২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল আমেরিকান নিউজ চ্যানেল "এনবিসি" তে একটা আশ্চর্যজনক ভিডিও প্রচার করা হয়। জেফ রোসেন নামের একজন রিপোর্টারের করা এক্সপেরিমেন্টাল রিপোর্ট। এক্সপেরিমেন্টের নাম "আসলেই কি ট্রেন লাইনে দাঁড়ালে পেছনে আসা ট্রেনের শব্দ শোনা যায় না?"
এক্সপেরিমেন্টে পরে আসি। প্রথমে প্রেক্ষাপট।
আমাদের অনেকেরই ধারণা ট্রেনে কাটা পড়ে কেবল বাংলাদেশীরাই মারা যায়। বাংলাদেশের মানুষজন বেকুব, ইতর। তারা সিগন্যাল মানে না। হেডফোন লাগিয়ে লাইনে হাঁটে। ট্রেনে কাটা পড়ার এটাই মূল কারণ।
ট্রেনে চাপা পড়ার এটা অবশ্যই একটা কারণ, কিন্তু একমাত্র না। সম্ভবত সবচেয়ে বড়ো কারণও নয়। মোবাইল ও হেডফোনের সঙ্গে মানুষের পরিচয়ের বয়স ১৫-২০ বছর। তার আগে কি এসব ঘটনা ঘটেনি? অনেক ঘটেছে, প্রচুর ঘটেছে।
ব্রিটেনের মতো দেশে প্রতি বছর ৫০০ টার মতো ঘটনা ঘটে যেখানে লোকজন অসতর্কভাবে ট্রেনের নিচে পড়ে বা একদম শেষ মুহূর্তে উদ্ধার পায়। মানুষ মরে খোদ আমেরিকাতেও। শুধু ২০১৩ সালেই আমেরিকায় ট্রেনের লাইনে জীবন গেছে ৭৮৪ জন মানুষের।
ব্যাক টু এক্সপেরিমেন্ট।
ট্রেনে কাটা পড়ার খবর দেখলে প্রায় প্রত্যেকটা মানুষের মাথায় প্রশ্ন আসে, "লোকটা ট্রেনের শব্দ শুনল না কেন?" এত ভারী একটা বাহন। ঝকঝক শব্দ, হুইসেলের তীব্র আওয়াজ..কিছুই কীভাবে কারো কানে যায় না?
সদূর আমেরিকায় এনবিসি রিপোর্টার জেফ রোসেনও একই ধাঁধায় আটকে যান। ধাঁধার উত্তর না পেয়ে ক্যামেরা সমেত একদিন নিজেই চলে যান ট্রেন লাইনে। ট্রেন আসার উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন লাইনে। সামনে ক্যামেরা। লোকজন আছে যথাযথ প্রোটেকশন নিয়ে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একটা ট্রেন আসে রোসেনের পেছনে। সাপের মতো বাক নিয়ে এগোয়৷ কিন্তু একি! রোসেনের খবর নেই! ট্রেন আরো কাছে আসে, তবুও রোসেনের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। একসময় পেছনে ঘাতকের উপস্থিতি টের পান রোসেন, ট্রেন তাকে অতিক্রম করে। তিনি হিসেব কষে দেখেন, ট্রেনের শব্দ প্রথম শোনা ও ট্রেন তাকে অতিক্রম করে চলে যাবার মাঝখানের সময় মাত্র ৫ সেকেন্ড!
