আব্দুল্লাহ আল মামুন:
লোহাগড়া পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ তিন তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পৌর কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভবনটির স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভবনটির নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম শুরু হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতিত্ব করে একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের তীর মূলত ঠিকাদার মিন্টুর দিকে, যিনি পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজটি হাতে নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের অনিয়ম ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পৌরসভা কর্মকর্তা জানান, “নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান যাচাইয়ে যে কঠোরতা প্রয়োজন ছিল, তা মানা হয়নি। উপরন্তু, নির্ধারিত মাপ অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভবনটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।” এ ধরনের বিবৃতি ভবনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর শঙ্কার সৃষ্টি করছে।
যখন সাংবাদিকরা লোহাগড়া পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার রতন কুমার রায়ের কাছে প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চান, তিনি কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ইঞ্জিনিয়ার রায় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে হচ্ছে এবং কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।” তবে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভবনটির নির্মাণে গুণগত মান বজায় রাখা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ এখনো কাটেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতিতে দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, যদি সঠিকভাবে নির্মাণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ভবনটি জননিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের মতে, যদি দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়, তাহলে তা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, মানবজীবনের জন্যও হুমকি হয়ে উঠবে।
ভবনটির প্লানের তথ্য চাওয়া হলে ইঞ্জিনিয়ার রায় বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। ফলে, নির্মাণকাজের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এমতাবস্থায়, প্রকল্পের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়রা মনে করেন, জননিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়, এবং ভবনটির নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিতে প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।