ইউসুফ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
গত ৫ বছরের মধ্যে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনের শিকার লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার কয়েকটি এলাকা। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের ২ লক্ষাধিক পরিবার। গত ১৫ দিনে বিলিন ৭শ এর বেশি বসতভিটা ও কয়েক একর জমি। হুমকির মুখে কমলনগর উপজেলা। ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীর পাড়ে হাজারো মানুষের আর্তনাদ।
মঙ্গলবার বিকেলে কমলনগর উপজেলার নবীগঞ্জ,নাছিরগঞ্জ,লূধুয়া ও বালুরচর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনার ভাঙ্গনের এত ভয়াবহ রুপএর আগে কখনও দেখেনি এসব এলাকার নদী পাড়ের মানুষ। ভাঙ্গনের শিকার হওয়ায় মানুষগুলো নিজেদের ঘরবাড়িও স্থানন্তরের সুযোগ পাচ্ছেন না।
এসব নদীপাড়ের মানুষের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, গত ১৫দিনের ব্যবধানে কয়েকশ পরিবার নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আবার যারা এখনো আছে তারা বিপদের মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় তাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ আশংকায় দিন যায় রাত যায় আতংকে । কিভাবে বসবাস এবং সংসার চলবে। সে দু:চিন্তায় তাদের চোখে-মুখে।
তাদের অভিযোগ নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হলে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করবে এ ধরনের বহু প্রতিশ্্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর কোন খোঁজ খবর রাখেনা। শুধু এসব এলাকার বাসিন্দারাই নয়। একই অবস্থায় রামগতির আসলপাড়ার,জনতাবাজার,বাংলাবাজার,বড়খেরী ও চর আলেকজান্ডার এলাকার নদীপাড়ের মানুষের।
গত ৫ বছরের মধ্যে ও এ ধরনের ভাঙ্গনের মুখে পড়েনি তারা। মূহুর্তে সব তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘনা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ বিকেলে হঠাৎ অস্বাভাবিক জোয়ারে মাইলের পর মাইল বাড়িঘর,দোকানপাট ও ফসলি জমি ডুবে যায়। এ ধরনের জোয়ার গত ২০ বছরেও দেখেনি বলে অনেকে জানান। এরপর দেখা দেয়া মেঘনার আরো ভয়াবহ ভাঙ্গন।
যদি দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প শুরু করা না হয়,তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নামে এ দুইটি উপজেলা বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। যে স্কুল ভবন অথবা বাড়িঘর থেকে নদী ছিল অনেক দূরে, বিকেলেই ভাঙ্গন চলে এসেছে সে ভবনের কিনারে। এভাবে ভাঙ্গন চলছে দুই উপজেলার ১০ কিমি এলাকা জুড়ে।
এসব অসহায় মানুষদের এখনো সরকারীভাবে কোন পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে সরকার দায়সারা ভাবে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কিছু জিও ব্যাগ পেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ করছে। এটা দিযে কোনভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
রামগতি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল, স্থানীয় ঠিকাদার জাফর আহমেদ গনিসহ অনেকে জানান, ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এদিকে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রতিধিন নদীর পাড়ে কোন না কোন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে আসছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি নদীর পাড়ে হাজারো মানুষের আর্তনাদ ও কোন অংশে কম নয়। এছাড়া হুমকি মুখে রয়েছে সরকারী-বেসরকারী বহু স্থাপনা। দ্রুত দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের কাজ শুরু করার দাবী জানান তারা।
কমলনগর নদী শাসন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব ও কমলনগর প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ মজিদ ও চরলরেন্স ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্যাহ হিরন জানান, গত ১৫ দিনে তিন শতাধিক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। বাপ-দাদার পুরানো বসত ভিটা মূহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ভয়াবহ ভাঙ্গন এর আগে আর দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও বাঁধ নির্মানের দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।
রামগতি ও কমলনগর বাচাঁ মঞ্চের আহবায়ক সুপ্রিম কোটের এডভোকেট আবদুস সাত্তার পলোয়ান, যদি এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকে,তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ দুই উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। ভিটা মাটি রক্ষায় প্রতি নিয়ত মানববন্ধন বিক্ষোভসহ বিভিন কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের কাজ শূরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবী করেন তিনি।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সহেল ও মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী,ভয়াবহ ভাঙ্গনের কথা স্বীকার করে বলেন দ্রুত যেন দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প কাজ শুরু করা যায়, সে বিষয়ে সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ ভয়াবহ ভাঙ্গনের কথা স্বীকার করে বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকায় বাঁধের কাজ চলছে। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply