পটিয়া প্রতিনিধি:
পটিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১১৫৮ কোটি টাকার খান পুনখনন কাজে হরিলুট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অধিকগ্রহণ করে খান খনন করার কথা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থদের কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে খান খনন কাজের ৬০% এর অধিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের করল গ্রামের পয়েন্টে ও পূর্ব আশিয়া গ্রামে ক্ষুদ্ধ কৃষক জনতা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের দাপট দেখিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কাজে অনিয়ম করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এলাকার কৃষকরা দুই দফায় পটিয়া পৌরসভা মেয়র আইয়ুব বাবুল এর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে, পটিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোফরান রানা’র পৈত্রিক জায়গা কেটে মাটি পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। সহকারি কমিশনার ভূমি রাকিবুল ইসলাম ও পটিয়া থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাটি পাচারের ৫টি পিকআপ জব্দ করেছে। এভাবে খালের আশপাশে অসংখ্য কৃষকের ফসলী জমি কেটে বিলিন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থরা এখনো পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। সোমবার সকালে কাউন্সিলর গোফরান রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে লাইভে এসে অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন।
জানাগেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধিনে পাউবো’র আওতায় পটিয়ার গরুলুটা খাল, কেরিঞ্জা খাল, চৌধুরী আহলা খাল ও জঙ্গলখাইন খালসহ প্রায় ৯ হাজার মিটার খাল পুন:খননের কাজ চলছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাবর –জামান (জেবি)। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এ প্রকল্প কাজের আনুষ্টানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি। পূর্বের খালের সীমানা পরিমাপ না করে বর্তমান ঠিকাদার ইচ্ছেমত খান খনন করছে। যার কারণে খালের দু’পাড়ের অসংখ্য ফসলী জমি ও গাছ পালা নষ্ট হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, খাল খননের মাটি খালের দু’পাড়ে বাধ দেওয়ার কথা থাকলেও একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় খালের মাটি বিভিন্ন ভাবে পাচার করছে। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করে ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষকেরা। তাই ক্ষতিপূরণ না পেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না।
আশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ হেলাল অভিযোগ করেন, তাদের এলাকায় জমিতে বেশি গভীর করে কেটে বেড়িবাঁধের জন্য মাটি নেয়া হয়েছে। জমিগুলোর সীমানা আইল পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। এ কারণে জমির মালিকদের সাথে নতুন করে সীমানা বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষতি পূরণের জন্য আশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসেমের কাছে গেলেও তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন।
পটিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোফরান রানা অভিযোগ করেন, চাঁদখালী খালের পাড়ে তাদের জমি রয়েছে। ঠিকাদার খালের সীমানা চিহ্নিত না করে তাদের জমি ও গাছপালা কেটে ফেলেছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এই পর্যন্ত কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও আমার পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার দিয়ে আমার পৈত্রিক জমি সনাক্ত করা হয়েছে। রাতে’র আধারে আমার প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ৩শতাধিক গাছপালাসহ ফসলি জমি কেটে ফেলা হয়েছে। আমি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, পৌরসভা মেয়র আইয়ুব বাবুল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। এখনো কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি। আমি প্রতিবাদ করারয় প্রভাবশালী মহল সর্বশেষ রবিবার রাতে আরোও কিছু ফসলী জমি কেটে নিয়েছে।
পটিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব বাবুল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে ও যাবে দেশ। সে উন্নয়নের ধারায় পানি উন্নয়নের বোর্ডের অধিনে প্রায় ১২ কোটি টাকা প্রকল্পে’র কাজ চলছে। পৌরসভা বাসিন্দার হলেও তাদের বেশিভাগ কৃষি জমি রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। একটি মহল নিজেদের পকেট ভারী করতে অসহায় কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা আতœসাৎ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে আমাকে দুই দফায় কৃষকরা অভিযোগ দিয়েছে এবং আমি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেছি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পায়। মুলত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পটিয়ার একটি স্বার্থনেষী মহল কৃষকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হচ্ছেনা।