1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
পালক ঝরা পাখি
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নড়াইল মুক্ত দিবস,শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর পালনের প্রস্তুতি সভা নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে  শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা  সাবেক এমপি রশীদুজ্জামানের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করছেন করেছেন আদালত শহীদ আবু সায়েদের সনদ তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা সাভারে পাওনা টাকার জন্য বন্ধুকে ছুরিকাঘাতে হত্যামামলার আসামী রনি গ্রেপ্তার কাশিমপুরে জমি বিরোধ ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন কেশবপুরে সেই অবৈধ ইটভাটা রোমান ব্রিকসটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন নবাবগঞ্জে শ্রমীকলীগ নেতার বিরুদ্ধে সরকারি খালের মাটি লুটের অভিযোগ ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি প্রনয়ন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস চাপায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর

পালক ঝরা পাখি

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ১১.২৯ পিএম
  • ২৫১ বার পঠিত

নিরেন দাস,

পালক ঝরা পাখি

বেপরোয়া বেজি-দম্পতি পাড়ার হাঁস-মুরগিদের ভেতর আতঙ্ক হয়ে আবির্ভূত হলো এক আশ্বিন মাসে। হাঁস-মুরগির ছানা তুলে নিতে লাগল ডাকাতের মতো। মানুষজন সব অতিষ্ঠ হলেও রাজি নয় বেজি দুটোকে মারতে- কেননা, বেজি বিষধর সাপ মেরে ফেলে সুকৌশলে। গ্রামবাংলার মাঠ-বাগানে আজো সাপ-বেজির শৈল্পিক-দর্শনীয় লড়াই চোখে পড়ে। তখন খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলে সাপের উপদ্রব খুবই বেশি ছিল। তাই, বেজি মারা ছিল নিষেধ। মারত না নিজেদের প্রয়োজনেই। সাপ মারা বীর না বেজি! কিন্তু ত্রাস সৃষ্টিকারী বেজি-দম্পতি এক সকালে দিন পাঁচেক বয়সী ছ’টি হাঁসের ছানাকে ধাওয়া করতেই ছানাগুলো নামল গিয়ে পুকুরের জলে, ডাইভ দিয়ে জলে পড়ে একটি ছানার মাথা কামড়ে ধরে ডাঙায় উঠেই দিল ছুট। ওই বাড়ির গৃহবধূ ছিলেন ঘাটলায়, থালা-বাসন মাজছিলেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করে ধাওয়া করলেন। এদিকে ঘাপটি মেরে থাকা দ্বিতীয় বেজিটাও দিল জলে ঝাঁপ, একই কৌশলে শিকার মুখে দৌড়ে পালাল অন্য পথ ধরে। এই দৃশ্য দেখল গৃহবধূর বালক বয়সী ছেলেটি। দু-তিন দিন পরে একটি বেজি একটি বাড়ির আঙিনায় এসে ‘হাঙ্গুরা’র তলায় থাকা ৮-৯টি পিচ্চি পিচ্চি মুরগিছানা দেখে চড়ে বসল হাঙ্গুরার ওপরে, মুরগি-মাতা ছিল হাঙ্গুরার বাইরে, সেটার তো তখন মাথা খারাপ হয়ে গেছে, প্রচণ্ড চিৎকার-চেঁচামেচি করে আর শরীরের পালক ফুলিয়ে ঝাঁপিয়ে ও দু’পাখা কাঁপিয়ে বেজিটিকে

চাইল আক্রমণ করতে। চতুর-কুশলী বেজিটি সাপের ছোবল এড়ানোর কৌশল খাটিয়ে মুরগি-মাতার আক্রমণ এড়িয়ে গেল বার বার, এবার এলো দ্বিতীয় বেজিটি। প্রথম বেজিটিও এবার লোম ফুলিয়ে আর লেজ দুলিয়ে ও মুখে চাপা শব্দ তুলে মুরগি-মাতাকে আটকে বা ব্যস্ত রাখল, দ্বিতীয় বেজিটি এসেই পা দিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করে হাঙ্গুরাটিকে দিল উল্টে। পর মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়েই একে একে মেরে ফেলল সব ক’টি ছানাকে। এ সময়ে ছুটে এলো বাড়ির লোকজন- তারা গিয়েছিল অনতিদূরে সুপারিবাগান থেকে সুপারি পাড়তে। বেজি দুটি একটি করে ছানা মুখে ধরে দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এখানে উল্লেখ্য যে, বেজিদের ভেতর অকারণ হত্যার প্রবণতা প্রবল। হাঁস-মুরগিছানা যতগুলোই থাক, সবক’টিকে মারবে নিষ্ঠুরভাবে। নেবে কিন্তু দু-একটাকে। এমনটা নয় যে, আবারও ফিরে আসবে- আসবে না অনিবার্য কারণে। বাড়ির লোকজন জমে যাবে। কুকুর তো আছেই।

