1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
মফস্বলে সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন নামঞ্জুর জেল হাজতে প্রেরন ফুলবাড়িতে যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্রবাহিনী দিবস উদযাপিত বাসে উঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ ছাত্রদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাইন্সল্যাব এলাকা আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম পুঠিয়ায় সাথী ক্লিনিককে ১০ হাজার জরিমানা, সাংবাদিকের হুমকি নড়াইলে মদ্যপানে ১স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু,আরও ১ জন হাসপাতালে ভর্তি রাজশাহীতে গোপনে মৃত ব্যাক্তির জমি বিক্রয়ের অভিযোগ নিয়োগে বৈধতা না থাকলেও,জাহিনুর বেগমের দাবী তিনি প্রধান শিক্ষক  তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ছাত্ররা

মফস্বলে সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ৩.৫৩ এএম
  • ২৭৬ বার পঠিত
মফস্বলে সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে জটিলতা, গ্রুপিং এবং গুরুত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের শেষ নেই। নতুন কোনো সাংবাদিকের আগমন ঘটুক এটা হয়তো কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন না কিছু কিছু প্রবীণ সাংবাদিক। এর বাস্তব প্রমাণ আমি। সাংবাদিকতায় অনেক আগে থেকেই আগ্রহ আমার। কোনো নাটকে সাংবাদিক চরিত্রে কেউ অভিনয় করলে খুব মনোযোগ দিয়ে সেটি দেখতাম। এছাড়া আমি যে গ্রামে বসবাস করি সেখানে কোনো সাংবাদিক এলে হাজির হতাম তাকে দেখার জন্য। সাংবাদিকতাকে ঘিরে এতটাই আগ্রহ ছিল এবং আছে আমার। এসব কারণে এ পেশার মানুষগুলোকে ছোটবেলা থেকেই খুব সম্মান করি।
২০১২ সালের ঘটনা। আগ্রহ জাগলো সাংবাদিকতার প্রতি। তখন আমি দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজে স্নাতক’এ অধ্যয়নরত। একদিন চট্টগ্রামে শহরে বড় বোনের বাসায় বেড়াতে গেলাম। নগরীর জিইসি মোরে রাস্তার পার্শে ওয়ালে লেখা ছিলো জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।  সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানায় দেওয়া নাম্বারটিতে কল দিলাম বললো দেখা করতে। পরদিন থেকে আর কল রিসিভ করেনি। ২০১৬সালের শুরুতে ফেসবুকে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদদাতা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই। যোগাযোগ করে ঢাকা অফিসে গেলাম।সেখানে গিয়ে কথা হয় নির্বাহী সম্পাদকের সাথে। অনেকক্ষণ ধরে গল্প হলো তার সঙ্গে। তিনি অফিসিয়াল বিভিন্ন নিয়মের বিষয় জানালেন। সেই সঙ্গে এই ফরম পূরণ করতে হবে, ওই ফরম পূরণ করতে হবে। আরও অনেক কিছু। এটা করতে এতো টাকা লাগবে, কার্ড করতে হবে, সেটার জন্য আলাদা টাকা লাগবে। তার সব প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কারণ, আমাকে সাংবাদিক হতেই হবে। এতই আগ্রহ ছিল আমার। তার সব শর্তে রাজি হলাম এবং টাকাও দিলাম। এরপর তিনি একটা কার্ড ধরিয়ে দিলেন। কার্ড পাওয়ার পর খুশীতে আত্মহারা আমি। কোথায় রাখলে কার্ডটা নিরাপদে থাকবে এই ভেবে একবার মানিব্যাগে রাখি, আবার বের করে শার্টের বুক পকেটে রাখি। তবুও যেন শান্তি পাচ্ছি না। যদি হারিয়ে যায় এই ভেবে।
