হাবিবুল্লাহ পেকুয়া উপজেলা প্রতিনিধি:-
চট্টগ্রামের যে সকল বরেণ্য শিক্ষাবিদ শিক্ষা ও সমাজসেবায় অসাধারণ অবদান রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশের গুণী ও আলোকিত সন্তানদের মাঝে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অন্যতম। ১৯৬৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক সাধক ও আলেমে দ্বীন মৌলানা হাছন শরীফ তাঁর পিতা এবং পরম ধর্মপরায়ণা মহিলা মায়মুনা বেগম ছিলেন তাঁর মাতা।
জন্ম যদিও কক্সবাজারের পেকুয়ায়, বাল্যকাল থেকেই তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের চকবাজারের বাকলিয়ায়। এখান থেকেই সাফল্যের সাথে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া সম্পন্ন করেন এবং চট্টগ্রাম থেকেই সাফল্যের সাথে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি বি.কম (অনার্স), এম.কম. (হিসাব বিজ্ঞান), এম. কম. (অর্থ বিজ্ঞান) এবং সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে বি.এড. ও এম.এড. ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও, নট্রামস অনুমোদিত (নিটা) হতে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এবং যোগ ফাউন্ডেশন হতে গুরুজী শহীদ আল বোখারী কর্তৃক ই.এস.পি. গ্রাজুয়েশন ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ভার্জিনিয়া থেকে “ইউরোপীয় ইউনিয়নের নয়া কৌশল ও মধ্য এশিয়ার উপর এর প্রভাব- একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ” বিষয়ে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে অধ্যক্ষ লায়ন ড.মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ মেরিট একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন যেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তিনি পাঠদান করতেন। সে সময়ে তাঁর পাঠদানের সুনাম চট্টগ্রাম এবং এর বাইরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিদিন অগণিত শিক্ষার্থী তাঁর কাছে পড়তে আসতো অথচ দাবি কিংবা চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে কখনো তিনি কোন শিক্ষার্থী থেকে টাকা আদায় করেননি। এমন কি, মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি বেতন বকেয়ার অভাবে কোন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে পারেনি কিংবা পরীক্ষা দিতে পারেনি-এমন কোন নজির নেই। বস্তুত, শিক্ষা ও মানুষকে ভালোবেসেই তিনি তাঁর আদর্শ শিক্ষা বিস্তরণের কাজ শুরু করেছিলেন।
শিক্ষা-দীক্ষায় ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম তখন অনেক বেশি পিছিয়ে ছিল এবং বাকলিয়া ছিল অত্যন্ত পশ্চাদপদ একটি এলাকা। পুরো চট্টগ্রামেই তখন কয়েকটি মাত্র সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল না। এর ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের এক বিশাল অংশ কোথাও ঠাঁই না পেয়ে অসময়ে লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হতো। এমনই এক পরিস্থিতিতে বাকলিয়া তথা চট্টগ্রামে শিক্ষার উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং চট্টগ্রামের শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়নের জন্য, সর্বোপরি, জাতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে যথার্থ অবদান রাখার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির শ্লোগান ‘সবার জন্য শিক্ষা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সালে প্রি-নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্লাসনির্ভর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামে শিক্ষা বিপ্লব সৃষ্টি করেন যা চট্টগ্রামের অন্যতম সাড়া জাগানো মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুধীজনদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত আছেন এবং এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত একটি জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই সাথে নগরীর প্রাণকেন্দ্র বহদ্দারহাটের খাজা রোডস্থ নতুন চান্দগাঁও থানার পাশে ক্লাসনির্ভর শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষায় মানসম্পন্ন মেরিট বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ নামের আরো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি এবং এটিও সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত। এছাড়া, মেরন সান কলেজ ও মেরিট বাংলাদেশ কলেজ নামে দুটো রাজনীতিমুক্ত ও উন্নত হোস্টেল সুবিধাযুক্ত ক্লাসনির্ভর কলেজও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং উভয় কলেজ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। চট্টগ্রামের একমাত্র বিশেষায়িত বিপিএড কলেজ চিটাগাং ফিজিক্যাল এডুকেশন কলেজেরও তিনি প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় ক্ষেত্রে তিনি দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠারও দুয়েক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৬-৯৭ এর দিকে ছাত্রজীবন চলাকালেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উপকরণ লাইব্রেরি এন্ড স্টেশনারিজ। উক্ত লাইব্রেরি থেকে উপার্জিত টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ তিনি গরিব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করতেন।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও টিকিয়ে রাখা নিয়ে চরম সংকটে পড়লেও তিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যাননি এবং আদর্শ শিক্ষা বিস্তারের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সীমাহীন আর্থিক চাপ মোকাবেলা করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি ধাপে ধাপে সম্মুখপানে এগিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের মহাপ্রাণ গুণী শিক্ষাবিদ সমাজ ও দেশে সত্যিই বিরল। একদিকে সাংগঠনিক দক্ষতা ও মানবিকতার তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে উদ্যোক্তা হিসেবে অসংখ্য মানুষের তিনি অনুকরণীয় আদর্শ। যেকোনো জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্যে তাঁর মতোন আলোকিত ব্যক্তিত্বকেই কামনা করে সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি।