তৌহিদ আহমেদ রেজা: দফায় দফায় বন্যার শিকার হয়ে ওষ্ঠাগত দরিদ্র কৃষক প্রাণ। বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে চার দফা বন্যার প্রভাবে বাজারে চালসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে আছে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। আর দিনের পর দিন পানিতে নিমজ্জিত থেকে পচন ধরেছে নতুন লাগানো আমন, রোপা আউশ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া, চরাঞ্চলের পাকা বর্ষালি ধানসহ মাষকলাই, মরিচ ও শীতকালীন আগাম সবজি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এখনো দেশের ৯টি নদ-নদীর পানি ১০টি পানিসমতল স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানিসমতল স্টেশনের ৫৩টিতে পানি বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গার পানি স্থিতিশীল রয়েছে তবে বাড়ছে পদ্মার পানি। ইতিমধ্যে বন্যার পানি দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে এসেছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে ধলেশ্বরীর পানি। নাটোরের সিংড়ায় গুর নদের পানি বিপৎসীমার ১১০ ও বগুড়ার চকরহিমপুরে করতোয়ার পানি ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চর ও নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি অনেক উঁচু এলাকাও তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ায় অনেক শাখা নদীও ফুলে ফেঁপে উঠছে।
সূত্র জানায়, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমার ২৪ ও বাঙালি নদীর পানি ২৭ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে ধরলার পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। ফলে ওই জেলার ১৮ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ফসল ফের পানিতে তলিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকেই ধারদেনা করে দ্বিতীয় দফা আমন আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ফের ওই ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। একই সঙ্গে নদী ভাঙনে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।
সূত্র আরো জানায়, দেশ সাম্প্রতিক টানা দেড় মাসের বন্যার ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টভেঙেচুরে এশাকার। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বন্যাক্রান্ত ৩৩ জেলার মানুষকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলতি বছর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৮৮টি গ্রাম বন্যার কবলে পড়ে। তাতে উপজেলা এলজিইডি বিভাগের প্রায় ৩০টি সড়ক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের প্রায় ৬৫০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩২ কোটি টাকা। বন্যার পানি নামলেও এখনো ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা হয়নি। ওসব বেহাল, ভাঙাচোরা ও বিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তা এখনো পানির নিচেই রয়েছে। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পানি কমে গেলেই মেরামত করা হবে।