কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :
সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে পরিবার প্রতি ৫ হাজার টাকার সহায়তার চেক বিতরণের তালিকায় অনিয়মের প্রতিবাদে কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানে মানববন্ধন করে একদল চা শ্রমিক।
মানববন্ধন শুরুর পর কুরমা চা বাগান পঞ্চাযেত কমিটির সভাপতি নারদ পাষীর নেতৃত্বে একদল শ্রমিক মানববন্ধনে বাঁধা দিলে দুই দল চা শ্রমিকের মাঝে উত্তেজনা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে । এতে ২ নারীসহ ৬ জন আহত হন।
এ ঘটনায় চা বাগানে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে কমলগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ।
রোববার (০৫ জুলাই) সকাল ১১টায় এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে । পরে পুলিশী উপস্থিতিতে বেলা ১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ।
ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) মালিকানাধীন কুরমা চা বাগানের শ্রমিক সন্তান নারী নেত্রী গীতা রানী কানু বলেন, গত জুন মাসে সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য কমলগঞ্জের ২২টি চা বাগানের তালিকাভুক্ত চা শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকার সহায়তা চেক প্রদান করা হয়। তবে জনপ্রতিনিধি ও চা বাগান পঞ্চায়েতের মাদ্যমে করা এসব তালিকায় প্রকৃত অসংখ্য হত দরিদ্র চা শ্রমিককে বাদ দিয়ে চা শ্রমকি নয় এমন মানুষের নাম রয়েছে ।
এমনকি পঞ্চায়েত নেতৃবৃনেন্দর স্বজন, চা বাগার কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয় স্বজনের নাম তারিকায় রয়েছে। এর প্রতিবাদে সুষ্ঠু তদন্তক্রম নতুন করে তালিকা প্রণয়নে ইতোমধ্যেই শমশেরনগর, দেওড়াছড়া, মৃর্তিঙ্গা ও কুরমা চা বাগান থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে ।
সে আবেদনে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না করে ত্রুটিযুক্ত তালিকা মতে অনুদানের চেক বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে রোববার সকালে কুরমা চা বাগানে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল।
এ মানববন্ধনে বাঁধা সৃষ্টি করেন কুরমা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নারদ পাশী,সাদত আলী,সাধু পাশী, সুরজান বিবি, বাবু লাল, আরজু মিয়া, গীতা দাস, হারিছ মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল ।
এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে দুই দলের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ধাওয়ার সময় আহত হয়েছেন কার্তিক পাল (৫০),নওশাদ মিয়া (৩৮), উষা পাল (৩৫), বাবুল কৈরী (৩০), গীতা রানী কানু (৪০) ও দ্বীফ কুমার (৩৮)। এ ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানা থেকে ২৫ সদস্যের পুলিশের একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
গীতা রানী কানু আরও বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে না দিয়ে বাঁধা সৃষ্টিকারীরা তাকে একটি দোকানে এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করেও রেখেছিলেন। পুলিশ আসার পর তিনি মুক্ত হয়ে পুলিশি উপস্থিতিতে ফুটবল মাঠ লাইনে বেলা ১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন নওশাদ মিয়া,সনজীৎ দাস,গীতা রানী কানু প্রমুখ। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও গীতা রানী কানু জানান।
তবে কুরমা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নারদ পাশী বলেন, চা শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকার তালিকায় কোন ভুল ছিল না। সঠিক মানুষের নাম তালিকায় রয়েছে। গীতা রানী কানু অহেতুক আন্দোলন শুরু করেছে । এতে দরিদ্র চা শ্রমিকরা পরবর্তীতে সমাজ সেবার প্রদত্ত ৫ হাজার টাকা না ও পেতে পারেন।
তাই তিনিসহ সাধারণ চা শ্রমিকদের একটি অংশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন । এখানে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি আর কেই আহত হয়নি। কাউকে অবরুদ্ধও করা হয়নি। পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায় ।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান মানববন্ধণ নিয়ে কুরমায় চা বাগানে দুই পক্ষের মাজে উত্তেজনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া গীতা রানী কানুর নেতৃত্বে চা শ্রমিকদের একটি পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে ।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ হয়নি