আরেকটা ফ্যাক্টর আছে এখানে। এই বিশেষ স্থানে ট্রেনটার গতি ছিল বেশ কম। মাত্র ২৫ মাইল পার ঘন্টা। ইউএসএ তে গড়ে ৭০ মাইল বেগে চলে এই অজগর। আরেকবার হিসেব করা হলো। দেখা গেল, ট্রেনের গতি ৭০ থাকলে রোসেন সময় পেতেন মাত্র দুই সেকেন্ডেরও কম। অর্থাৎ সরে যাবার কোনো সুযোগই ছিল না। (এই ভিডিও লিংক কমেন্ট বক্সে দিচ্ছি)
আমেরিকান জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল 'এনবিসি' অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, ট্রেনের শব্দ শোনা ব্যাপারটা এতটা সরল না। এসব এক্সিডেন্টে ভিক্টিমের খামখেয়ালির পাশাপাশি আছে বিরাট এক রহস্য। কিছুটা সায়েন্স, কিছুটা সাইকোলজি। সেই রহস্যের ব্যাখা পরে দিই।
গতকালকে এক তরুণ ফটোগ্রাফার মারা গেছে। একটা লাইনে দাঁড়িয়ে সে অন্য লাইনে ট্রেনের ভিডিও করছিল। কেউ বলছে ট্রেন নয়, ফুলের ছবি তোলা ছিল তার উদ্দেশ্য। যাই হোক, ঠিক তখনই পেছন থেকে এসে দ্বিতীয় একটা ট্রেন তাকে ধাক্কা মারে। স্পট ডেড।
দুইটা ট্রেন একসাথে চলে আসার কারণে সবাই ভাবছে এটাই তাহলে মূল কারণ। দুইটা ট্রেনের শব্দকে সে আলাদা করতে পারেনি। হতেও পারে কারণ আসলে তাই। কিন্তু ট্রেন দুইটার জায়গায় একটা হলেও আসলে এমন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। এর কারণটা জেফ রোসেন কিছুটা ব্যাখা করেছেন।
আচ্ছা বলুন তো, বাংলাদেশে কত মানুষ এমন দুর্ঘটনায় মারা যায়? এক্সাক্ট ফিগার আমার ধারণা খুব কম মানুষ জানেন।
প্রথম আলো বলছে, ২০২৩ সালে ট্রেনে চাপা পড়ে মৃত্যু ঘটেছে ১ হাজার ৬৪ জনের। দিনে গড়ে প্রায় ৩ জন। মৃত্যুগুলোর বিস্তারিত ক্যাটাগরি আলাদা করা হয়েছে সেই রিপোর্টে।
১০৬৪ জনের ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মরেছে ২৩ জন, আত্মহনন ও কারণ জানা যায়নি এমন মৃত্যু ১৩৪ টি। সবচেয়ে আলোচিত "কানে এয়ারফোন" ঘটনায় মারা গেছে মাত্র ১৮ জন। ট্রেনের লাইনে বসে গল্প, আড্ডাবাজি ও গেইম খেলা এবং লাইন ধরে হাঁটার সময় এক্সিডেন্টে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০২ জন। রেল ক্রসিং এ প্রাণ গেছে ৩৮৭ জনের।
প্রচুর ঘটনা ঘটেছে যেখানে একসাথে একাধিক মানুষ চাপা পড়েছে। এই সংখ্যা দুইজন থেকে পাঁচজন অব্দি আছে। এখন বলুন তো, পাঁচজন মানুষ যখন এক দল হয়ে বসবে বা হাঁটবে, এদের কানে কি এয়ারফোন থাকার কথা?
এক সঙ্গে সকলে বধির হয়ে গেল কীভাবে? এই ম্যাজিকটা কী?
আমি অনেক ঘাটাঘাটি করেছি। কোনো গবেষণা, কোনো এনালাইসিস কোথাও ঠিকঠাক মতো প্রশ্নটার জবাব দিতে পারেনি। কিন্তু প্রচুর আর্টিকেল পেয়েছি যেখানে এই রহস্যটাকে স্বীকার করা হয়েছে। বহু লোক বলেছেন, তাদের লাইফে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের কানে এয়ারফোন ছিল না, তারা খুব অসতর্ক ছিলেন তাও নয়। শুধু লাইনটার দিকে নজর ছিল না এবং হঠাৎ তারা আবিষ্কার করেছেন গায়ের সাথে ঘেষে একটা ট্রেন বুলেটের মতো চলে যাচ্ছে। > Md.: দুর্বল কিছু ব্যাখা আছে। এসব ব্যাখার একাংশ সায়েন্টিফিক, অন্য অংশ সাইকোলজিক্যাল। সায়েন্টিফিক একটা ব্যাখামতে, ধাতব মোটা লাইন ট্রেনের কিছু শব্দ ভাইব্রেশনের মতো করে খেয়ে ফেলে। লাইনের কাছাকাছি দাঁড়ানো মানুষের কাছে মূল শব্দটা পৌঁছায় না।
আরেক ব্যাখা বলে, ট্রেন দৈর্ঘ্য-প্রস্থে অসম একটা বাহন। অনেক লম্বা কিন্তু কম চওড়া। তার শব্দ সামনের দিকে V এর উল্টো শেইপে বাতাস কেটে আসে। এ কারণে একদম মুখোমুখি দাঁড়ানো ব্যক্তির কানে পুরোপুরি যায় না।
ট্রেন লাইনের অবস্থান নিয়েও আলোচনা আছে। সড়ক-মহাসড়কের পাশে বিল্ডিং থাকে। বিল্ডিং না থাকলেও গাছগাছালি খুব একটা থাকে না দুপাশে। কিন্তু ট্রেন লাইনের ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপরীত। চারপাশে গাছ থাকে বেশিরভাগ স্থানে। গাছের পাতা ট্রেনের শব্দ এবসর্ব করে ফেলে অনেকটা। ঐ যে সাউন্ডপ্রুফ ঘরের দেয়ালের মতোন।
সায়েন্টিফিক ব্যাখাগুলোর চেয়ে সাইকোলজিক্যাল ব্যাখা আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য লেগেছে।
শহরের কথা যদি ভাবেন, একজন পথচারীকে মোটামুটি সব সময় সকল ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে পথ চলতে হয়। মূল সড়কের কথা বাদই দিলাম। একটা ছোটো গলির ভেতরেও অসতর্ক থাকলে রিকশা ধাক্কা দিয়ে দিতে পারে। ইন্দ্রিয়গুলোর এক্টিভ থাকার একটা সীমা আছে। মানুষ যখন রেল ক্রসিং এর কাছাকাছি আসে, নিজের অজান্তে সে রিলাক্সড হয়ে যায়। সড়কে বহু রকম বাহন চলে। ট্রেন লাইনে চলে একটা বাহনই। সেটাও অনেকক্ষণ পরপর আসে। একাধিক নয়, একটা। সো, চিল। একটু ফোন বের করে নোটিফিকেশন চেক করি। অফিস, বাসা, বাচ্চা, প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা ভাবি।
দ্বিতীয় ব্যাখাটা ইন্টারেস্টিং এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।
এটা ব্যাখা করার আগে ট্রেনে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাগুলো গভীরভাবে এনালাইসিস করা দরকার।
সর্বশেষ মারা যাওয়া আলোচিত ফটোগ্রাফের কথাই বলি। তার পোস্ট করা সর্বশেষ ভিডিও রেল স্টেশনের। ২৩ এপ্রিল কুমিল্লায় ট্রেনে একসাথে কাটা পড়েছিল ৩ কিশোর। এরা স্টেশনের টোকাই। সারাদিনই ট্রেন লাইনের আশেপাশে ছিল তাদের আনাগোনা।
গত বছরের জুলাইয়ে নরসিংদীতে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাদের উদ্ধার করার সময় একজন উদ্ধারকারী কাটা পড়ে আরেক ট্রেনে। গত বছরের নভেম্বরে লালমনিরহাটে ট্রেনের লাইনে বসে টাকা ভাগাভাগির সময় মারা যান ৪ দিনমজুর। লাইনে বসার আগে তারা স্টেশন মসজিদে নামাজ পড়ে আসে।
এই চারটা ঘটনাকেই এনালাইসিস করেন।
ফটোগ্রাফার তরুণের রেল স্টেশনে পোস্ট করা ভিডিও বলছে, ট্রেন লাইন ও ট্রেনের সাথে তার সখ্য আগেই ছিল। জীবনে প্রথমবার লাইনে দাঁড়িয়ে সে দুর্ঘটনার শিকার হয়নি। তিনটা কিশোরের ঘর বাড়িই রেল স্টেশন। তারা নিশ্চয়ই জানে ট্রেন কত দ্রুত আসে, কীভাবে যায়। লাইনে কাটা পড়া লাশ উদ্ধারে যে ব্যক্তি এসেছেন তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ। অনকোরা ও অস্থানীয় কেউ লাশ উদ্ধারে যাবে না। রেল লাইনে বসে টাকা ভাগ করা ও স্টেশনে নামাজ পড়া শ্রমিকেরাও স্টেশন এলাকার বলেই ধারণা করা যায়।
প্রশ্ন হলো, এদের সবার এমন পরিণতি কেন ও কীভাবে হলো?
উত্তরটাই হলো সর্বশেষ ব্যাখা।
"হ্যাবিচুয়াল কনফিডেন্স"।
দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা মানুষের মনে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে প্রথমে ভয় লাগে। ঐ যে কোনো এলাকায় প্রথম গেলে লোকজন ফোন মানিব্যাগ শক্ত করে চেপে ধরে যেরকম। এই বুঝি পকেট কেটে ফেলল কেউ। পেছনে পায়ের শব্দ শুনলে সতর্ক হয়। বেশ কিছুদিন যাবার পরেও যখন কিছুই ঘটে না, শুরুর সতর্কভাবটা ধীরে ধীরে আর থাকে না। এটা প্রত্যেকটা মানুষের খুবই ন্যাচারাল একটা অভ্যাস। তারপর যখন একদিন পকেটটা সত্যি সত্যিই কাঁটা যায়, মানুষের মনে পড়ে সতর্কতায় কোনো ছুটির দিন নাই। টার্গেট ফিলআপ নাই। সতর্ক ও সাবধান প্রতিদিনের কাজ।
যারা ট্রেনের সাথে বেশি পরিচিত, স্টেশনে বা স্টেশনের কাছাকাছি কাজ করে, প্রতিদিন ক্রসিং পার হতে হয়...এরা জীবনে বহুবার লাইন পার হবার আগে হয়তো সাবধানে পেছনে ফিরে তাকিয়েছে। প্রতিবার দেখেছে, ট্রেনের খোঁজ নেই। এরপর নিজের অজান্তে তারা অভ্যস্ত হয়েছে। ব্রেনে সিগন্যাল গেছে, লাইনে ট্রেন থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আমি ৩-৪ ফুটের লাইনে পা রাখব আর ঠিক তখনই বাতাস ফুঁড়ে একটা জিনিস এসে আমাকে ধাক্কা মারবে এমন হয় নাকি! এই জিনিস এমনিই লেট করে। সো, নো টেনশন।
এটাই হ্যাবিচুয়াল কনফিডেন্স। এই আত্মবিশ্বাসে মানুষ চোখকে কাজে লাগায় না। কান ঠিকমতো কাজ করে না। হ্যাবিচুয়াল কনফিডেন্স তাকে আরো বলে, পুরো শহরে ট্রেন লাইনটাই সেইফ। যত জায়গা দিয়ে সে হেঁটেছে, প্রত্যেকটা জায়গায় রিক্সা, গাড়ি, বাইক এমনকি মানুষের ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ট্রেন লাইন এমন একটা স্থান যেখানে কেবল ট্রেনই চলে। আর ট্রেন আসে দীর্ঘ সময়ের বিরতিতে। ক্রসিং এ গদা ফেলার পরেও কয়েক মিনিট পাওয়া যায়। লাইন পার হতে লাগে কয়েক সেকেন্ড। অর্থাৎ, নিশ্চিন্তে সামনে ফেলো পা। > Md.: ভাগ্য ও ইন্দ্রিয় বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলে একদিন। পত্রিকায় ছোটো করে নিউজ "অমুক জায়গায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু"। মানুষ সেই খবর স্কিপ করে। যেমন স্কিপ হয়তো ভিক্টিমও করতো। মানুষ খবর পড়লে শুরুতেই প্রশ্ন করে " এত শব্দ কানে শুনলো না কেন?" এই প্রশ্ন ভিক্টিমের মাথায়ও একদিন ছিল।
