তৌহিদ আহম্মেদ রেজাঃ
দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্টাফ রিপোর্টার এনামুল হক এনাম, শেখ সোহাগ এবং রিপোর্টার মিরাজ শিকদারকে বহিস্কার করা হয়েছে। গত ২রা জুলাই আনন্দ টিভির উপবার্তা প্রধান শামসুল হক বসুনিয়া স্বাক্ষরিত এক নোটিসে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান বিরোধী কার্যকলা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ব্ল্যাকমেইলসহ নিরিহ মানুষদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করার একাধিক অভিযোগের কারনে তাদেরকে বহিস্কার করা হলো।
সর্বশেষ ঢাকা মতিঝিলের ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফয়জুনেচ্ছার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে এনামুল হক এনাম, শেখ সোহাগ। উক্ত অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্য সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তিতে সংবাদের প্রতিবেদক এনামুল হক এনামের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত তথ্য মন্ত্রলয়ে একটি চিঠি প্রদান করা হয়, যার স্মারক নাম্বার (০৫.৪১.২৬০০.০১২.২৭.০০৩.১৭)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনন্দ টিভির পরিচয় ব্যবহার করে রাজধানীর মিরপুর, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এনামুল হক এনাম এবং তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ সোহাগ ওরফে ল্যাংড়া সোহাগ। এসব এলাকার বিভিন্ন মার্কেট বিপনি-বিতান, স্পা, র্পালারসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করতো। এমনকি অবৈধ বাড়ি দখল, জমি দখলসহ নীরিহ ব্যক্তিদের মাদক ও নারী দিয়ে ফাঁদে ফেলে আদায় করতো বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ। উত্তরা এলাকায় এনামের আরেক সহযোগী মিরাজ শিকদারের মাধ্যমে রুটির কারখানা, গাড়ীর গ্যারেজ, হোটেলসহ প্রাইভেট কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে আদায় করতো বিপুল অর্থ। এর আগে মিরাজ শিকদারের বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসা, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে পতিতা সাপ্লাইসসহ উত্তরাতে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
এনামের নওগাঁর মান্দা উপজেলার গ্রামের বাড়ি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে এক
নারীকে বিয়ের প্রলভন দিয়ে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করে। পরে সেখানে এক মেয়ের জন্ম হলেও এখনো তাকে পিতার সীকৃতি দেন নাই এনাম এবং সেই নারীকেও করেছেন অপদস্থ। এছাড়াও দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন এনামুল হক এনাম। ৪/৫ বছর আগেও আশুলিয়া এবং সাভার থানায় দালালী করে সংসার চালাতো। আনন্দ টিভিতে যোগদানের পর এলিয়েন প্রাইভেট কার গাড়ী নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন আনন্দ টিভির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পরিচয়ে।
এনামের সেকেন্ড ইন কমান্ড কে এই সোহাগ ওরফে ল্যাংড়া সোহাগ? রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক সময়ে ল্যাংড়া সোহাগ নামে টোকাই হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে মুজা বিক্রেতা এবং বছর না পেরোতেই হয়ে যান সাংবাদিক। পরবর্তিতে এনামের হাত ধরে গড়ে তোলেন ত্রাসের সাম্রাজ্য। বাড্ডার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রন করতেন এই সোহাগ ওরফে ল্যাংড়া সোহাগ। রাজনৈতিক সভা সেমিনারে আনন্দ টিভির বুম নিয়ে হাজির হতেন নিয়োমিত। পরে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর কৌশলে প্রভাব বিস্তার করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন হোটেলে পতিতার ব্যবসা রয়েছে তার। গোপালগঞ্জ বাড়ি হওয়াতে নিজেকে শেখ বংশের পরিচয় দিয়ে নামের আগে যুক্ত করেছেন শেখ পদবী। বাড্ডা থানা সংলগ্ন এলাকায় জমি বেদখল দিয়ে খাবার হোটেল গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে আনন্দ টিভির বার্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, এনাম এবং সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে এবিষয়ে খোঁজ খবর নেন আনন্দ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তৌফিক আব্বাস। পরে এসব অভিযোগ প্রমানিত হলে আনন্দ টিভি থেকে তাদের আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে এনামুল হক এনাম এবং শেখ সোহাগের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আনন্দ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তৌফিক আব্বাসের প্রতি ধন্যবাদ জানান এনাম, সোহাগ এবং মিরাজ শিকদারের প্রতারনার শিকার অনেক ভুক্তভোগী পরিবার। এসময় আনন্দ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালের দীর্ঘায়ু কামনা করেন তারা।