অনলাইন ডেস্কঃ
ওসির বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের তদন্তকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চার যুবলীগকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন তিলকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মেহেদি হাসান দিপু, যুবলীগকর্মী আরিফুল ইসলাম মানিক, দেলোয়ার হোসেন ও রেজাউল হোসেন মানিক। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির সদস্য ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাউছার আলী বাদী হয়ে আক্কেলপুর থানায় মামলা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে জেলার তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তদন্তকাজ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ দাবির একাধিক অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে শুক্রবার রাতে আক্কেলপুর থানার ওসি আবু ওবায়েদকে প্রত্যাহার করে জয়পুরহাট পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম পুলিশ সুপারের কাছে ওসি আবু ওবায়েদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ দাবির লিখিত আভিযোগ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সুত্রে ওসি ওবায়েদের নানা অপকর্মের অভিযোগও যায় এসপির কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। শুক্রবার দুপুরে অভিযোগের তদন্ত করতে তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদে যায় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুস সালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর হেডকোয়ার্টার্স) মো. সাজ্জাদ হোসেন ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাউছার আলী। তদন্ত চলাকালে ওসি ওবায়েদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের সাক্ষীদের প্রকাশ্যে বাধা ও হত্যার হুমকি দিয়ে তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে তিলকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ওই চার কর্মী। এ সময় তদন্তদলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুদস সালামের নির্দেশে তাদের আটক করে আক্কেলপুর থানায় মামলা করা হয়। ওই চার যুবলীগকর্মী ওসি ওবায়েদের সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শুক্রবার রাতেই ওসি ওবায়েদকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পরে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মালিককে ওসির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অভিযোগে জানা গেছে, আক্কেলপুর থানায় যোগদান করার পর থেকে আবু ওবায়েদ স্থানীয় ক্ষমতাসীন চক্রের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে অবাধে ঘুষ, দুনীতি ও নানা অপকর্ম চালিয়ে অঢেল টাকা কামিয়েছেন। নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকার ওসমান অ্যাগ্রো লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক রঞ্জন কুমার অভিযোগ করেন, গত দুই দিন আগে আক্কেলপুর বাজারের ওপর দিয়ে ধানবোঝাই ট্রাক আসার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় একজন মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়। এ ঘটনায় ওসি আবু ওবায়েদ তাদের ধানবোঝাই তিনটি ট্রাক জব্দ করে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিলকপুরের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তিন যুবককে ১৪ দিন জেল খাটিয়েছেন ওসি ওবায়েদ। পরে মিথ্যা ওই মামলার তিনজন সাক্ষী আসামিদের পক্ষে আদালতে এফিডেভিড করে ওসির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। ওসির দায়িত্বরত আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মালিক বলেন, শুক্রবার তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে প্রত্যাহার করা ওসি ওবায়েদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে সেখানে স্থানীয় চার যুবলীগকর্মী সাক্ষীদের প্রকাশ্যে বাধা দেয়। এতে তদন্ত কাজের বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে ওসি আবু ওবায়েদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সালাম বলেন, পুলিশ সদস্যদের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। আমি ক্লিন ইমেজের মানুষ। কাজেই জেলার পুলিশ বিভাগকে আমি সব সময় ক্লিন রাখতে চাই। আক্কেলপুর থানার ওসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে শুক্রবার রাতে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।