লেখা প্রায় শেষ।
ট্রেনে কতটা ভয়ানক, ট্রেনে কত মানুষের প্রাণ যায় এটা কম মানুষ জানতেন বলে আমার ধারণা। গত বছর শুধু ভৈরবে মারা গেছেন ৮৫ জন, আখাউড়ায় ৬৫। বছরে এক হাজার মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে রেললাইনে। এটা সেই বিরল দুর্ঘটনা যেখানে চালকের দায় শূন্য। ক্রসিং এ সিগন্যালম্যানের অবহেলা বাদ দিলে কর্তৃপক্ষ ও সরকারের দায় খুব বেশি নেই। দায় ও দুর্ভাগ্যের প্রায় পুরোটাই ভিক্টিমের।
এখন বলি, এই লেখা কেন লিখেছি।
জেফ রোসেনসহ দুনিয়ার সকলের মতো আমার মনেও প্রশ্ন ছিল, মানুষ কেন ট্রেনের শব্দ শুনে না? কান কি বন্ধ করে রাখে নাকি?
গত বছরের কোনো একদিন কাওলা রেল ক্রসিং এ প্রশ্নের আংশিক উত্তর পেলাম। আমার স্ত্রী তন্বীসহ হেঁটে যাচ্ছিলাম ক্রসিং এর দিকে। রাস্তায় গদা ফেলে রাখা। আমাদের দুজনের কারো কানেই হেডফোন এয়ারফোন নেই। কথাবার্তা বলছি না কেউই। তবে কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলাম। মুহূর্তের খামখেয়ালিতে ক্রসিং এর বাঁশের সাইড ঘেষে একটু সামনে চলে গেছি। না, ক্রসিং পার করার ইনটেনশন ছিল না। শুধু একটা পা চলে গেছে সামনে। তারপর খেয়াল হয়েছে। থেমে গেছি দুজনেই। মাথা তুলেছি। আর তখনই ভীষণ অবাক ও ভয়ংকর আতংক নিয়ে দেখলাম একটা ট্রেন চলে যাচ্ছে বাতাস কেটে।
একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম আমরা। দুজনের চোখেমুখে একটাই প্রশ্ন।
"শব্দ পেলাম না কেন?"
যাই হোক, এটা লেখাটা ভিক্টিমের কেয়ারলেস হবার জাস্টিফিকেশন নয়। কেউ দয়া করে বেশি বুঝে এমন উপসংহারে যাইয়েন না। আমি শুধু ট্রেনের কাঁটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যার ভয়াবহ বাস্তবতা ও পেছনের কারণে একটা ব্যাখা দিলাম।
অনুরোধ করছি, ট্রেনের লাইনের কাছাকাছি গেলে নিজের কানকে একবিন্দু বিশ্বাস করবেন না। ট্রেনের শব্দ আসলেই শোনা যায় না নতুবা বিশেষ সময়ে কান প্রতারণা করে এটা বাস্তব ফ্যাক্ট। লাইন ও ক্রসিং এ গেলে শুধুমাত্র ও একমাত্র চোখের ওপর নির্ভরশীল হোন। আর অবশ্যই সিগন্যাল ভেঙে দৌড় বা হাঁটা দেবেন না।
সকল ভিক্টিমের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
জয়নাল আবেদীন
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy