পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধূলিয়া ইউনিয়নের নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ধূলিয়া বাজার সহ অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি এবং কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। ধূলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ভাগ্য ও বাড়ি-ঘর ভিটা-মাটি নিয়ে খেলা করাই যেন তেতুলিয়া নদীর কাজ। ইতিপূর্বে ধুলিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি এবং প্রায় ১২ হাজার ফসলি জমি তেতুলিয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।যে হারে তেঁতুলিয়া নদী ভাঙ্গতেছে অচিরেই হারাবে বাউফলের মানচিত্র থেকে ধুলিয়া ইউনিয়ন। কেউ কেউ নদীর ভাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে নদীর গর্ভে দেখতে পায় নিজেদের ঘরবাড়ি। এ পর্যন্ত ধুলিয়া বাজারের সাত-আটটি দোকানপাট সহ দুই তিন দিনের ব্যবধানে বিলীন হয়ে গেছে তেঁতুলিয়ার বুকে ৪০/৫০ টি বসতঘর বাড়ি এবং শতাধিক একর ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে কেউ রাস্তার পাশে, কেউ আবার স্কুল মাঠে আশ্রায় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার সৌরভ, ননী বাবু, জাকির,আবদুর রব মিয়া,আব্দুল সুমন, ফিরোজ সহ অন্যান্য লোকজন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে থাকেন আমাদের বাপ দাদরা ঘরবাড়ি মসজিদ মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ আত্মীয় স্বজনদের কবর কেড়ে নিয়েছে এই সর্বনাশা তেতুলিয়া। বাকি ছিল আমাদের সর্বশেষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দোকানপাট সেটাও ভেঙ্গে নিয়েছে তেতুলিয়া।আমারা এখন পথের ভিখারী হয়ে গেছি। আর যেন আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।নদী ভাঙ্গনে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি । ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এক এক করে ৭ থেকে ৮ বার আমাদের ঘর সরানো হয়েছে। জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হুইপ আ স ম ফিরোজ সাহেবের কাছে একাধিকবার আকুতি মিনতি করে বলেছিলাম আমাদের ভিটামাটি না থাকলেও বাপ দাদার আত্মীয় স্বজনদের কবর টুকু নিশানা হয়ে থাক। কিন্তু কোন লাভ হয় নাই।
ধুলিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন মেম্বার বলেন, ধুলিয়ার ২/৩ নং ওয়ার্ডের পাঁচ ভাগের চার ভাগ ভেঙ্গে গেছে। বাকিটুকু কয়েক দিনের মধ্যে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ধুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ অনিচুর রহমান(রব) বলেন, আমাদেরকে নির্বাহি প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালী একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় নাই। এমনকি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্তো করে দেওয়ার কথা ছিল। এখনো জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকের আশা বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। তিনি আরো বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক মালেক (এমপি) মহোদয়ও ধূলিয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময়ে তিনি নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ধূলিয়াবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস শুধু আশ্বাসই রয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে বাস্তবে আজ পর্যন্ত কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এখন ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সরকারের কাছে দাবী, হয় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করে দিন, না হয় পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে দিন।