সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেলার প্রচার সংখ্যার দ্বিতীয় তালিকায় থাকা স্থানীয় সংবাদপত্র সময়ের নারায়ণগঞ্জ। নিজস্ব ছাপাখানা নেই/ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাপানো হয়না জানিয়ে এটি বন্ধ করা হলেও নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকাই জেলায় ছাপানো হয়না বলে জানা যায়।
সবগুলো পত্রিকাই ঢাকা থেকে ছাপানো হয়, তবে খড়গ নেমেছে এই পত্রিকাটির উপর। আর এতে অন্য পত্রিকার সম্পাদক কিংবা প্রকাশকরা কোন প্রতিবাদ জানায়নি কারণ তারা ভেবেছে যদি তাদেরটি বন্ধ করে দেয়া হয় কারণ সবাই তো একই দোষে দোষী। অথচ তারা এটি ভুলে যায় যে, একদিন যদি তাদের কারো পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো অন্যরা এগিয়ে আসবেনা।
এটি গেল পত্রিকার কথা। এবার আসা যাক বর্তমান সময়ে অনলাইন পত্রিকার জনপ্রিয়তার মধ্যেই জেলার ৫টি অনলাইন পত্রিকার ডোমেইন ব্লক করে দেয়া হয়। যদিও অনলাইন পত্রিকা বন্ধে কোন চিঠি দেয়া হয়নি কাউকে। করোনাকালীন সময়ে জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল নিউজ নারায়ণগঞ্জ, প্রেস নারায়ণগঞ্জ, যুগের চিন্তা, নারায়ণগঞ্জ টুডে ও সময় নারায়ণগঞ্জ এর ডোমেইন ব্লক করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে যদিও একাধিক ভিন্ন ডোমেইনে প্রায় প্রতিটি অনলাইন বর্তমানে চালু রয়েছে তবুও এ ধরনের হস্তক্ষেপ স্বাধীন গণমাধ্যমের অন্তরায়। অনলাইন পোর্টালগুলো যেহেতু বন্ধের কোন দাপ্তরিক চিঠি পায়নি তাই তারা ভিন্ন পন্থায় প্রচারমাধ্যম চালু রেখেছে।
সংবাদমাধ্যমের কাজ মানুষের, প্রশাসনের, প্রতিষ্ঠানের এবং যেকোন কিছুর অসঙ্গতি, অপরাধ, অপরাধীর তথ্য এবং সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরা। এটি তুলে ধরবে সেটি সাংবাদিকদের কাজ। আর এ কাজে পূর্বে এ জেলায় কখনোই এতটা বাধা ও সীমাবদ্ধতায় পার করেনি সাংবাদিকরা ও সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন।
হুট করেই প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধের মিশনে নেমে স্বাধীন মুক্তমত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভিন্ন বার্তা দিতে চায় প্রভাবশালী মহল। এতে সুবিধাপ্রাপ্ত হয় এমন সকলেই তাতে সমর্থনও করছেন যদিও সাধারণ মানুষের মতামত সসময় মুক্ত সংবাদমাধ্যমের পক্ষেই।
এ ধরনের কর্মকান্ড জেলায় প্রভাবশালীদের রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাবই ফেলছে যদিও সেটি দৃশ্যমান নয় বলে তারা অনুমান করতে পারছেনা। পেশাদারিত্বের যায়গা থেকে কখনোই একটি সংবাদমাধ্যম বন্ধের পক্ষে যেতে পারেনা কোন সাংবাদিক কিংবা সংবাদমাধ্যমের মালিক বা প্রকাশক।
একই অবস্থানে থাকে সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিক নেতারা। আর যদি কেউ এর ভিন্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই ধরে নিতে হবে তিনি প্রভাবশালী মহলের সাথে লাভজনক অবস্থানে রয়েছেন।
গণমাধ্যম আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান কাঠামো তৈরি করা আছে যেখানে গণমাধ্যমের ওপর ক্রমাগতভাবে চাপ বাড়ছে। এটা নিঃসন্দেহে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা বিকাশের অন্তরায়। এই চাপের কারণে অনেকের মাঝে স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু সাংবাদিকতা করার চেষ্টা রয়েছে এমন অনেকের মধ্যেও এর প্রভাব দেখা যায়।
৫টি পোর্টাল বন্ধ হবার পর সেগুলোর সম্পাদকরা জানিয়েছিলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, কেন বন্ধ করা হলো, কারা বন্ধ করলেন তাও আমরা জানতে পারছিনা। আমাদের কোনো খবরের ব্যাপারে যে কারো কোনো কথা থাকতে পারে৷ কোনো প্রতিবাদ বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে৷ কিন্তু সেসব না জনিয়ে নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া সরাসরি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ৷ আর এই স্বাধীনতা আমাদের সংবিধান দিয়েছে৷
তারা জানান, কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধ করা হয়নি৷ পুরো বিষয়টিই অস্বচ্ছ এবং রহস্যাবৃত৷ এটি আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করছে৷ যদি কোনো অদৃশ্য কারণে গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় সেটা কারো জন্য বা গণমাধ্যমের জন্য কোনো শুভ খবর নয়৷
এদিকে বার বার প্রথম সারির গণমাধ্যম নারায়ণগঞ্জে বন্ধের চেষ্টা করার পেছনে প্রতিটি সম্পাদকরাই ইঙ্গিত করেন প্রভাবশালীদের দিকে। যদিও প্রভাবশালী কে সেই প্রশ্নের সরাসরি কেউ কোন উত্তর দেননি। তবে প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপেই গণমাধ্যমগুলোতে চাপ বাড়ছে সেটিই অকপটে স্বীকার করেন তারা।