংরেজি। মামলা দায়েরের পরবর্তী সময়ে বিবাদীগণ ইসমাইলের বাঁশখালির বাড়িতে একাধিকবার আসিয়া মুহাম্মদ ইসমাইলকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হইয়া বাঁশখালির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে ইসমাইলও একটি পাল্টা মামলা রুজু করেন। মামলা নম্বর ৫১৫/২০২৩ ইংরেজি, বাদী- মুহাম্মদ ইসমাইল। ইসমাইলের লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, বিগত ১৪-০১-২০২৪ ইংরেজি তারিখ বিকাল আনুমানিক ৩-৩০ মিনিটের সময় জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের বিবাহ ও নিকাহ্ নামা রেজিস্ট্রার (কাজী) মুহাম্মদ মোসাদ্দেক আপোষ-মিমাংসার কথা বলিয়া ইসমাইলকে ফোন করে জুঁইদন্ডির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে আসে। আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা কপিল উদ্দিন বাবু ও অন্যান্য অভিযুক্তরা ইসমাইলকে ঝাপটে ধরে প্রথমেই পকেটে থাকা কাবিননামার ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। এরপর মেম্বার কপিল উদ্দিন বাবু’র নেতৃত্বে ইসমাইলকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। ৩নং ওয়ার্ডের চৌকিদার আবসার উদ্দিন সহ স্থানীয় কয়েকজনে বলেন, ইসমাইল নামের মসজিদের এক খতিবকে মেম্বার বাবুর উঠানে বেদম মারধর করেছে। মারধরের এক পর্যায়ে ইসমাইল চিৎকার, চেচামেচি ও গণপিটুনি থেকে বাঁচার আকুতি জানালেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। তারা আরও বলেন, কয়েকদিন আগের ঘটনাটি মেম্বার কপিল উদ্দিন বাবু’র ভয়ে চাপা থাকে। ইসমাইলের আত্মীয় স্বজনরাও মুখ বুঝে চেপে যায়। এ বিষয়ে ১১ নম্বর জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ ইদ্রিস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি বিভিন্ন প্রকল্পের তদারকিতে ছিলাম। তবে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসতিয়াক ইমন বলেন, ঘটনা প্রমাণিত হলে মেম্বার এবং তার অপরাপর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।