কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ২য় দফায় বন্যার পানিতে ভাসছে চিলমারী। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানি বন্দি। বানভাসীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, গো-খাদ্য ও স্যানিটেশনের (শৌচাগার) চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পেলেও অবিরাম বৃষ্টির ফলে গোটা উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে বাড়ী-ঘরে পানি উঠে পড়ায় যারা পরিবার পরিজন ও গবাদী পশু নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল ঘন ও ভারী বর্ষণে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জানাগেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৮ সে.মি. হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৪১ সে.মি.উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভিতরে ঢুকে পড়া পানি ও ভারি বর্ষনে উপজেলা পরিষদসহ গোটা উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নদীর বাইরে প্লাবিত হওয়া পানি এক মুখি পথে বের হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় পরিণত হয়েছে। ফলে বানভাসী মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরমে উঠেছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো পানিবন্দি অবস্থায় ত্রাণের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাড়ী-ঘরে পানি উঠে পড়ায় যারা পরিবার পরিজন ও গবাদী পশু নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে, ঘন ও ভারী বর্ষনে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, গো-খাদ্য ও স্যানিটেশনের (শৌচাগার) চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বসত করা সহকারী অধ্যাপক নুর আলম মুকুল বলেন, গত ৬দিন আগে বাড়ীতে পানি উঠলে খাটের উপরে জিনিসপত্র তোলা হয়েছে, আস্তে আস্তে সে খাটও তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো, এবারে যাব কোথায়? সবুজপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, চৌকির উপরে চুলা নিয়ে রান্নার কাজ করছিলেন তিনি, শেষ পর্যন্ত চৌকিটিও তলিয়ে গেল এখন যাবেন কোথায়? জোড়গাছ মন্ডলপাড়া এলাকায় পাউবো বাঁধে আশ্রয় নেয়া জেলেকা বেওয়া, আহিকুল ইসলাম, সুনিল চন্দ্রসহ অনেকে জানান, তারা বাড়ী-ঘর ছেড়ে বাঁধ রাস্তায় আশ্রয় নিলেও তারা বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও স্যানিটেশনের চরম সংকটে পড়েছেন।
রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মন্জুরুুল ইসলাম মঞ্জু জানান, তার ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭হাজার পরিবার। অথচ বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত তিনি কোন সহায়তা পাননি। আসন্ন ঈদুল আয্হা উপলক্ষে জনপ্রতি ১০কেজি করে ভিজিএফ এর চালের জন্য ৪হাজার ৮২জনের বরাদ্দ পেয়েছি কিন্তু বন্যার পানিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সে চাল নিয়ে বিতরণ করতে পারছি না। থানাহাট, চিলমারী, রমনা, নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউপি চেয়ারম্যানগণও বন্যার্তদের জন্য এপর্যন্ত কোন ত্রাণ পাননি বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম বলেন, চলমান বন্যায় উপজেলার শতভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার অনেক মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন এলাকায় কর্মরত ছিল, করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা নিজ বাড়ীতে ফিরে এসে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে,“এ যেন মরার উপর খরার ঘা” বন্যার্তদের জন্য প্রাপ্ত ত্রাণ সহায়তাকে অপ্রতুল উল্লেখ করে কর্মহীন পানিবন্দি চিলমারীরবাসী প্রতিটি মানুষের জন্য তিনি সাপ্তাহিক ভিজিডি চালু করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করেছেন।
এক সপ্তাহ আগে বন্যার্তদের জন্য ১২ মে.টন চাল আসলেও এখন পর্যন্ত তা বানভাসীদের মাঝে কেন বিতরণ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, ডব্লিউ, এম রায়হান শাহ্ বলেন, ঈদ উপলক্ষে আসা ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভিজিএফ বিতরণ হয়ে গেলে ওই চালও ইউনিয়ন ভিত্তিক বিভাজন করে দেয়া হবে।