1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
নির্ঘুম রাত্র পেরিয়ে
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন নামঞ্জুর জেল হাজতে প্রেরন ফুলবাড়িতে যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্রবাহিনী দিবস উদযাপিত বাসে উঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ ছাত্রদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাইন্সল্যাব এলাকা আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম পুঠিয়ায় সাথী ক্লিনিককে ১০ হাজার জরিমানা, সাংবাদিকের হুমকি নড়াইলে মদ্যপানে ১স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু,আরও ১ জন হাসপাতালে ভর্তি রাজশাহীতে গোপনে মৃত ব্যাক্তির জমি বিক্রয়ের অভিযোগ নিয়োগে বৈধতা না থাকলেও,জাহিনুর বেগমের দাবী তিনি প্রধান শিক্ষক  তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ছাত্ররা

নির্ঘুম রাত্র পেরিয়ে

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২.৫৪ পিএম
  • ৫৯২ বার পঠিত

শরীরটা ভার হয়ে আছে। সারা রাত এপাশ-ওপাশ করেও চোখের পাতা দুটিকে এক করা সম্ভব হয়নি। হবে কী করে? হঠাৎ এমন দুঃসংবাদে যে কারোরই নিদ্রাহীনতা স্বাভাবিক। তা ছাড়া বছরের প্রথম দিন। কত পরিকল্পনা ছিল দিনটিকে ঘিরে। গতকালও খাবার টেবিলে নীতুর কত আবদার ছিল। ফাইয়াজ যেন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রাখে। সারা দিন ঘুরবে দুজনে। বছরের প্রথম দিনেই ভালোবাসার ফুলচার্জ দিয়ে রাখবে। যেন বছরটা কাটে পূর্ণ ভালোবাসায়। হয়তো নীতু এখনো সেই পরিকল্পনার মধ্যেই আছে। যোগ করতে পারে আরও নতুন কিছু। আজ নীতু খুব ভোরেই বিছানা ছেড়েছে। ফাইয়াজের নিদ্রাহীনতা সে টেরই পায়নি। অথবা টের পেলেও স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে। এ রকম মাঝেমধ্যেই হয়। নতুন কোনো গল্প বা সংবাদ আইডিয়া মাথায় এলে ফাইয়াজের নিদ্রাহীনতা ঘটে। নীতুরও এ অভ্যাস হয়ে গেছে। শুধু সকালে একটু ঘুমানোর সুযোগ দিলেই হলো। কিন্তু আজ সকালেও ঘুমাতে পারছে না ফাইয়াজ। এ রকম বিপাকে সে আগে কখনো পড়েনি। না। চাকরি হারানো কোনো বিষয় নয়। গণমাধ্যমকর্মীরা যেকোনো মুহূর্তে চাকরি হারাতে পারে এমনটা জেনে ও মেনেই ফাইয়াজ এ পেশায় আছে। প্রথম যেদিন এ নাম লেখিয়েছে সেদিনই অনিশ্চয়তা নিশ্চিত ধরে নিয়েছে। পত্রিকার চাকরি এমনই হয়, হুটহাট চলে যায়। গতকাল কাজ শেষে রিসেপশনে সাইন আউট করতে গেলে রিসেপশনের ছেলেটি বলে দিল, আপনাকে সাইন করতে হবে না। কাল থেকে অফিসেও আসতে হবে না। নির্বাহী সম্পাদকের নির্দেশ।

কোনো কারণ ছাড়া এভাবে চাকরি চলে যাওয়ায় একটু অবাক না হয়ে পারল না ফাইয়াজ। নির্বাহী সম্পাদকের রুমে গিয়ে জানতে পারল, নতুন বছর থেকে পত্রিকার পরিসর ছোট করা হবে। তাই কিছু ছাঁটাই-প্রক্রিয়া চলছে। সিদ্ধান্তটি গতকালই মিটিংয়ে নেয়া হয়েছে বলে আগে থেকে জানানো সম্ভব হয়নি। পাওনা টাকা দশ-পনেরো দিন পর গিয়ে নিয়ে আসতে বললেন। কিছু না বলেই চলে এল ফাইয়াজ। কত সহজে বেকার হয়ে গেল! অথচ নিজের থেকে ছাড়তে গেলে বোঝা যেত নিয়ম কাকে বলে। একদিন পেশাটিকে ভালোবাসে আঁকড়ে ধরেছিল। তবু স্বপ্ন দেখে একদিন সেও বড় সাংবাদিক হবে। জাতির বিবেক বলে খ্যাত এ পেশার প্রতি ভালোবাসা অশেষ। মফস্বলের কাগজে লেখালেখি করতে করতেই শখের এ পেশায় যুক্ত হওয়া। সে এখন রাজধানীর সংবাদকর্মী। শরীরে এখনো গ্রামীণ গন্ধ। শেখেনি শহুরে মারপ্যাঁচ। সরলতায় মেনে নেয় সমস্তকিছু। আবার সামান্য ত্রুটি মেনে নিতে কষ্ট হয়। অল্পতেই ক্ষোভে ফেটে পড়া এবং অল্প পাওয়ার আনন্দে নেচে ওঠা তার সহজাত প্রবণতা। হয়ত এজন্যই ঠকতে হয় বারবার। এক শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক বলেছিলেন, পত্রিকার চাকরি হুটহাট চলে যায়। যারা প্রতিদিন মানবিকতার কথা লেখে, বাস্তবে তারাই সবচেয়ে বেশি অমানবিকতার শিকার। এ লাইনে শুধু মেধার জোরে টেকা যায় না। টিকতে হলে একটু আপস করে চলতে হয়। যারা ভালো অবস্থানে আছেন তাদের সঙ্গে ভাব-খাতির রাখতে হয়। তাহলে আর চাকরির অভাব হবে না। এ কথার পর অসংখ্য প্রশ্ন ধিক্কার দেয় নিজেকে। দাঁত কেলিয়ে শিখিয়ে দেয়- জীবনটা সব সময় সরলরেখায় চলে না। এখানে আছে অনেক খানাখন্দ, চড়াই-উৎরাই; তাই না- পাওয়ার বেদনা কিংবা অর্জনের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী করতে হয় না। মেনে নেয়ার মধ্যে অনেক শিক্ষা রয়েছে। বোধ করি সে জন্যই আমাদের শব্দভাণ্ডারে প্রতিবাদ-আন্দোলন-লড়াই-ষড়যন্ত্র-উৎখাত-এসব চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে। এসব নিয়েই পার করতে হবে সাংবাদিক জীবন।

চিন্তার বিষয় হলো- নীতুকে কী বলবে? আজ নীতুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে টাকার প্রয়োজন। ফাইয়াজের কাছে কোনো টাকাই নেই। গতকাল রাতেই অফিসের সবাইকে পুরোনো বছরের সব পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। যাদের কাছ থেকে ধার নেওয়ার মতো, তাদের থেকে আগেই নেওয়া হয়ে গেছে। এখন কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নীতুকে সে কী করে জানাবে এ দুঃসংবাদ। নীতুর লালন করা স্বপ্নীল পরিকল্পনাগুলো মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস করার সাধ্য ফাইয়াজের নেই।

সাতসতেরো ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপটা নিয়ে বসে ফাইয়াজ। বিছানার ওপরে বসেই ল্যাপটপটা ওপেন করতে করতে একটা সিগারেট জ্বালায়। বাসায় বসে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস খুব একটা নেই। নীতু এটা খুবই অপছন্দ করে। আজ খেতে ইচ্ছে করছে। নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। তাছাড়া অসহায়রা অনায়াসেই আইন ভাঙতে পারে। ফায়াজও তাই করছে। এখন কিছু একটা করতে হবে, তাই করছে। প্রথমে পুরোনো লেখাগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় নানা চিন্তা। এরপর ফেসবুকটা ওপেন করে। নতুন বছরকে স্বাগত জানানো স্ট্যাটাসে ভরে গেছে ফেসবুক ওয়াল। কেউ কেউ নতুন বছরের পরিকল্পনা শেয়ার করেছেন। অনেকে আবার থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের ছবি পোস্ট করেছেন। অনেকটা আনমনেই এগুলো দেখছে ফাইয়াজ। এগুলোর প্রতি তার বরাবরই বিরক্তি রয়েছে। বিশেষ করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যারা স্ট্যাটাস দেয় এবং চান্স পেলেই আত্মপ্রচারে মেতে ওঠে, তাদের প্রতি। মাঝেমধ্যে বন্ধুতালিকা থেকে এদের ছাঁটাইও করা হয়। তারপরও যেন কমে না। বরং দিন দিন এদের সংখ্যাই বাড়ছে। নিজের মেসেজ বক্সেও জমা হয়ে আছে অনেক মেসেজ। ওপেন করতে ইচ্ছে করছে না। মাউসটা নাড়াচাড়া করতে করতে মেসেজ বক্সে ক্লিক করে। সবাই ইংরেজি নতুন বছরে শুভকামনা জানিয়েছে। অনেকে নববর্ষের সুন্দর সুন্দর ইমেজ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ ছন্দের তালে কাব্যিক ভঙ্গিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বেশির ভাগই একরকম। কারণ, এগুলো কপি-পেস্টই থাকে বেশি। এর কয়েকটাÑতোমার নতুন বছর হয়ে উঠুক আনন্দ ও খুশিতে পরিপূর্ণ…হ্যাপি নিউ ইয়ার…। নতুন বছরের নতুন দিন, অল্প কিছু শুভেচ্ছা নিন/ দুঃখগুলো ঝেড়ে ফেলুন, নতুন কিছু স্বপ্ন গড়ূন/ নতুন বছর নতুন আশা, রইল কিছু ভালোবাসা…। তোমার জীবনের সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণতা পাক/ পূরণ হোক তোমার সব স্বপ্ন/ সবার ভালোবাসার পাত্র হও তুমি/ হয়ে ওঠো সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্ন! হ্যাপি নিউ ইয়ার…।

মেসেজগুলো পড়তে পড়তে মৃদু হাসি খেলে যায় ফাইয়াজের ঠোঁটে। যার মাথায় রয়েছে একরাজ্য দুশ্চিন্তা। বছরের প্রথম দিনটি পার করতেই যে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, তাকে আবার শুভকামনা। এত শুভাকাক্সক্ষী ফাইয়াজের? তাদেরই বা কী করার আছে। তারা তো ফাইয়াজের অবস্থা জানে না। জানলে কী হতো? কেউ কি এগিয়ে আসত ফাইয়াজের এ চরম মুহূর্তে? তাহলে চেষ্টা করা যাক। ভাবতে ভাবতে একটা রিপ্লাই মেসেজও লিখে ফেলে ফাইয়াজ।

‘প্রিয় শুভেচ্ছা জানবেন। আপনার মেসেজে আমি সন্তুষ্ট। নতুন বছর আমার ভালো কাটুক এবং শুভময় হোক এটা আপনি চান বলে বার্তায় জানিয়েছেন। এতে আমি আশান্বিত হয়েছি। নিশ্চয়ই আপনি আমার মঙ্গলকামী। হয় তো আপনি জানেন না, আমি চরম বিপদের মধ্যে আছি। পুরো বছর ভালো কাটানো তো দূরের কথা বছরের প্রথম দিনটি পার করাই আমার পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আপনি যদি মন থেকে আমার মঙ্গল চান, তাহলে কিছু টাকা ধার দিয়ে সহযোগিতা করুন। তবেই আপনার চাওয়া পূর্ণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ধন্যবাদ।’

মেসেজটি কপি করে শুভেচ্ছা বার্তার প্রতিউত্তর হিসেবে সবাইকে পাঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ বাদে এর মজার মজার জবাব আসতে থাকে। জবাবের নমুনা, হা হা হা…আপনি তো ভাই মজার মানুষ! লুল/ আরে সাংবাদিক ভাই, শুভেচ্ছা বার্তায়ও চাঁদাবাজি শুরু করছেন? মজা পাইলাম/ সাংবাদিকদের আবার টাকার অভাব আছে নাকি/ না দিলে কি নিউজ করবেন? আমি আবার নিউজ ভয় পাই…। কেউ কেউ হাসির স্টিকার, ইমোও পাঠিয়েছে। এতে মোটেও হতাশ হয় না ফাইয়াজ। ফল তার আগে থেকেই জানা ছিল। সব যাত্রায় সহযাত্রীদের পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ফেসবুক বন্ধু যে সত্যিকারের বন্ধু নয়।

এতক্ষণে নীতু ঘরে ঢুকেছে। নীতুকে দেখে ফাইয়াজের মুখ আরও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এক পাহাড়সমান কষ্ট নিয়ে নীতুর দিকে তাকায়। নীতু স্বাভাবিক। যেন আজ কিছুই টের পাচ্ছে না। ফাইয়াজও এটাই চায়। নীতু টের পেলে ওর মনটা ভেঙে যাবে। টের না পাওয়াই ভালো। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ? এখনো কোনো ব্যবস্থাই তো সে করতে পারেনি। কিছুক্ষণ বাদেই নীতু যখন বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, তখন কী বলবে সে?

আরেকটা সিগারেট ধরায় ফাইয়াজ। এরই মধ্যে সেজেগুঁজে হাজির নীতু। বাইরে যাওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি। নীতুকে দেখে চমকে ওঠে ফাইয়াজ। হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে যায়। সাজলে নীতুকে দারুণ লাগে। আজও লাগছে। কিন্তু আজ পরিবেশটা অস্বস্তিকর। ফাইয়াজের এমন আঁতকে ওঠায় খিক করে হেসে ওঠে নীতু। কী? ভয় পেয়ে গেলে যে? আমাকে পেতনির মতো লাগছে বুঝি? পেতনি মতো লাগলেই ভালো। বাইরে গেলে তো আমার দিকে কেউ তাকালে তোমার কষ্ট লাগে। পেতনির মতো লাগলে আর কেউ তাকাবে না। কথা বলছ না যে? ওঠো। ফেশ হয়ে দ্রুত রেডি হও। আজ বাইরে গিয়েই নাশতা করব। আমি সকালে নাশতা বানাতে পারিনি।

নীতুর কথা শুনে আরো ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে ফাইয়াজের মুখ। গলাটাও শুকিয়ে আসছে। কাঁপা কণ্ঠে একটু পানি চায় নীতুর কাছে। আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নীতু। হাতের কাছে থাকা টেবিলের ওপর থেকে জগভর্তি পানি ফাইয়াজের হাতে দিতে দিতে বলে, এটুকুতেই এই অবস্থা? অত চিন্তা কিসের? মনে রাখবে, আমি সাংবাদিকের সহধর্মিণী। সাংবাদিক জীবনের অনিশ্চয়তা আমি জানি। এ রকম দুঃসময়ের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। চিন্তা কোরো না; তুমি বাজারের জন্য যে টাকা দিতে, তার থেকে কিছু আমি জমিয়ে রাখতাম। আমি গতকালই তোমার অফিসের খবর জেনেছি। তোমাকে বারবার ফোন করেও যখন পাচ্ছিলাম না, তখন হীরা ভাইকে ফোন করেছিলাম। তিনিই জানালেন। তখনই আমি টাকাটা বের করে রেখেছি। যা আছে, তাতে অবলীলায় তিন-চার মাস চলে যাবে। এবার রেডি হও। আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে…।

ফাইয়াজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নীতুর দিকে; ঠিক যেভাবে তাকিয়েছিল প্রথম দেখার দিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews