নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ১১ বছরের এক এতিম প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে।
২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের হোরবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।এদিকে ভুক্তভোগীর পরিবার নিরিহ হওয়ায় প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হচ্ছে ধর্ষিতার পরিবার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়,ঘটনার দিন বৃহষ্পতিবার দুপুরে মাঠ থেকে ধানের আঁটি মাথায় করে ফিরছিলো হোরবাড়ি গ্রামের মৃত শাজাহানের মানসিক প্রতিবন্ধী ১১ বছরের শিশু কন্যা সালমা।পথিমধ্যে এলাকার স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ছফর আলী (৫৫)তার পথরোধ করে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী আমবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে।সেই মুহূর্তে মাঠে কাজ করতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী তৈয়ব আলী ও তার স্ত্রী দূর থেকে ঘটনাটি দেখতে পান।তারা ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেলে টের পেয়ে লম্পট ছফর আলী পালিয়ে যায়।পরে তারা বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন।এসময় তার বুকে এবং বিভিন্ন স্হানে কামড়ের দাগ দেখতে পান।
ভুক্তভোগীর দাদা সামছুল হক বিলাপ করে বলেন,এতিম ও মানসিক প্রতিবন্ধী বলে এলাকার সবাই ওকে সহানুভূতির চোখেই দেখতো।সেদিন মাঠ থেকে নাড়া (ধানের আঁটি)মাথায় করে দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরছিলো।এসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে অসহায় মেয়েটাকে পশুর মতো পাশবিক নির্যাতন করেছে অমানুষটা।গরিব বলে বিচারের পরিবর্তে উল্টো আমাদেরকেই হয়রানি করা হচ্ছে।ওদের ভয়ে মেয়েটার চিকিৎসাও করাতে পারছিনা।তারপরও ধর্ষকের পরিবার থেকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে।আমরা গরীব বলে এতিম পাগল মেয়েটির জন্য কিছুই করতে পারলাম না।মাঝে মাঝে মনে হয় গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই।বাপ-মা হারা অসহায় নাতনীটার মুখের দিকে চেয়ে তাও করতে পারছিনা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৈয়ব আলী জানান,অনেক দূর থেকে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলে টের পেয়ে লম্পট ছফর আলী পালিয়ে যায়।পরে আমি ও আমার স্ত্রী বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্হানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান,বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।চেয়ারম্যানের সাথে কথা না বলে আমি কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না।তাছাড়া ছফর আলী স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং এমপি মোসলেম উদ্দিনের কাছের মানুষ।তার বিরুদ্ধে কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এ ব্যাপারে কালাদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,নুরুল ইসলাম মাষ্টারের সাথে যোগাযোগ করতে বারবার তার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে এর আগেও নারী ও শিশু নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে লম্পট ছফর আলীর বিরুদ্ধে।গত শীতে গভীর রাতে প্রতিবেশী রফিজ উদ্দিনের স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণের চেষ্টা করে ধরা পরলেও ভয়ে তাকে কেউ কিছু বলতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন নারী-পুরুষ জানান,দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় যা খুশি তাই করে বেড়ায়।তার ভয়ে এলাকায় স্ত্রী কন্যা নিয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছি।রাতের বেলায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে উঁকি মারে।ফাঁকা বাড়ি পেলে সেই বাড়িতেই ঢোকার চেষ্টা করে।তার বয়স পঞ্চান্ন বছর।হিসাব মতো যুদ্ধের সময় তার বয়স চারপাঁচ বছর থাকার কথা।তারপরও সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে।এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের বেশিরভাগ নারীরা পুরুষের সাথে সাথে মাঠে কাজ করে।এই ঘটনার পর থেকে সবাই আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।তার হাত থেকে নিস্তার পেতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তারা স্হানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অভিযুক্ত সফর আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।আমার শত্রুরা ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।পঞ্চান্ন বছর বয়সে তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন এবং সমাজের সবাই তার শত্রু কেন জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।
ধর্ষক ছফর আলীর ছেলে মোবাইল অপারেটর রবি’র কর্মকর্তা শওকত বাবুল বিষয়টা নিয়ে ঝামেলা না করে টাকা দিয়ে এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমান জানান,এ ধরনের কোন অভিযোগ এখনো পাইনি।এধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..