নিজম্ব প্রতিবেদক: রপ্তানি বাড়লেও চলতি আগস্টসহ আরও তিন মাস শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ‘এখনও সংকট চলছে’ উল্লেখ করে এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা দিতে এই প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এই প্রণোদনা চেয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে।
শ্রমিকদের বেতন দিতে পোশাক শিল্প মালিকদের আরও প্রণোদনা দেওয়া হবে কি না-সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
চিঠির বিষয়ে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, “নতুন অর্ডার আসছে, তবে কম। এখনও আমরা শতভাগ উৎপাদনে যেতে পারিনি। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যে অর্ডারগুলো স্থগিত হয়েছিল সেগুলোই এখন রপ্তানি করছি। এখনও আমরা অর্থ সংকটে আছি। আরও তিন মাসের বেতন-ভাতা দিতে সহজ শর্তে ঋণ পেলে সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারব। তখন আমাদের বেতন দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
“সে কারণে শেষবারের মতো সরকারের কাছে আমরা এই প্রণোদনাটি চেয়েছি।”
তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের এই চাওয়ার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “কেন জানি মনে হচ্ছে সরকার পোশাক খাতের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীতে তো সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হচ্ছে। সব দিকেই সমান মনোযোগ দিতে হবে।
“আর তাছাড়া রপ্তানি খাত তো ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এখন প্রতি মাসেই রপ্তানি বাড়ছে। তাহলে এ খাতে আর প্রণোদনা কেন? অন্য যে সব খাত এখনও সংকটে রয়েছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
“বিশেষ করে, এসএমই খাতের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে, তার বাস্তবায়নের অবস্থা কিন্তু খুবই খারাপ। আমি মনে করি, সরকারকে এখন এই দিকেই বেশি জোর দিতে হবে।”
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “একটা বিষয় বোধ হয় আমরা ভুলে যাচ্ছি, প্রণোদনা দিয়ে কোনো খাতকেই দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা যায় না। শুধু আমার নয়, দেশের অনেক মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে, পোশাক শিল্প মালিকরা এতদিন যে মুনাফা করেছে সেই টাকা গেল কোথায়? সব সময় সরকারের কাছে সহায়তা চাইতে হবে কেন?”
মহামারী শুরুর পর পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছিল সরকার। সেই তহবিল থেকে ২ শতাংশ ‘সার্ভিস চার্জে’ (সুদে) ঋণ নিয়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়েছেন মালিকরা।
ওই তহবিলের মেয়াদ ফুরোনোর পর আরও তিন মাসের (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বেতন-ভাতা দিতে প্রণোদনা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
ওই আবেদনের পরিপেক্ষিতে সরকার শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছিল, সেখান থেকে শুধু জুলাই মাসের বেতন-ভাতা দিতে ঋণের ব্যবস্থা করা করে। আর সেজন্য ওই তহবিলের আকার ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
এখন আবার তিন মাসের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের কাছে ঋণ প্রণোদনা চেয়েছে পোশাক খাতের এই দুই সংগঠন।
গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের জন্য ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে যে চিঠি দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, শেষবারের মতো চলতি জুলাই মাসের মজুরি দিতে এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন পোশাক শিল্প মালিকরা। গত জুনে যে সব উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছিলেন, এর বাইরে নতুন কেউ পাবেন না।
তবে এই তহবিলের ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ, যার অর্ধেক বা সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে, বাকিটা ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মহামারীর ধাক্কায় এপ্রিলে মাত্র ৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের মাসে তা বেড়ে ১২৩ কোটি ডলারে ওঠে। জুনে তা আরও বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে পৌঁছে।
জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানি এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আর চলতি অগাস্ট মাসের প্রথম ২২ দিনে (১ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট) ২৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
পোশাক শিল্পে জুলাইয়ের বেতনও প্রণোদনা প্যাকেজে, তবে সুদ বেশি
অর্থাৎ এই ২২ দিনে গত বছরের আগস্ট মাসের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।
বিজেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, “পরিস্থিতির আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। তবে কতদিনে স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে কেউ কিছুই বলতে পারছে না।
“আমরা এখন আমাদের মোট ক্যাপাসিটির ৬০ শতাংশ উৎপাদন করছি। অর্ডার আসছে, তবে কম। বেসিক আইটেমের (অতি প্রয়োজনীয়) পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।
“বড় বড় ফ্যাশন হাউজগুলো এখনও খোলেনি। অনলাইনে কিছু বেচাকেনা হচ্ছে। বায়ারদের কাছ থেকে আমরা যতটুকু আভাস পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে ডিসেম্বরে বড় দিনকে ঘিরে বিশ্ববাজারে পোশাক কেনাবেচা বাড়বে। আমাদের রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়াবে।
“আমরা আশা করছি, সরকার আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিষয়টিও বিবেচনা করবে।”
‘সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী’
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র আবেদনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, “পোশাক শিল্প মালিকদের চিঠি আমার দপ্তরে এসেছে। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
“আগের বার দাবি করার আগেই প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন। এটারও সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি নির্দেশনা দিলে আমরা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।”