শাহিন আলম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:
৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে গোমস্তাপুর উপজেলায়। উপজেলা সদর রহনপুর হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক রোগী আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে।
এছাড়াও রয়েছে ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৬ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র। গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রয়েছে ২১ জন চিকিৎসক ও ৫ জন কনসালটেন্ট। এদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার রয়েছেন।
এতজন চিকিৎসক থাকার পরেও প্রতিদিন ডাক্তারের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কনসালটেন্ট যারা রয়েছেন তাঁরা প্রতিদিন আসেন না। সপ্তাহে দুইদিন আসলেও মাত্র দেড় ঘণ্টা রোগী দেখেন।
মঙ্গলবার (৭মার্চ) সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করে ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী),১ জন ইউনানী চিকিৎসক সহ ৬ জন ডাক্তারের দেখা মিলে। এছাড়া জরুরি বিভাগে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেসময় হাসপাতালে অনেক রোগী উপস্থিত ছিলো।
গোমস্তাপুর ইউনিয়নের লালকোপরা গ্ৰামের আশি বছরের বৃদ্ধা শ্রী চিমতী রানী এসেছিলেন সকাল ৮ টায় ।ডাক্তার না থাকায় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অশীতিপর বৃদ্ধা হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই তার চলাফেরায় রয়েছে সমস্যা।সময় মতো ডাক্তার না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আলীনগর ইউনিয়নের মকরমপু্রের কয়েস উদ্দিনও সময় মতো ডাক্তার না পাওয়ায় এই প্রতিনিধির কাছে তার ক্ষোভের কথা জানান।একই অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী।
এছাড়া হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী ও তাদের আত্নীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে নার্সদের দূর্ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারা যায়। সম্প্রতি দুইজন সাংবাদিক তাদের আত্নীয়কে দেখতে গিয়ে একই বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্নীয়স্বজনেরা বিড়ম্বনায় পড়েন ওষুধ বিপণন প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে।ডাক্তারের রুম থেকেই রোগীরা বের হলেই একসাথে ৮ থেকে ১০ জন প্রতিনিধি ওষুধের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে কাড়াকাড়ি করেন। কে কার আগে ছবি তুলতে পারবে এই প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হোন প্রতিনিধিরা । প্রতিনিধিদের এহেন কর্মকান্ডে বিব্রতবোধ করেন রোগী এবং তাদের আত্নীয়স্বজনেরা। প্রতিনিধিদের টানাটানিতে কোন কোন রোগীর প্রেসক্রিপশনও ছিঁড়ে যায়। নিয়ম রয়েছে সপ্তাহে দুইদিন তারা হাসপাতালে ভিজিট করতে পারবেন। তাও সাড়ে ১২টার পরে।এসময় তারা ডাক্তারের সাথে দেখা করে তাদের কোম্পানির ওষুধ সম্পর্কে অবহিত করবেন। অথচ তারা সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন হাসপাতালে এসে সকাল থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সোমবার (৬ মার্চ) সংবাদকর্মীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এসব দেখতে পেয়ে ছবি তুলতে চাইলে প্রতিনিধিরা বাধা দেন।এসময় ওষুধ প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার রহনপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল ইসলাম তোতা সাংবাদিকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি প্রদান করেন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোঃ সেলিম রেজাকে হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে কথা হলে ডাক্তার সেলিম রেজা জানান,আমি অফিসের কাজে রাজশাহীতে এসেছি। এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল হামিদকে মৌখিকভাবে জানিয়ে এসেছি।
সব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল হামিদের কার্যালয়ে যাওয়া হয়। এসময় তিনি ডাক্তারদের হাজিরার বিষয়ে বলেন ডাক্তাররা সময় মতো আসেন না, এটা সম্পর্কে তিনি অবগত।তবে কথা হয়েছে এরপর থেকে তারা সময়মতো অফিস করবেন। কনসালটেন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন,এখন সপ্তাহে তাঁরা তিনদিন চেম্বার করবেন।
নার্সদের দূব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে আসলেই চরমে পৌঁছেছে, সপ্তাহে দুইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার পরে আসার কথা থাকলেও তারা সেই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। বারবার তাদেরকে নিষেধ করা হলেও তারা শুনেন না।এসময় ডাক্তার আব্দুল হামিদকে এবিষয় নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায়। তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন আপনারা এবিষয়টি নিয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। তাঁর সাথে কথা বলে আমাকে এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিন। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে সংবাদ কর্মীদের জানান