ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি-
দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় সব গ্রামেই দেখা মিলে মাটির তৈরি কোঠা ঘরের।
এ ঘরগুলো এ জেলার মানুষদের কাছে শান্তির নীড় হিবেবে হৃদয়ে দাগ কেটে আছে এখনো। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখনো আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ার কারনে মাটির ঘর থেকে অন্য ঘরে নিজেদের ঠাঁই করাতে পারেনি এসব নিম্ন আয়ের মানুষরা।
এবারের টানা বর্ষনের ফলে শান্তির নীড় মাটির ঘরগুলো পরিণত হয়েছে একেকটি মরণ ফাঁদে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় এ বছর এক নাগারে ভারী বর্ষনের কারনে এবং ঘরগুলো অনেক পুরনো হওয়ার কারনে দেওয়ালগুলো ডেমেজ হয়ে পড়েছে বৃষ্টির পানির ছিটায়।
ফলে অধিকাংশ ঘরের দেওয়াল ধ্বসে পড়েছে। সম্প্রতি দেওয়াল ধ্বসে পড়ে জেলার সদর উপজেলার চিলাংরং ইউনিয়নের নদীপাড়া এলাকার একজন মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে । প্রায় প্রতিদিন ভারী বর্ষণের কারনে এসব ঘরগুলো ধ্বসে পড়ছে।
ফলে বাসস্থান হারাচ্ছে এসব মানুষগুলো। শুধু তাই নয়। বৃষ্টি এলেই শান্তির ঘুম পরিণত হচ্ছে অশান্তিতে আর দু:চিন্তায়। একেক জনের রাত কাটছে নির্ঘম। আর দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে জীবন পাহাড়া দেওয়ার মধ্যদিয়ে দিনাতি পার করছে ভুক্তভোগী মানুষরা।
ভুক্তভোগীরা বলছে করোনার এ মহামারির কারনে কাজ কর্ম হারিয়ে অনেকে বিপর্যয়ের সাথে লড়াই করছে তারা। যেখানে দুবেলা খাবার এখন অতিদুস্কর সেখানে ঘর সংস্কার বা নতুন ঘর নির্মাণ করার কথা চিন্তাও করতে পারছেনা এসব ভূক্তভোগী মানুষরা।
এছাড়াও জেলার পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে এ বর্ষায় এমন মাটির ঘর ধ্বসের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লক্ষ্য করা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় হরিপুর উপজেলার আমগাওঁ ইউনিয়নের একজন বয়স্ক কুজো বুড়ি নামে পরিচিত তার মাটির ঘর ভেঙে গেছে। তিনি একজন ভিক্ষুক । ওই বাড়িতে বয়স্ক বৃদ্ধার মেয়ে এবং ২জন নাতি সহ ৪ জনের বসবাস ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৫নং বালিয়া ইউনিয়ন, ০১ নং ওয়ার্ড সাওতাল জনগোষ্ঠীর অনেক মাটির ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে বন্যায় আরও অনেক মাটির ঘর বাড়ি ঝুকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মী মো: সোহেল রানা তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন- অনেকের মতো আমার বাবার বানানো মাটির ঘরগুলো ধ্বসে পড়েছে এ বছর টানা বর্ষণের ফলে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খবর আসছে এমন মাটির ঘর ধ্বসের। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি আমিও। রাত জেগে জীবন পাহাড়া করছি আমরা। সরকারের প্রতি আকুল আবেদন নিশ্চয় এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবেন। এ পোস্টে তিনি জেলার সংশ্লিষ্ট মানবিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি ও আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল- মামুন জানান,ভারী বর্ষনের জন্য যে সব মানুষের ঘর ধ্বসে পড়ছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।