প্রথমে ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের “কোটা সংস্কার” আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রসংখ্যাও তেমন ছিল না। তাদের উপর ছাত্রলীগ হামলা করে অনেককেই আহত করে। “কোটা সংস্কার” হাইকোর্টের মাধ্যমে ফরমায়েশি রায় দ্বারা সরকার তার মতো করে সমাধান করেছিল কিন্তু ছাত্ররা এই বৈষম্যমূলক রায় মানলো না। পরে সরকার সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সংস্কারের রায় জায়েজ করতে চাইলো। রায়ের তারিখ পাল্টিয়ে কালক্ষেপণের চেষ্টা করলো । ভাবলো আন্দোলন থেমে যাবে। সরকারের চালাকি ছাত্ররা বুঝতে ভুল করেনি। ইতিমধ্যে পানি অনেকদূর গড়িয়েছে। রাজপথে আবু সাইদ শহীদ হাওয়ার পরই ছাত্রদের সাথে অভিভাবকরা মাঠে নামলো। ছাত্রদের কয়েকজন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেয়া হলো। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সরাসরি মাঠে নামলো। ছাত্ররা দফা দিলো। সরকার কোটা সংস্কারের দাবি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে মেনে নিল। এরপর ছাত্ররা কিছু মন্ত্রীর পদত্যাগ এবং আন্দোলনে নিহত, আহতদের ক্ষতিপূরণসহ ৯ দফা দাবির আলটিমেটাম দিল। সরকার এটা মেনে নিলে মসনদে টিকে যাওয়ার আপাতত সম্ভাবনা ছিল । বরংচ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমনের সিদ্ধান্ত নিলো যা ছিল চরম ভুল।
যেহেতু এখানে কিছু মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয় ছিল তাই সরকার এটা মানলো না । এসব মন্ত্রীরা তাদের পদত্যাগ মেনে না নিয়ে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বললো। আন্দোলনকারীরা ১ দফা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিটি ৬ তারিখের গনভবন ঘেরাও কর্মসূচি একদিন আগে ৫ই আগস্ট -২৪ এ নিয়ে আসলো। এটাকেই বলে রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি। সমন্বয়করা (Gen-Z) এখানে বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
সরকার স্বল্প সময়ে নেতা কর্মীদের আন্দোলন দমনের প্ল্যান করে নির্দেশনা দেয়ার সময় পেল না, তারপর আবার ইন্টারনেট বন্ধ। ইন্টারনেট বন্ধ করা ছিল নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা বিশেষ করে সেনাপ্রধান ছাত্র জনতার উপর গুলি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করলো কিন্তু ইতিমধ্যেই এ আন্দোলনে হাজারের অধিক ছাত্র জনতা মারা গেছে, আহত হয়েছে অগণিত মানুষ। ৫ তারিখ ছাত্র জনতা সেনাবাহিনীর বিনাবাধায় শেখ হাসিনার পতনের উদ্দেশ্যে গণভবন অভিমুখে রওয়ানা করেছে টের পেয়ে প্রাণ ভয়ে ছোট বোন শেখ রেহেনাকে নিয় দেশ ছেড়ে ভারতে হেলিকপ্টার যোগে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় । কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য সরকার পতন ছিল না কিন্তু সরকার নিজেই ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালিয়ে তার নিজের পতন নিশ্চিত করে। প্রথমদিকে আন্দোলনটি ছিল শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক, পরবর্তীতে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণ এখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে তাই এককভাবে কেউ এই সফলতার দাবিদার নয়। ছাত্রদের সাথে তাদের স্বজন ও রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন না করলে ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো। আয়নাঘরের সংখ্যা বাড়তো, জেলখানায় জায়গা হতো না, হারুনের ভাতের হোটেলে কাস্টমারের অভাব হতো না।
নতুন বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা এদেশে থাকবে না শোষণ, বৈষম্য, ক্ষুদা, দারিদ্র্য, ঘুষ, দুর্নিতি, চাঁদাবাজি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, চুরি, ডাকাতি ও মাস্তানি ইত্যাদি।
আইনের শাসনের সাথে থাকবে জনগণের বাকস্বাধীনতা। এর অন্যথা হলে এদেশের ছাত্র জনতা আবার রুখে দাঁড়াবে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর ভেবে চিন্তে “দেশ গড়ার” পদক্ষেপ নিতে হবে।
রেখকঃ লায়ন সোবহান হাওলাদার
গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী