জয়পুরহাটের কালাইয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার
তফিকুল ইসলাম,কালাই,উপজেলা প্রতিনিধিঃ-
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জয়পুর-বহুতি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। সেই রাস্তাটি প্রায় ৯ গ্রামের লোকজন চলাচলের এক মাত্র রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে কৃষকেরা মাঠ থেকে বাড়িতে ফসল আনেন। তাছাড়া ঐ কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতাধীক কৃষিপণ্য পরিবহন, সিএনজি, এ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, বাই-সাইকেল, ভ্যান, ভটভটি, অটো-ভ্যান চলাচল করে। বর্ষায় একটু বৃষ্টি হলেই কাঁচা রাস্তাটি চলাচল বিপদজনক হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঐ রাস্তাটি চলাচলের এখন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন এলাকার বসবাসকারী ও পথচারীরা। রাস্তাটি পাকা করণের জন্য জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি, কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধিদেরকে অনেকবার মুখে বলে এবং আবেদনপত্র লিখেও কোন ফল পাননি গ্রামবাসীরা।
অবশেষ (১২ আগস্ট) বৃহস্পতিবার সকালে জয়পুর-বহুতি যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতি নামে এক সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তাটি সংস্কার করেছেন। এ ঘটনা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের জয়পুর-বহুতি গ্রামে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার জয়পুর-বহুতি যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতির ২৯ জন নারী-পুরুষ সদস্য মধ্যে ২৫ জন নারী-পুরুষ সদস্যরা বহুতি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা সংস্কারের কাজ করছেন। সেখানে কারও হাতে কোদাল। কারও হাতে বাঁশের ঝুড়ি। একজন মাটি কেটে দিচ্ছেন, অন্যজন সেই মাটি ঝুড়িতে তুলছেন। কেউ..কেউ মাটিবোঝাই ঝুড়ি মাথার উপরে নিয়ে রাস্তার দুই পাশে ফেলছেন। অন্যরা মাটি রাস্তার দুই পাশে সমান করার কাজ করছেন।
এই দৃশ্য দেখে উপজেলার ‘দৈনিক তুলশীগঙ্গা’-এর স্টাফ-রিপোর্টার ছবি তুলতে গেলে সংস্কারকাজে অংশ নেওয়া মোছা.মঞ্জুয়ারা বেগুম আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘ছবি তুলে কি হবি (হবে)? আর ‘দৈনিক তুলশীগঙ্গা’রে দিয়েও কি হবি? হামরা (আমরা) এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারক কয়াও (বলে) এই রাস্তা ঠিক করবা পাড়িনি (সংস্কারের কাজ)। তবে সাংবাদিক ভাই..মনে করেনা- এই কামত (কাজ) সরকার টেকা দিছে। কেউ এক টেকাও দেয়নি, এমকি কারো কাছে সহয়োগীতাও পাইনি। হামরাই রাস্তার কাম করছি, বুঝেচিন ভাই।
তবে তাদের এই উদ্যোগে মুগ্ধ হয়ে ওই দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে মাধ্যমে সংস্কারের কাজের জন্য তাদের সঙ্গে কিছু সময় অংশগ্রহণ করলেন ‘দৈনিক তুলশীগঙ্গা’-এর স্টাফ-রিপোর্টার তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর।
এ কাজের ফাঁকে..ফাঁকে গোলাম রসুল, মুন্টু মিয়া, মোছা. ববি আক্তার, নূর আলম ও আঃ রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বহুতি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারিভাবে কোন সংস্কারকাজ করা হয়নি। এতে করে বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে রাস্তা ভেঙে গেছে। অনেক স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলে সেখানে পানি জমে থাকে। ফলে চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় এলাকাবাসীর।
এছাড়া স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, সবজি-ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি শিকার হয় এলাকার কৃষকেরা। তারা মাঠের ফসল তুলে ওই রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আনতে পাড়েন না। অনেক সময় ক্ষেতে রাখতে হয় তাদের কষ্টের উৎপাদিত ফসল। যার ফলে নানা ভাবে নষ্ট হয় তাদের ফসলগুলো। তাই এইসব কষ্ট কিছুটা এড়াতে নিজেদের উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
এ রাস্তা সংস্কারের উদ্যোক্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের জয়পুর-বহুতি, কাশিপুর-শিমরাই, জয়পুর-নওয়ানা, দরগাপাড়া, উনিহার, সাদনাপাড়া, ছত্রগ্রাম, দুর্গাপুর, ও উত্তর তেলিহার(ভূষা) গ্রামের অন্তত ১১ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এই রাস্তাটি এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তা। এই কাঁচা রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ পাকাকরণের অভাবে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সময়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত কৃষিপণ্য পরিবহন, এ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি, মোটরসাইকেল, বাই-সাইকেল, ভটভটি, ভ্যান, অটো-ভ্যান চলাচল করে। বর্তমান এই রাস্তাটি অনেক স্থানে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা মাঝে পানি জমে থাকে এবং মাটিগুলো নরম, পিচ্ছিল হয়। এতে পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। দীর্ঘদিন যাবৎ এই দুর্ভোগ দূর করার জন্য এলাকাবাসীরা জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি, কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধিদেরকে অনেকবার মুখে ও আবেদনপত্র লিখে জানানো হয়েছিলো। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় বুধবার রাতে আমাদের জয়পুর-বুওতি যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতির ২৫ জন নারী-পুরুষ সদস্য নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হই। ঐ বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমরা আর জনপ্রতিনিধিদের দিকে চেয়ে না থাকে বৃহস্পতিবার সকালে থেকে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করবো। তাই আমাদের নিজেদের এই রাস্তা সমস্যা সমাধানে জন্য নিজেরাই এগিয়ে এসেছি। নেমে পড়েছি এই রাস্তা সংস্কারের কাজে।
উপজেলার জয়পুর-বহুতি যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ-সম্পাদক মো.রনি মিয়া বলেন, এই কাঁচা রাস্তাটি পাকারণ না হওয়ায় বুওতিসহ আশেপাশে গ্রামের মানুষ অর্থনৈতিক এবং উন্নয়নের দিক থেকে একটু পিছিয়ে রয়েছেন। এ রাস্তাটি সংস্কারের ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি পদে রয়েছেন। আমিসহ সকল সদস্যরা তাকে আশ্বস্ত করেছি, সে অনুযায়ী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তার সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আমরা রাস্তাটি সংস্কার করলেও এখানে সরকারের তরফ থেকে রাস্তাটি পাকাকরণ করা খুব জরুরী। তা না হলে বর্ষাকালে আবার কাঁচা রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হবে।
উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী মন্ডল দাদা বলেন, আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার এলাকায় কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণ করা। কিন্তু পরিষদে সীমিত বরাদ্দ থাকায় অনেক রাস্তার সং
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..