ডেস্ক: প্রথমার্ধে দুই দলের তাল হারানো ফুটবল। নেইমার- লেভানডোস্কিদের গোল মিসের মহড়া। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি হাই-ডিফেন্স আর প্রেসিং ফুটবলের ছন্দে বায়ার্ন মিউনিখের গোল আদায়। বাকিটা সময়েও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে ওই ১-০ গোলের জয়েই থমাস মুলারদের ষষ্ট চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
প্রথমবার এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে আসা পিএসজি প্রথমার্ধে একটু উত্তেজনা ছড়ালেও দ্বিতীয়ার্ধের সময় যত বেড়েছে, ততই যেন উবে গেছে। লিসবনে রবিবার রাতের গোটা ম্যাচে কিংসলে কোমান গোল করেছেন একটি। কিন্তু হাতছাড়া করেছেন আরও কয়েকটি।
এদিন ১৯ মিনিটের সময় দারুণ একটি সুযোগ পায় ৪১তম দল হিসেবে ফাইনালে ওঠা পিএসজি। লিয়ান্ড্রো পারদেস বাঁদিক থেকে বল ছাড়েন নেইমারকে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের সামনে তখন শুধু বায়ার্ন গোলরক্ষক ন্যূয়ার। কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকাতে সক্ষম হন তিনি। নেইমার ফিরতি বলেও শট নিয়েছিলেন। কিন্তু সাইডলাইন থেকে ভারসাম্য ঠিক রেখে ঠিকানা খুঁজতে পারেননি।
তিন মিনিট বাদে বায়ার্নও মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু রবার্ট লেভানডোস্কি দারুণ পজিশনে থেকেও পোস্টে মারেন।
টমাস টুখেল পিএসজিকে এদিন তার পছন্দের ৪-৩-৩ ফরমেশনে প্রথমার্ধে আক্রমণে পাঠান। অন্যদিকে বায়ার্ন প্রথম ৪৫ মিনিটে আক্রমণ সাজায় এই মৌসুমে আগের ম্যাচগুলোতে প্রভাব বিস্তার করা ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে।
২৪তম মিনিটে পিএসজির সুযোগ নষ্ট করেন ডি মারিয়া। বক্সের ডানদিকে কেহরারের সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে জায়গা বানান মারিয়া। চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ শরীর ঘেঁষে ছিলেন না। এমন অবস্থায় মুভ না করে দশগজ দূর থেকে শট নিয়ে উপরে মারেন!
২৬ মিনিটের সময় ইনজুরি-শঙ্কা সত্যি করেন বায়ার্নের ডিফেন্ডার বোয়াটেং। এমন বড় ম্যাচে প্রথমার্ধের অর্ধেক পার না হতেই মাঠ ছাড়েন তিনি। তার জায়গায় আসেন চলতি মৌসুমে মাত্র আট ম্যাচ খেলা ২৪ বছর বয়সী নিকলাস সুলে।
৩২ মিনিটের সময় নাভাস রক্ষা করেন পিএসজিকে। নাবরি ডান দিক থেকে ক্রস তুলে দিলে ৬ ফুট উচ্চতার লেভানডোস্কি বলে মাথা দেন। কিন্তু নাভাসকে হারাতে পারেননি।
প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহূর্তে এমবাপে গোলের খাতা খোলার সুযোগ হাতছাড়া করেন। ডিফেন্স থেকে উইংসে গিয়ে তাকে বল দেন কেহরার। থমাস মুলারকে কাটিয়ে একটু সামনে যান বিশ্বকাপে গতি দিয়ে মাত করা এমবাপে। ন্যূয়ারকে নেহাত ফাঁকা পেয়েও বক্সের সেন্টার পজিশন থেকে ডান পায়ে একদম সোজা মারেন!
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ের একদম শেষ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন করে ‘খালি হাতে’ ফিরতে হয় বায়ার্নকে। কোমানকে চ্যালেঞ্জ করার সময় কেহরার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়া কোমানও তখন তার ‘ধাক্কায়’ পড়ে যান। বায়ার্ন পেনাল্টির আবেদন করলেও সাড়া দেননি রেফারি। মুলাররা হ্যান্ডবলেরও আবেদন তুলেছিলেন।
হাইডিফেন্সে বায়ার্ন সাধারণত পায়ে-পায়ে বেশি খেলে থাকে। কিন্তু এদিন রাতে প্রথম ৪৫ মিনিটে তাদের অনেক লম্বা পাস খেলতে দেখা গেছে।
প্রথমার্ধে গোল মিসের মহড়ায় নামা দুই দল দ্বিতীয়ার্ধে গোছানো ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও প্রথম ১০ মিনিটে সেই একই অবস্থা দেখা গেছে। মাঝমাঠে কেউই একটানা দুই থেকে তিনটি পাসের বেশি খেলতে পারেনি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে বায়ার্ন। তাদের ‘ফাইনাল ফোর’ অর্থাৎ আক্রমণ ভাগের শেষ চারজন পিএসজির বক্সের নিচে পজিশন অদল-বদল করে প্রচুর ক্রস পাস খেলতে থাকেন। ফল আসে ৫৯তম মিনিটে।
ডিফেন্স সামলে মিডফিল্ডে প্রভাব বিস্তার করা কিমিচ বক্সের ডান দিকে ঠাণ্ডা মাথায় বল ধরে পোস্ট থেকে ৬ গজ দূরে থাকা কোমানকে চোখে রেখে চিপ করেন। কেহরার তার সামনে ছিলেন। তার মাথার উপর দিয়েই বল যায় কোমানের কাছে। দারুণ দক্ষতায় কোনাকুনি হেডে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান তিনি।
এরপর সময় যত বেড়েছে পিএসজি দিশেহারা হয়েছে তত বেশি। শেষ দিকে নেইমারকে সঙ্গে নিয়ে এমবাপে বার কয়েক সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন ঠিকই, তবে তা ছিল ঘোর অন্ধকারে পথ খুঁজে ফেরার নামান্তর!