এরপর এলাকায় এসে শুরু হলো আমার কাজ। যেখানেই কোনো ঘটনা। সেখানেই আমি। ঘটনা যতই ছোট বা বড় হোক না কেন, সবার আগে ছুটে যেতাম ঘটনাস্থলে। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বাসায় এসে বসতাম সংবাদ লিখতে। কিন্তু সংবাদ কোন পদ্ধতিতে লিখতে হয়, তা জানতাম না। চিন্তা করলাম, স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা নেবো। গেলাম কয়েকজনের কাছে। কিন্তু কেউ আমাকে প্রথম অবস্থায় পাত্তাই দিলেন না। তখন প্রচুর পরিমানে নিউজ পড়া শুরু করলাম। এককথায় বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলোর একজন নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম। এরপর প্রতিদিন ৩-৪টা সংবাদ লিখে নির্বাহী সম্পাদকের মেইলে ও মেসেঞ্জারে পাঠাতাম। নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হতে লাগলো। ফেজবুকে তখন একটা পরিচিতির সারা পরেছে। অফিস থেকে কোন বেতন-ভাতা দেয়নি। উল্টো প্রতিমাসে অফিসে ৫শ’ত টাকা পাঠাতে হতো।
এর মাঝে অনেকে বিভিন্ন কথা বলে আমাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টাও করেছেন। অনেক সিনিয়র সাংবাদিকরা অনলাইন সাংঘাতিক বলে কটুক্তি করতেন আমাকে দেখলেই। তারপরও সারাদিন ঘুরতাম একা একা তথ্যের পেছনে। তবে কখনো সিনিয়র কেউ আমাকে কোনো কাজ দিতেন সেদিন আমি খুব খুশি হতাম। কারণ, এবার বুঝি তারা আমাকে মেনে নিতে শুরু করেছেন। এই ভেবে। অন্যদিকে, পরিবার থেকেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। সবাই শুধু বলেছে, সাংবাদিকতা করে কেউ সংসার চালাতে পারেনা। তুই স্নাতকোত্তর পাশ করা একটি ছেলে চাকরির চেষ্টা বাদ দিয়ে খামাখা টাকা নষ্ট করছিস। আমাকে দেখে যখনই কেউ এরকম কথা বলতো হতাশ হয়ে পড়তাম। এক পর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে আমার দুরত্ব তৈরি হতে লাগলো। আমার এই কাজটিকে কোনো ভাবেই ভালোভাবে নেয়নি কেউ। বিশেষ করে আমার স্ত্রী। কারণ ওর এক আত্মীয় সাংবাদিক ছিলো। করুণ অবস্থা তার। সেই কথা ভেবেই সে এটা মেনে নিতো না। এমনি করে চলতে থাকে দিন। আস্তে আস্তে জেলার সাংবাদিকরা আমাকে মেনে নিতে শুরু করলেন। সেই সঙ্গে সাহায্য করাও। আস্তে আস্তে এক এক করে সিনিয়ররা আমার থেকে নিউজ চাইতে শুরু করলো। আমি কোন কথা ছাড়াই খুশি মনে তাদের মেইল করা শুরু করি। যাহোক, এভাবেই কেটে গেল একটি বছর। এরপর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘চট্টবাণী’ তে কাজ শুরু করলাম। ওই পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির ও নির্বাহী সম্পাদক এস ডি জীবন। সাংবাদিকতা নিয়ে তিনি আমাকে বিভিন্ন বাস্তব ধারণা দিলেন, যা এখনও আমার খুব কাজে লাগছে। তার পত্রিকায় দুই বছর কাজ করি। তখন থেকেই সাংবাদিকতা একটু-আধটু বুঝতে শুরু করলাম। এরপর সংবাদ প্রকাশের জেড়ে কিছু প্রতিবন্ধকতার শিকার হই। তখন নিজ উপজেলার কোন সাংবাদিক এগিয়ে না আসলেও জেলা, বিভাগ ও ঢাকার কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে আসে। বিশেষ করে এস ডি জীবন, আবু জাফর, লায়ন আবু ছালেহ, এ্যাড. জসিম উদ্দিন মজুমদার, রফিকুল ইসলাম রাজু ও মিঠুন সাহার নাম না বললেই নয়।
এরপর স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ সাজু’র সহযোগিতায় জাতীয় দৈনিক ইংরেজি পত্রিকায় নিয়োগ পেলাম। এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে মূল্যায়ন কিছুটা বৃদ্ধি পেলো। জাতীয় পত্রিকা পেয়েই খুব তৎপর হয়ে উঠি তখন। যেখানেই কোনো ঘটনা সেখানেই আমি। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে দ্রুত সংবাদ তৈরি করে মেইল করতাম। এরপর অফিসে মফস্বল সম্পাদককে ফোনে জানাতাম, ভাই একটা সংবাদ মেইল পাঠিয়েছি, দেখবেন পেয়েছেন কিনা? ওপার থেকে ফোন রিসিভ করে বলতেন, ঠিক আছে দেখবো। এই বলে ফোনের লাইনটা কেটে দিতেন।সংবাদটি পেয়েছে কিনা, নিশ্চিত হতে না পেরে কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন করতাম- ভাই, সংবাদটা পেয়েছেন? ওপাশ থেকে মেজাজ খারাপ করেই বলতেন, বললাম তো দেখবো, এত অস্থির হওয়ার কি আছে। এই বলে আবারও ফোনের লাইনটা কেটে দিতো। মেইল করার পর থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পাঠানো সংবাদটির জন্য। হয়তো ছাপা হয়েছে এই ভেবে। ঘুমাতে পারতাম না ওই রাতগুলোতে। রাত ১২টা জেগে শুধু ভাবতাম, কোন পাতায় ছাপা হতে পারে সংবাদটি? সঙ্গে সঙ্গেই সংবাদটা খুঁজতে শুরু করতাম, এ পাতা, ওপাতা। সব পাতা খোঁজা শেষ। কিন্তু আমার সংবাদটা কোনো পাতায় নেই। মনটা খুব খারাপ হয়ে যেতো। মাঝে-মধ্যে খুব রাগ হতো মফস্বল সম্পাদকের ওপর। মাঝে মধ্যে তাকে কল দিয়ে বলতাম আমার সংবাদ ছাপানো হয়নি। আমি কী বলতে চাই, তা তিনি বুঝতেন আর আমাকে বুঝিয়ে বলতেন উপজেলা পর্যায় হতে সকল সংবাদ ছাপানো যায়না।  পাশাপাশি যুক্ত হলাম একটি জাতীয় দৈনিকের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে। শুরু থেকেই বিজ্ঞাপনের যথেষ্ট চাপ। সংবাদের বিষয়ে তাদের যেনো কোন গুরুত্বও নেই। নেই কোন বেতন কিংবা সম্মানি। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন কমিশনের উপরেই জীবিকা নির্বাহ।
সামান্য ভুলে মাঝে-মধ্যে তারা অফিস থেকে ফোন করে যা খুশি তাই বলেন। তবুও শত কষ্টের মাঝেও মফস্বল সাংবাদিকরা মুখ বুঝে সব সহ্য করেন।অথচ পত্রিকা অফিস থেকে কোনো সাংবাদিক বা কর্মকর্তা মফস্বলের কোনো সাংবাদিকের এলাকায় গেলে তাকে যে সম্মান করেন তারা, সেটা ওই কর্মকতার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি।থাক ওই সব কথা। ফিরে আসি, নিজের কথায়। তবে তার আগে আমার জেলার স্থানীয় সাংবাদিকদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বিশেষ করে জীতেন বড়ুয়া, প্রদিপ চৌধুরী, এ্যাড. জসিম উদ্দিন মজুমদার, সমির মল্লিক ও মোহাম্মদ সাজু’র প্রতি।  যাদের কারণে আজ আমি সাংবাদিকতাকে পেশাগত দ্বায়িত্ব নেওয়ার স্বপ্ন দেখছি। তারা আমাকে যে কত ভালোবাসে তার প্রমাণ এখন পাচ্ছি। তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।
যেটা বলা হয়নি, গত ৬ মাস যাবৎ একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ শুরু করেছি শিক্ষানবিশ হিসেবে। ৬ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ বিকাশ নাম্বারে মাসিক বেতনটা পেলাম। ৫ বছরের সাংবাদিকতায় এতো আনন্দিত কখনোই হইনি।
তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো মফস্বলে সাংবাদিকতার পাট চুকিয়ে চলে যাবো চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা শহরে। আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় এগিয়ে যাবো। অন্যায় ও অনিয়মের কাছে থাকবো আপোষহীন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews