1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
করোনায় ঢাকা ছেড়েছে ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন

করোনায় ঢাকা ছেড়েছে ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০, ১১.০৫ পিএম
  • ২৬৫ বার পঠিত

তৌহিদ আহমেদ রেজা:
ভাগ্যের অন্বেষণে গ্রাম থেকে শহরমুখী হয় মানুষ। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতা এটাই। কিন্তু মহামারি করোনা সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। একসময় গ্রাম থেকে একটু ভালো করে বাঁচার আশায় যারা শহরে এসেছিল, তারা আবার হয়েছে গ্রামমুখী। বেসরকারি সংগঠন পিপিআরসি ও বিআইজিডির গবেষণার তথ্য, করোনাকালে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্তত ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ।

বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ, যোগাযোগের ব্যয় এবং অন্য নানামুখী ব্যয় মেটাতে না পেরেই এসব মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার এক ভার্চ্যুয়াল সভায় ‘লাইভলিহুড, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি ডিউরিং কোভিড-১৯’ শীর্ষক জরিপভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) করোনাকালে আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। দুটি প্রতিষ্ঠান এর আগে গত এপ্রিলে এক জরিপের মাধ্যমে মহামারির সময়ে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর একটি জরিপ করে। তখন লকডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ ছিল। ওই কাজের ধারাবাহিকতায় লকডাউন বা সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ার পর অবস্থাটা কী, তা তুলে ধরতেই ছিল আজকের আয়োজন।

২০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত চলে এ জরিপ। এতে অংশ নেয় ৭ হাজার ৬৩৮ পরিবার। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি শহরের পরিবার, ৪৩ শতাংশের বেশি গ্রামের পরিবার এবং ১ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবার। এবারের জরিপে গ্রাম এবং শহরের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও যুক্ত ছিল।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হলেও একে একধরনের “ভঙ্গুর পুনরুদ্ধার” তৎপরতা বলা যায়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে দরিদ্র মানুষকে যে সহায়তা হয়েছে, তা একধরনের “টোকেন সহায়তা”। এপ্রিলে আমরা যে নতুন দরিদ্র শ্রেণি সৃষ্টির কথা বলেছিলাম, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালুর পর তাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মানুষের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

জরিপে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এপ্রিল মাসে ৬ শতাংশ শহুরে দরিদ্র মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। জুনে এসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জুন মাসে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসে শহুরে দরিদ্র মানুষের আয় কমে গেছে ৪৩ শতাংশ, গ্রামের মানুষের আয় ৪১ শতাংশ আর পার্বত্য চট্টগ্রামের দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে ২৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ১৭ শতাংশ জুনে এসে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বাসাবাড়িতে কাজ করত যেসব মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগই নারী, তাদের কাজ হারানোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ৫৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরপর আছে অদক্ষ শ্রমিক, দক্ষ শ্রমিক। দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর হার অপেক্ষাকৃত কম। দুই পেশাতেই ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

করোনার আগে, লকডাউনের সময় ও লকডাউন তুলে নেওয়ার পর দারিদ্র্য পরিস্থিতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় গবেষণায়। দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে যেখানে শহরে খাবারে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এপ্রিলে তা কমে হয় ৪৪ টাকা। জুনে এসে এটি সামান্য বাড়ে, হয় ৪৫ টাকা। শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যয়ে কিছু উন্নতি হলেও গ্রামে পরিস্থিতি লকডাউনের পরেও ভালো হয়নি। দেখা গেছে, গ্রামে ফেব্রুয়ারিতে খাবার ব্যয় ছিল ৫২ টাকা। এপ্রিলে তা কমে হয় ৪১ টাকা, জুনে ৩৭ টাকা।

আয়ের নিরিখে দেখা যায়, শহরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১০৮ টাকার বেশি। এপ্রিল তা অনেকটা কমে হয়ে যায় ২৬ টাকা, জুনে দাঁড়ায় প্রায় ৬৭ টাকায়। গ্রামাঞ্চলে আয় ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রায় ৯৬ টাকা। এপ্রিল ও জুনে হয় যথাক্রমে ৩৭ ও ৫৩ টাকার কিছু বেশি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রণোদনা কিছু কাজ করেছে। কিন্তু দেশের কর্মশক্তির ৮০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে জড়িত। সেই জায়গাটা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, তা অনস্বীকার্য।

লকডাউনে সব শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে রিকশাচালকদের আয়। তাঁদের প্রায় ৫৪ শতাংশ আয় কমেছে। এরপর আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও অদক্ষ শ্রমিক।

করোনাকালে এক নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হয়েছে। এপ্রিল মাসে তাদের সংখ্যা ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। জুনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন চালু হয়ে গেছে, তখন এ সংখ্যা সামান্য কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চরম দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র, ঝুঁকিতে থাকা নতুন দরিদ্র এবং নতুন দরিদ্র—সুনির্দিষ্টভাবে এই চার শ্রেণির মতামত উঠে আসে জরিপে।

আজ সমীক্ষা প্রতিবেদনের একটি অংশ তুলে ধরেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। লকডাউন বা সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার নিয়ে চার শ্রেণির মনোভাব তুলে ধরে মতিন বলেন, সব শ্রেণির মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ মনে করে লকডাউন প্রত্যাহার না করার কোনো বিকল্প ছিল না। প্রায় ৩০ শতাংশ একে ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করে। ১০ শতাংশের মতো মনে করে, এটি কিছুদিন পর করা যেত, বাকিরা কোনো মন্তব্য করেনি।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে ত্রাণ সহায়তার চিত্র। করোনাকালে অসহায় মানুষের সহায়তায় নগদ অর্থ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছিল জোরেশোরে। সমীক্ষায় দেখা যায়, শহর-গ্রাম-পার্বত্য এলাকার মধ্যে শহরেই নগদ সহায়তার পরিমাণ বেশি। তাও মাত্র প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ এ সহায়তা পেয়েছে। গ্রামে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ১০ শতাংশ। পরিবারপ্রতি খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা। যদি সব দরিদ্র মানুষকে এটা দেওয়া হতো, তবে তাদের কাছে যেত শহরে মাত্র ২৭২ টাকা, গ্রামে প্রায় ৬১ টাকা।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একধরনের টোকেন সহায়তা দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। আবার অর্থনীতির মূল শক্তি যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, তাকে শুধু সামাজিক নিরাপত্তার আলোচনার মধ্যে না রেখে অর্থনৈতিক আলোচনার নিরিখে বিবেচনা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews