রাজু মন্ডলঃ
আবারও শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। এ কারণে সোমবার (২০ জুলাই) থেকে নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। আর পানি বেড়ে গেলে দুই-একদিনের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং মধ্য অঞ্চলে আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত চলমান বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবেÍ এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, আরেক ধাপ বন্যা আসতে পারে দুই-একদিনের মধ্যেই। কাল-পরশু পানি আসবে। শুরুটা হবে উত্তরাঞ্চল দিয়ে। এরপর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি নেমে যাবে। তিনি বলেন, ‘সোমবার থেকে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। তিন-চারদিন বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা আছে। আগামী ২৬/২৭ তারিখ থেকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি হবে। এরপর আর বন্যা হবে না।’ এদিকে, বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÍ আগামী ২০ জুলাইয়ের পর থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করবে। ২৫ জুলাই নাগাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। চলমান বন্যা পরিস্থিতি জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও বাড়বে। ২০ জুলাই পর্যন্ত রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে স্থিতিশীল থাকতে পারে। ২০ জুলাইয়ের পর পানি আবারও বাড়তে শুরু করবে। ফলে জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগামী ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানিও বাড়বে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করবে না। রবিবার (১৯ জুলাই) দেশের ১৩টি নদীর ২১ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপরে অবস্থান করছে। ভারী বৃষ্টির কারণে আরও বেশকিছু পয়েন্টের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার ওপরে উঠে যাবে। ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে পানি ৫৩, ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৪, চিলমারী পয়েন্টে ৬২, যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ৮৫, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৯২, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৯৮, কাজিপুর পয়েন্টে ৯১, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮১, আরিচা পয়েন্ট ৬৮, গূড় নদীর সিংড়া পয়েন্টে ৫৩, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০০, ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর জামালপুর পয়েন্টে ২, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ৫৮, পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১০৩, ভাগ্যকূল পয়েন্টণ্টে ৬৪ এবং মাওয়া পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বিপদীসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৫, পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ২ এবং মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পুর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী জামালপুর পয়েন্টের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে জেলাগুলোর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, রাজবাড়ি ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে আকাশে ভারী মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এই মৌসুমে যা খুবই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘আগামী দুই-তিন দিন দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা আছে।’ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। রবিবার দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নীলফামারীর ডিমলায় ৮৩ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকায় ২০, ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় ১৯, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ৪, রাজশাহীর বগুড়ায় ৫, খুলনার যশোরে ৫ এবং বরিশালের ভোলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।