নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ চলছে মর্মে অভিযোগ ওঠেছে। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যখন সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার। আর ওই কাজের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ মেকানিক। তখন অনিয়মের অভিযোগ ওঠাটা অস্বাভাবিকের কিছু নেই। কিন্তু ঠিকাদার কার স্বার্থে মিথ্যাচার করে বলছেন বরাদ্দ কত তা ধরা নেই। বিষয়টি সচেতন মহলকে অধিকতর ভাবিয়ে তুলেছে। সঙ্গত কারণেই এ বিষয়ে ঠিকাদারের মিথ্যাচার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে সচেতন মহলের দাবি- ঠিকাদারের এ কথার বিষয়টির কারণ খুঁজে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র প্ল্যান/নকশা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কাজের বিষয়ে আর কিছুই জানেন না ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি’র সভাপতি। এমনকি এসব তথ্য সম্বলিত কোন নির্দেশনা বোর্ডও নেই কর্মস্থলে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এটি পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় কম্বাইন্ড ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ। এছাড়া আর কিছু জানা যায় নি। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই এ ওয়াশ ব্লকের কাজ শুরু হয়েছে। হেড মিস্ত্রি মাসুদ মিয়া জানান, এ কাজের ঠিকাদার লিটা আপা (সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন লিটা)। এটা কত টাকার কাজ তা তিনিই জানেন। প্রধান শিক্ষক তাহেরা ইয়াছমিন জানান, শুরু থেকেই তাদের ইচ্ছেমত কাজ করে যাচ্ছে। তবে ছাদ ঢালাই এর দিন কাজের মান খুবই খারাপ করেছে। প্রতিবাদ করলেও তারা কোন কথা শুনেনি। পরে এক অভিভাবক সদস্যের হস্তক্ষেপে শেষের দিকে কিছুটা ভালো করেছে। তাকে শুধু কাজের প্ল্যান/নকশা দেয়া হয়েছে। কাজের তথ্য সম্বলিত কোন সাইনবোর্ডও নেই। এছাড়া আর কিছুই জানেন না তিনি। এসএমসি’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটু জানান, ছাদ ঢালাইয়ের দিন তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে এক অভিভাবক সদস্য ঠিকাদারের সাথে কথা বলায় শেষ দিকে কিছুটা ভালো করেছে। পুরো কাজটাই তো নিম্নমানের হয়েছে। প্রথমে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ায় জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন সদর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ মেকানিক হাজেরা বেগম। পরে এ বিষয়ে ঠিকাদার সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন লিটা জানান, কাজের বরাদ্দ কত টাকা তা নির্দিষ্ট করে লেখা নেই। কাজের মান নিম্ন হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ ওঠেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইস্টিমেটে ৪:১ হিসেবে ধরা আছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক জোর করেই ৩:১ হিসেবে করিয়ে নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে তিনি যখন কাজের ওখানে যাবেন, তখন ওই প্রধান শিক্ষককে জরিমানা করা হবে। বিস্তারিত জানতে সদর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মাজেদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রত্যেক কাজেরই বরাদ্দ ধরা আছে। সুতরাং ওই কাজেরও বরাদ্দ ধরা আছে। যেহেতু টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ চলছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি জানান, ঠিকাদার ফারজানা ইয়াসমিন লিটা মোট ৪টি স্কুলের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ করছেন। প্রত্যেকটি কাজের জন্য ১৭ লাখ টাকা করে আলাদাভাবে বরাদ্দ ধরা আছে। স্কুলগুলো হলো- দিগপাইত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বপাড় দিঘুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হবদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবিন্দবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সচেতন মহলের অভিমত- কুইনাইন খেলে জ্বর সারে জানি, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে? এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুঞ্জনসহ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।