এতকিছুর পরেও মানুষজন বেজি দুটিকে মারতে রাজি নয়। বিষধর সাপ মারে। মুন্সিবাড়ির বাগানের ডোবার পাড়ের সুড়ঙ্গ-বাসায় ওদের তিনটি ‘খাই খাই’ ছানা। দেখেছে অনেকে। আমরাও দেখলাম একদিন। আমরা তখন ১২ জনের বাহিনী। ছেলে ও মেয়ে। বয়স ১২-১৫ বছর। আমার মায়ের বুদ্ধিতেই বেজি দুটিকে ‘মজাদার আজব শাস্তি’ দেবার পরিকল্পনা আমরা করলাম। মাছ ধরার ‘বোচ্‌নোর’ ভেতরে মুরগির ডিম রেখে পেতে রাখলাম ডোবাটির এক পাশে। অপেক্ষা বেশি করতে হলো না। একটি বেজি ঢুকল ডিমের লোভে। বেরুতে তো আর পারে না! ডাকাডাকি! সুড়ঙ্গ-মুখে বসা তিনটি ছানার একটি গিয়ে ঢুকে পড়ল বোচ্‌নোর ভেতরে। তখন আমাদের ‘টিম টুয়েলভ’ হইচই করে বোচ্‌নো নিয়ে ফিরলাম বাড়ি। বড়রা-ছোটরা মিলে নিমের ডালের ‘দাঁতন’ (দাঁত মাজার ডাল) দিয়ে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আমার মা ও খালার আলতার শিশি খালি করে ফেলল। বেজি ও বেজির ছানাটি তখন আলতা-লাল। শরীর শুকানোর জন্য রোদে রাখা হলো। তারপরে বোচ্‌নো ভেঙে মুক্তি দেওয়া হলো ওদের। যা হোক, আরও বহুকাল (এরা বেঁচে থাকে ৫-৭ বছর) ওরা বেঁচে ছিল। ওরা ‘আলতাবেজি’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিল। কিন্তু আমরা ‘টিম টুয়েলভ’ (আজো আমরা বেঁচে আছি ৯ জন) এর পর থেকে শুরু করেছিলাম অখ্যাতিকর তথা নিন্দনীয় কাজ-যেটা ওই বয়সে ছিল আমাদের কাছে মজার খেলা, এখন আফসোস হয়। সুতোর ফাঁস ফাঁদ, পরগাছার আঁঠার ফাঁদ ও অন্যান্য ফাঁদে পাখি শিকার করে পাখিটির শরীরে মেখে দিতাম আলতা, মেহেদি পাতার রস, নেইলপলিশ ইত্যাদি। বাসার উড়ূ উড়ূ পাখির ছানাদের শরীরেও রং মাখাতাম। তবে, হালতি ও রাঙা হালতির শরীরে আলতার বদলে লাগাতাম মেহেদির রং। রাঙা হালতির কুচকুচে কালো ছানাদের গায়ে লাগানোর পরে ওদের মা-বাবা ওদের একবার ছেড়ে গিয়েছিল। অচেনা লাগছিল? নাকি মেহেদি রং দেখে ভয় পেয়েছিল? কারণটা আজো অজানা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত পাখি দুটির বাসা-ডিম ও ছানার সন্ধান আজ পর্যন্ত (২০২১) দেশের অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি- একমাত্র ফকিরহাট ছাড়া। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম আমি। উল্লেখিত পাখি দুটির বাসা-ডিম-ছানা দেখেছি। ওই দেখার সময়েই দেখি একটি অদ্ভুত (?) পাখিকে। একাকী মাটিতে হাঁটছে। মাথা-ঘাড়ের পালক গেছে ঝরে। ঘাড়-মাথার রং ডিমের কুসুম রঙা হয়ে গেছে। মনে হলো- এই যেন সেদিন আমরা পাখিটার ঘাড়-মাথায় মেখে দিয়েছি মেহেদির রং! কিন্তু না! পাখিটা অচেনা বা অদ্ভুত কোনো পাখি নয়। আমাদের অতিচেনা পাখি এটি।

আগেও এরকম পালক ঝরা বুলবুলি-ছাতারে ইত্যাদি দেখে বিশেষ কৌতূহল জাগেনি, কারণ জানার জন্য। এবারই আমার জানার প্রবল আগ্রহ হলো যে, কী কারণে এই পাখিদের ঘাড়-মাথার পালক ঝরে যায়! শুধু এরা নয়, কাক-ছাতারেসহ আরও কিছু পাখির এই দশা হয়। এদের একাকীই চরতে দেখা যায়। তবে কি এরা কোনো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়ে দলছুট হয়ে একাকী জীবনযাপন করে? নাকি ‘করোনা’ জাতীয় কোনো সংক্রামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিজ ইচ্ছায় ‘কোয়ারেনটাইন’-এ থাকে! দল থেকে তাড়িয়ে দেয় স্বজাতিরা? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে, আমি ও আমরা এরকম পাখি বেশ ক’বারই দেখেছি- দেখেছি শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। কোনোবারই দলে দেখিনি, একাকী দেখেছি। ছাতারেদের ও কাকসহ বুলবুলিদেরও দেখেছি উল্লেখিত মাসগুলোতে, একাকীই। দেখেছি আরও কিছু ছোট জাতের পাখি। গ্রামবাংলায় এরকম দৃশ্য মাঝে মাঝে দেখা যায়। ছেলেবেলায় এরকম পাখি দেখলে দাদি-নানি-চাচিরাসহ মা-খালারা একটা ছড়ামতো বলতেন। সেটি হলো-

”১৩ই ভাদ্র কাক-শালিকে যমরাজার মা’র খানা (শ্রাদ্ধ) খেতে যায়/ ফেরার পরে গলা-মাথার লোম (পালক) পড়িয়া যায়।”

এই ছড়াটি হয়তো বা আজো দেশের কোনো কোনো এলাকায় প্রচলিত আছে। ১৩ ভাদ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews