নিয়ম না মেনেই অনিয়ম আর দুর্নীতির পথেই হাঁটছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অনিয়মের ভারে আনোয়ারা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেন ভূগছে স্বাস্থ্যহীনতায়। লুটপাটে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে গভীর নলকূপ প্রকল্প চলমান কাজে উঠছে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ। নলকূপ নিতে অফিসের প্রতি টেবিলে টেবিলে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয় অভিযোগকারী গ্রাহকদেরকে। জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাতেও ‘কমিউনিটি বেইজ নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৩ অর্থ বছরে ২৮৬০ পরিবারের জন্যে প্রায় ২৮৬ টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়। অফিস সূত্রে জানা যায়, নলকূপ স্থাপনের কাজটি পান তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের শুরু থেকেই নলকূপ স্থাপন, প্লাটফর্ম তৈরী, পানির লাইন সংযোগে নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয়। ধাপে ধাপে নেয়া হয় বাড়তি টাকা। আর এসব বাড়তি টাকা যায় সহকারী প্রকৌশলী প্রিয়াঙ্কা চাকমার পকেটে ও চার মেকানিক জাকির হোসেন, রুপন, শ্যামল ও এহছানের পকেটে। এছাড়াও একজনের নলকূপ গোপনে অন্যজনের কাছে ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রিয়ঙ্কা ও ৪ মেকানিকের বিরুদ্ধে। এসব অনৈতিক কাজে একটি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী বলে জানান দুই মেকানিক। হয়রানির শিকার নুর বেগম নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, গভীর নলকূপটি স্থাপনের আগে সরকারি খরচ বাবদ মেকানিক জাকির হোসেনের কাছে আমি (নুর বেগম) ১০,৫০০/ দশ হাজার পাঁচশত টাকা জমা দেই। পরে জাকিরের কথামতো মিস্ত্রি জয়নালকে নলকূপ স্থাপনে ৫/৬ দিন খাওয়ার খরচ বাবদ ৮০০০/ আট হাজার টাকা প্রদান করি। পরে মেকানিক জাকির হোসেন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. সোহান কম্প্রেশার, প্ল্যাটফরম স্থাপন ও পানির লাইন সংযোগে খরচ বাবদ ৮/৯ হাজার টাকা দাবী করে আসলেও আমি বাড়তি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় চার মাসেও পানির লাইন সংযোগটি স্থাপন করছেনা কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে হয়রানীর শিকার নুর বেগম সহকারী প্রকৌশলী প্রিয়াঙ্কা চাকমাকে জানালে তিনি বলেন, আমার কাজ সারাক্ষণ অফিসে। তিনি আরও বলেন, মাঠে পর্যায়ের প্রকল্পে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা আমি শুনার চেষ্টা করিনা। গুয়াপঞ্চক গ্রামের হোসেন নামের এক গ্রাহকও একই অভিযোগ করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি খরচ ১০,৫০০/ টাকার বাইরেও আমার বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০০০/ টাকা। এ বিষয়ে ৮ নং চাতরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, আনোয়ারার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি। এসব নিয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) স্যারের সাথে কথা বলবো। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়ে সরকারী প্রকৌশলী প্রিয়ঙ্কা চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি মুক্ত। অসম্পূর্ণ প্রকল্পের খোঁজ খবর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ, আমার কাজ নয়। সঠিক তথ্য দিতেও বার বার মিথ্যার আশ্রয় নেন প্রিয়ঙ্কা চাকমা।
আনোয়ারার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন এ দুই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো।