পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ঘন বসতি এলাকায় কৃষিজমি দখল করে চলছে অনুমোদনহীন একাধিক অবৈধ ইটভাটা। কৃষি জমির মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে কাঁচা ইট। কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। প্রভাবশালী ভাটা মালিকেরা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে ইট তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রাদ্দি গ্রামের হানিফ উল্লাহ অটো ব্রিকস কোং লিঃ ও মের্সাস বন্ধু ব্রিকস নামের দুটি ইটভাটায়।
কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক আ. রাজ্জাক তালুকদার গত বছর ডিসেম্বরে ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ডিসি বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইউএনও।
সরেজমিন উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাশ্রাদ্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ফসলের মাঠ জুড়ে গড়ে ওঠা এইচবিসি ব্রিকস নামের ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি চলছে। পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে ফসলি জমি থেকে খনন করা মাটি, গাছের গুড়ি ও চেরাই কাঠ। গাছ চেরাইয়ের জন্য ভাটার ভিতরেই স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা আছে, ‘জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না।’ তবে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ৩ব ছর ধরে অবৈধভাবে ইট তৈরি করছেন এইচ বি সি ভাটার মালিক মো. হানিফ উল্লাহ।
এছাড়াও এইচবিসি ব্রিকসের মালিক হানিফ উল্লাহর বিরুদ্ধে অসহায় কৃষকসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আ. রাজ্জাক তালুকদার বলেন, হানিফ উল্লাহর ভাটার পাশে আমার ১ একর কৃষি জমি রয়েছে। ওই জমি ভাটার কাজে ব্যবহার করতে চায় হানিফ উল্লাহ। আমি জমি দিতে রাজি না হলে রাতের আঁধারে জমিতে বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করে জমি দখল করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
আরেক বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ফোরকান বলেন, আমাদের পৈত্রিক ভিটা ও ফসলি জমি দখল করে নিয়েছে এইচবিসি ভাটার মালিক হানিফ উল্লাহ। ক্ষমতাসীন হানিফ উল্লাহর কাছে আমরা অসহায়।
জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন এইচবিসি ভাটার মালিক হানিফ। অনুমোদন না নিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছি। অতিশীঘ্রই পেয়ে যাবো।
এইচবিসি ভাটার পাশে এমবিবি নামের একই ধাঁচের আরেকটি ভাটা। এ ভাটার চেহারাও আগের ভাটার মতোই। এখানেও ফসলি জমির মাটি ও কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হয়। ভাটার ভেতরেই রয়েছে করাতকলও।
বিএমএম ব্রিকসের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, কাঠ পোড়ানো বেআইনী ঠিক, তবে করার কিছু নেই। সারাদেশেই কাঠ পুড়ে ইট তৈরি করা হয়।’
এই ভাটা দুটির পাশে অবস্থিত মোহসেনুদ্দিন ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ও ছালেহীয়া এতিমখানা (শিশু সনদ) নামে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভারী যানবাহনে করে ইট ও ইটেরভাটার কাঁচা মাল পরিবহন করায় এলজিইডির সড়কের বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। দানবাকৃতির ট্রলির ধোয়া ও রাস্তার ধুলো-বালিতে শিক্ষর্থী ও পথচারীদের চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় জমিতে ফসল ও এলাকার ফলদ গাছের উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, অচিরেই অভিযান চালানো হবে।
অবৈধভাবে ইট প্রস্তুতকারী ভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন বলেন, ভাটা মালিকদের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ১ সপ্তাহের সময় দিয়েছি। বৈধ কাগজপত্র না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঠ পোড়ানোরও সুযোগ নেই। এবিষয়েও ব্যবস্থা নিবো।