বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নারীদের সম্ভ্রমহানিকে শিল্পে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে নারীর সম্ভ্রমহানি সেখানেই ছাত্রলীগ, যেখানে নারীর উপর নির্যাতন সেখানে ছাত্রলীগ না হয় যুবলীগের নেতাকর্মী।’
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাটক বানানোর প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আমি বারবার বলছি, এই সরকার আর বেশিদিন নেই, চারিদিক থেকে কেন জানি এই সরকারের পতনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এই সরকার তো নিজেই একটা নাটকবাজ সরকার। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, যা করেন, যা প্রতিশ্রুতি দেন সেটা মানুষ নাটক বলেই মনে করে।
ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন কোথায় তার স্ত্রী কোথায়, তার সন্তান তাদের কথা চিন্তা না করে, কত বড় দেশপ্রেমিক হলে, কত বড় দেশপ্রেমের আগুন তার হৃদয়ের মধ্যে জ¦লে উঠলে সমস্ত কিছু স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু দেশের কথা চিন্তা করে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই বীরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, খালেদ, শামীম, স¤্রাট, জেকেজি, সাবরিনা, সাহেদ এদের তো কোটি কোটি টাকা, তখন নাট্যকাররা মনে করেছে আমরাও এমন একটা কাজ করি প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বাহবা দেবে। সেটা কি হতে পারে যাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বেশি প্রতিহিংসা, তিনি যাদেরকে সহ্য করতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে আমরা একটা কিছু করি। তাহলে আমরাও শাহেদ-সাবরিনাদের মতো টাকা বানাতে পারব। এই উদ্দেশ্য নিয়ে নাটক করেছেন। সরকার তাদেরকে বাহবা দিচ্ছে। এই নাটক আবার কয়েকটি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে, যেগুলোর মালিক আবার ক্ষমতাসীন দলের নেতা অর্থাৎ তার মন্ত্রী হওয়া দরকার। আর এই বস্তাপঁচা চটি নাট্যকারদের টাকা দরকার।
নাট্যকারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কিন্তু ওরা জানে না বাংলার মাটি চৈত্র মাসে কঠিন রূপ ধারণ করে। এই মাটি যখন আপনাদের দিকে নিক্ষিপ্ত করবে জনগণ তখন আপনারা বাংলাদেশের কোনো জায়গায় আশ্রয় পাবেন না, এগুলো মাথায় রেখে অপকর্ম বন্ধ করুন। আপনারা মনে করবেন না বাংলার মাটি চিরদিন কাউকে গ্রহণ করে বিশেষ করে অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার যারা করে।
রিজভী বলেন, ‘চারিদিক থেকে ধিক্কার উঠেছে, যেখানে নারীর সম্ভ্রমহানি সেখানেই ছাত্রলীগ, যেখানে নারীর উপর নির্যাতন সেখানে ছাত্রলীগ না হয় যুবলীগের নেতাকর্মী। আপনি এমসি কলেজ বলেন, আপনি পাহাড়ে দেখবেন গত পরশুদিন মিরপুরে এক গৃহকর্মীকে সম্ভ্রমহানি করা হয়েছে। কে করেছে- ছাত্রলীগ। চারিদিকে কলঙ্কের বোঝা, চারিদিকে মানুষ ছি ছি করছে। এই সমস্ত ঘটনাকে ঢাকার জন্যই তারা তাদের অনুগত নাট্যকারকে দিয়ে চটি বস্তাপঁচা নাটক রচনা করেছে, যাতে এমসি কলেজের সেই লোমহর্ষক নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঢাকা পড়ে যায়।’
সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সীমান্ত রক্তাক্ত হচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) একটাও কথা বলতে পারেন না, প্রতি দুই দিনে একটা করে মানুষ সেখানে খুন হচ্ছে বিএসএফের হাতে।
তিনি বলেন, ‘যখন বিএসএফ আমাদের লোক ধরে নিয়ে গিয়ে মারে তখন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরা হলো সন্ত্রাসী। বিজিপি কি বলে- এরা গরু চোর। অর্থাৎ ভারতের বিএসএফের রক্তপাতকে এরা সাফাই গাইছে। কত নতজানু, কত ন্যাক্কারজনক নিজের আত্মা বিক্রি করে দেয়া সরকার। কারণ জনগণ তাদের দরকার নেই, দরকার নেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। এদের দরকার হচ্ছে শুধু ক্ষমতা। এই অমল-ধবল ক্ষমতার জন্য তারা দেশের স্বাধীনতা, পতাকা, নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রমহানি সব বিক্রি করে দিয়েছে। ওরা ক্ষমতায় থাকলে কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনার সন্তান, আপনার মা, আপনার বোন প্রত্যেকে নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। এদেরকে ক্ষমতায় থেকে নামাতে হবে গলায় গামছা দিয়ে, না হলে কারো কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়াও মানববন্ধনে যুবদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।