রেখা মনি,নিজস্ব প্রতিবেদক
লালনিরহাটের হাতীবান্ধায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ছুরি দিয়ে দিলরুবা আক্তার টুম্পা (২৫) নামে এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দেয় পাষন্ড স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ি। এ ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি পুলিশ। শুধু মাত্র অভিযোগ নথিভ‚ক্ত করে দায় সেড়েছেন পুলিশ।
প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্তরা। আর মামলাটি আপোষ মিমাংসা করতে অসহায় পরিবারটিকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা ও স্থানীয় প্রভাবশালী মতব্বরা।
অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরপরেও তাদেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এ নিয়ে অতংকে রয়েছে অসসহায় পরিবারটি। আসামীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ার ভিডিও ফুটেজ আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধির নিকট সংরক্ষন রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে অছিউর রহমান প্রাণ(২৭), প্রাণের ছোট ভাই মুরাদ হোসেন মন (১৮) ও তার মা মালতী লতা (৪৫)
আহত দিলরুবা আক্তার টুম্পা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের মৃত মোফাজ উদ্দিনের মেয়ে।
জানাগেছে, প্রায় ৫ বছর আগে ভালোবেসে আদালতে বিয়ে করেন প্রাণ ও টুম্পা। এরই মধ্যে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু বাধ সাধে শাশুড়ি মালতি। টুম্পাকে বাপের বাড়ি থেকে ৫ লক্ষ্য টাকা আনতে চাপ দেয়। টুম্পার সুখের কথা চিন্তা করে তার ভাইয়েরা ধার-দেনা করে ৩ লক্ষ্য টাকা যোগাড় করে দেয়।
এরই মাঝে তাদের ঘর আলো করে জন্ম শিশু সন্তান মেহমেদ। কিন্ত এরই মাঝে আবারো ২ দুই লক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে প্রাণ। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়।
পুনরায় প্রাণ আরও ২ লক্ষ টাকা আনতে বলে। এতে টুম্পা রাজি না হলে গত শনিবার (২৭ মার্চ) শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। মা, ছোট ভাই ও প্রাণ মিলে বাশের লাঠি দিয়ে শুরু করে মারধর। এর এক পর্যায়ে মা ও ভাইয়ের সহযোগীতায় প্রাণ ধারালো ছুড়ি দিয়ে টুম্পার পায়ের রগ কেটে দেয়।
টুম্পার আত্ম চিৎকারে স্থানীয়রা টুম্পার ভাই-চাচাদের খবর দিলে তারা ছুটে এসে থানা পুলিশের সহযোগীতায় টুম্পাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন টুম্পা। অভিযোগটি নথিভ‚ক্ত করেছেন পুলিশ।
কিন্তু আসামীদের ধরছেন না। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আসামীরা। আসামীর আত্বীয় স্বজনরা ভূক্তভোগী অসহায় পরিবারটিকে মামলাটি আপোষ মিমাংসা করার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা মতব্বরা অভিযুক্তদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে টুম্পা বলেন, এক মাস হয়ে গেলো, পুলিশ তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলাটি আপোষ মিমাংসা করার জন্য আমাকে আর আমার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা মতব্বরা আসামীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
বিশেষ করে আমার স্বামী প্রাণের খালু নিজাম ও তার জামাই এনামুল আমাদের বাসায় এসে মামলাটি আপোষ মিমাংসা করার জন্য বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। প্রাণ ও তার পরিবার জাময়ত শিবির করেন। শিবিরের কাছ থেকে ওরা রগ কাটার প্রশিক্ষন নিয়েছে। আমি খুব ভয়ে আছি ওরা যেকোন সময় আমাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টুম্পাকে উদ্ধারকারী ও মামলাটির তদন্তকারী হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম বলে, আমি খুব চেষ্ঠা করছি প্রাণকে গ্রেফতার করার জন্য।
বাকিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করছেন না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে প্রাণকে গ্রেফতার করতে চাচ্ছি তাই তার মা-ভাইকে গ্রেফতার করছি না।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, মামলাটি নথিভ‚ক্ত হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে।