শেখর চন্দ্র সরকার
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, আর একজন শিক্ষকের পাঠদান হচ্ছে একটি জাতির জন্য কল্যাণকর।আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস । এই দিবসটি পালন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রকমের আয়োজন করে থাকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষক দিবসের আয়োজন করলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকদের এই দিবসকে মূল্যায়ন করা হয় না বা
শিক্ষক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এখনো পায়নি।
পৃথিবীর সকল দেশি মনে করেন শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, তাই একজন শিক্ষাগুরু শিক্ষা দ্বারা জ্ঞান,বিজ্ঞান,সাধারণ জ্ঞান, অর্থাৎ জীবনে চলার পথে যে জ্ঞানটুকু আমাদের প্রয়োজন বা অর্জন করা উচিত তা মূলত আমরা প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকেই পেয়ে থাকি। সেই ছোট থেকেই দেখছি শিক্ষকরা নিজেকে উজাড় করে আমাদের শিক্ষা দানের মাধ্যমে জাতির কাছে নিজের পরিচিতি দিয়ে থাকেন।
একটি শিক্ষক’ই পারেন একটি জাতিকে সভ্যতার দিকে টেনে নিয়ে যেতে। তাই শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার্থে ইউনেস্কো সহ বিশ্বের অনেক দেশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হিসেবে শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করে আসে আসছেন। পৃথিবীর প্রায় ১৫১ টির বেশি দেশ শিক্ষক দিবস পালন করে । দেশ ও বিদেশের শিক্ষকদের এই দিবসটি যেন সেরা মর্যাদা পূর্ণ একটি দিন।
এ দিবসকে ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের মান বজায় রেখে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া এবং আগামী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা। আগামী প্রজন্ম যেন ভুলে না যায় যে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড,আর শিক্ষাদান করে একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। শিক্ষকদের সম্মান জ্ঞাপন করা, শিক্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা, ছাত্র ও শিক্ষকরা মুখ মিষ্টি করা, এই দিবসে বিভিন্ন দেশ এইভাবে শিক্ষক দিবস পালন করে আসছে।
শুধু বাংলাদেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন শিক্ষক দিবস পালন করা হয় না বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো স্বীকৃতি পাননি। সরকারিভাবে শিক্ষক দিবস ন্যূনতম ভাবে পালন করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা শিক্ষা অফিসারকে ফোনে জিজ্ঞাসা করি এবারের ২০২১ এর শিক্ষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ? উত্তরে তিনি বলেন শিক্ষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি এখনো মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে জানানো হয়নি। আর বাংলাদেশে ঢালাওভাবে শিক্ষক দিবস পালিত হয় বলে আমার মনে হয় না।
তিনি তার ও ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম্বার দিয়ে বলেন আপনি কথা বলে দেখতে পারেন এ বিষয়ে আমি অফিসিয়াল ভাবে কোন কথা বলতে পারবোনা। আমি আবারও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম। দুঃখের বিষয় তিনি আমাকে জানালেন আমি রাজশাহী থেকে আসা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তারপরও আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এবার ২০২১ সালের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় কি আমাকে জানান। আমি অত্যান্ত দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে একজন জেলা শিক্ষা অফিসার হয়েও তিনিও আমাকে মন্ত্রণালয়ের কথাই বললেন যে, আমি এখনো আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আপডেট পাইনি । তখন সময় ১২: ৪৯ মিনিট রোজ সোমবার। যদিও মঙ্গলবার ৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস ।
যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন চীন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয় । ভারত সর্বোচ্চ বেতন স্কেল প্রদান করে শ্রীলংকা একজন মন্ত্রী সম্মান দেয় । দক্ষিণ কোরিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিভিন্ন উপাধিতে এই দিনে শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয় চীন শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়ে থাকেন।
শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের সম্মান জানাতে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল সহ সহযোগী প্রায় ৪০০ টির অধিক সংগঠন দিবসটি পালন করে আসছে।
২০১৭ সালে শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “স্বাধীন ভাবে পাঠদান”। ২০১৮ সালে শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “শিক্ষার অধিকার মানেই একজন যোগ্য শিক্ষকের অধিকার”। ২০১৯ সালে শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “তরুণ শিক্ষক পেশার ভবিষ্যৎ”। ২০২০ সালে ছিল “শিক্ষক সংকট নেতৃত্ব ও নতুন করে ভবিষ্যৎ ভাবনা” ।২০২১ সালের শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে এক জেলা শিক্ষা অফিসার জানান মন্ত্রণালয় থেকে তারা কোন তথ্য এখনো পাননি।
গ্রিক দার্শনিক এ্যারিস্টটল বলেছিলেন, যে শিক্ষকরা শিশুদের পাঠদান করেন তারা পিতা-মাতা গুরুজনের চাইতেও অধিক সম্মানি।
কথায় আছে অট্টালিকা তৈরি করতে গেলে যেমন ভিত্তি থেকেই মজবুত করে তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে হয়, ঠিক তেমনি একজন সন্তান বা শিশুকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম।
সমাজে মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অতুলনীয় , অপরিসীম।
আপনি আপনার জীবনের যে প্লাটফর্মেই দাঁড়াতে চান না কেন,সেই শিক্ষাটাই আপনার একদিন কাজে লাগবে যে শিক্ষা আপনি ছোট থেকে শিখে এসেছেন। তাই সমাজে একজন শিক্ষকের ভূমিকা সব সময় অগ্রণী ভূমিকায় রাখে।
শিক্ষকরাই গড়ে তোলেন ডাক্তার, মাস্টার, প্রফেসর, নেতা-নেত্রী,বৈজ্ঞানিক, পাইলট,সহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। মূলত শিক্ষকরাই দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর তৈরি করে থাকেন। তাই শিক্ষকদের নিয়ে নেতিবাচক কোন মন্তব্য নয় নয় কোন বিকৃতি। শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখুন। জন ভাল শিক্ষক হচ্ছে আগামী দিনের আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক। একজন সন্তানকে বাবা-মা খাইয়ে পরে মানুষ করতে পারে ঠিকই। কিন্তু একজন শিক্ষক সেই সন্তানটি বা শিশুটিকে তিল তিল করে হাত ধরে বড় করার চেষ্টা করে থাকে।
একজন শিক্ষক হচ্ছে শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক । কারণ একজন শিক্ষক ই পারেন তার ছাত্রের মেধা যাচাই করতে।
শিক্ষা এমন এক বিষয় যা অর্থ-সম্পদ, পৈত্রিক সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সবকিছু ভাগাভাগি করে নেওয়া সম্ভব কিন্তু শিক্ষা এমন এক অর্জন যার মাধ্যমে অর্জন করা যায় একটি সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেট এর ভাগ কেউ কখনো চাইতেও পারে না বা কখনো পাবেও না। শুধুমাত্র শিক্ষা অর্জন করেই সার্টিফিকেট অর্জন করা সম্ভব।
পরিশেষে আমরা আশা করি আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের সকল শিক্ষককে শ্রদ্ধার সহিত সর্বক্ষণিক স্মরণ করবে এবং বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হিসেবে শিক্ষক দিবস পালন করবে। পৃথিবীর সকল শিক্ষক সুখময় জীবন উপভোগ করুন এই কামনা শিক্ষক দিবসের সকল শিক্ষককে আবারো সহস্ত্র সালাম জানাই।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..