রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনে দিনে জলাশয়ের ওপর অধিকার হারিয়ে জীবিকার সংকটে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়। প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে কেউ কেউ ইতোমধ্যে কুলি-যোগালি করে কোনরকমে জীবনের ঘানি টানছেন। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়স্ক জেলেরা অনেকটাই অসহায়। এই সম্প্রদায়কে রক্ষায় প্রণীত আইন সুরক্ষা দিতে পারছে না, বরং হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে দখলদাররা।
এক দশক আগেও রংপুরের হারাগাছের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধুম নদী ছিল আশেপাশের আড়াই থেকে তিনশ জেলে পরিবারের জীবিকার একমাত্র উৎস। কিন্তু এই নদীকে বিল দেখিয়ে লিজ প্রথা চালুর পর ক্রমেই এই জলার ওপর অধিকার হারিয়েছেন সাধারণ জেলেরা।
আইনের ফাঁক-ফোকরে এখন প্রভাবশালীদের দখলে ১৪৪ হেক্টরের বিলটি। ৬ বছরের জন্য বিলটি লিজ পেয়েছে টেপরিকুড়ারপাড় মৎস্যজীবী সমিতি। অভিযোগ, এই সমিতির সভাপতি মাইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম দুজনের কেউই জেলে সম্প্রদায়ের নন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই শিক্ষক। আবার দুজনেই একই সমিতির সদস্য। জীবন জীবিকা বাঁচাতে বিলটি ফিরে পেতে চান সেখানকার জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা।
প্রকৃত পেশা গোপন করে বিলটি লিজ নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন সভাপতি। কিন্তু একজনকে স্থানীয় গুয়াবাড়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আরেকজনকে মাছহাড়ি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক বলে নিশ্চিত করলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
রংপুরের হারাগাছ টেপরি কুড়ারপার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মৎস্যজীবীর কার্ড আছে। এর আগেও টেপরিকুরা নামে একটা বিল খাছিলাম (লিজ নিয়ে ভোগ করেছিলাম)।
রংপুরের হারাগাছ গুয়াবাড়ী ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, এখানে পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে। মাইদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক।
রংপুরের হারাগাছ মাছহাড়ি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা একতারা বেগম বলেন, ওনাকে (খায়রুল ইসলাম) কেউ দুলালও বলে, কেউ খাইরুলও বলে। তবে কোন নাম সার্টিফিকেটে আছে এটা আমি জানি না।
তিনি এখানে শিক্ষকতা করেন।মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, প্রকৃত কার্ডধারীদের দ্বারা গঠিত সমিতির ছাড়া জলাশয় ইজারা হয় না। কিন্তু নদী আন্দোলনের সংগঠকের দাবি, নানা কৌশলে আইনের অপপ্রয়োগ করে প্রভাবশালীরা বেশিরভাগ জলাশয় দখল করেছে।
রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সংখ্যা কম বা বেশি দেখার বিষয় নেই, আমাকে দেখতে হবে সমিতির সকল সদস্যই মৎস্যজীবী হতে হবে।
রিভারাইন পিপলের নির্বাহী সদস্য ওমর ফারুক বলেন, কিছু জায়গায় ছদ্মবেশী কিছু মানুষ এই জলমহালগুলো গ্রহণ করেছে।রিভারাইন পিপলের নির্বাহী সদস্য ওমর ফারুক বলেন, কিছু জায়গায় ছদ্মবেশী কিছু মানুষ এই জলমহালগুলো গ্রহণ করেছে।
তবে জলাশয় ইজারার ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান। তিনি বলেন, যারা ইজারা পেয়েছে তারা যদি মৎস্যজীবী না হন, তখন সেটা নিয়ে ব্যবস্থা আমরা নিতে পারব।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় ১৩৭টি বিল আর সরকারি তালিকাভুক্ত ১২ হাজার ২১২জন জেলে রয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..