1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস - মাহেদা
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস – মাহেদা

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৬ মার্চ, ২০২১, ৩.৪৫ পিএম
  • ৩০৪ বার পঠিত
গোলাম রাব্বী 
মাহেদা মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীর নাম। থাকে বাজারের নানা অলি গলিতে। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁয় সকাল বিকাল যায় কথা বলে। দোকানিরা আদর করে, অসহায় মাহেদা কে পেঠ পুরে খাওয়ায়।তার প্রিয় খাবার রসমলাই, দু-চার দিন পরপরই রাখাল চাচা তাকে খাওয়ান।উনি বলেন ‘শুন রে মাহেদা, আমার মিষ্টির ব্যাবসা যতদিন আছে তোর রসমালাই, দই, মিষ্টি খাওয়ার কোন চিন্তা নেই’।শুধু রাখাল কাকা নয় সকলের প্রিয় ছিল অসহায় মাহেদা।
থাকার কোন চিন্তা নেই আজ এ দোকান তো কাল অন্য দোকানের বারান্দায় ছালার চট বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ,উঠে যায় সকাল সকাল।  দুনিয়াতে বাজার বাসী ছাড়া তার কেউ নেই,২ বছর আগে যখন তার বয়স ছিল ১১ বছর তখন তাদের কতই না সুখের সংসার ছিল। মা বাবার একমাত্র আদুরীনি।কিন্তু উনার দুজনই ৬৯ সালের গন অভ্যুত্থানে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
তাদের লাশও খুঁজে পাওয়া যায় নি। যাই হউক কি লাভ ঐ সকল দুঃখের গল্প বলে। এখন মাহেদার দিনকাল ভালোই কাটছে। বাজার বাসীর অসীম মমতায় জড়িয়ে আছে।বাজারের প্রত্যেক দোকানী তাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে।এক দিন মাহেদা না দেখলে বাজার বাসীর খাবার যেন হজম হয় না। মাহেদাও তাদের কে অনেক ভালোবাসে।
আজ মাহেদা ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই তার নমে হতে লাগল, যেন কিছু একটা হয়েছে সবাই ভয়ে ভয়ে আছে, বলছে যুদ্ধ হবে যুদ্ধ! কয়েক দিন আগে সে বাজারের পাসের গ্রামে রমিজ মিয়ার বাড়িতে রেডিওতে বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুনেছিল। তাই বিলম্ব না করে দৌড় দিল রমিজ মিয়ার বাড়ির দিকে…
গিয়ে দেখে গ্রামের অনেকই রেডিওতে খবর শুনছে,দেশে পাক-বাহিনী আক্রমণ করেছে। দেশে এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।গত রাতে নাকি
 ঢাকায় হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।মাহেদা মনে মনে ভাবলো যুদ্ধ তো শহরে হচ্ছে। আমাদের এই এখানে হবে না। তাই সে আবারো বাজারে চলে যায়। নানা পথ নানা কাজ করে দিন পার করে দেয়। পর দিন দেখতে পায় গরুর হাটে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নেতৃত্ব যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সেও গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেখে, মনে মনে আশা করে আমিও যদি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতাম যুদ্ধে যেতাম তাহলে মনে হয় মা বাবার আত্মা শান্তি পেত।তাই সে শাজাহান  চাচাকে বলে
‘চাচা আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়াবে?আমি যুদ্ধে যাবো’।
‘চাচা মুচকি হেসে বলল ‘আরে পাগলী তুমি কি প্রশিক্ষণ নিবি,দোয়া করিস যেন দেশটা স্বাধীন হয়’।
চাচার কথা শেষ হলেই মাহেদার মনটা ভেঙে যায়,অনেক আশা করে এসেছিল বেচারি। কিন্তু হাল ছাড়ার মতো মেয়ে সে নয়, লুকিয়ে লুকিয়ে  দেখে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়, বন্ধুক চালানো ঢিল মারা দৌড় জাপ ইত্যাদি।
নিজেই পুরোনো বাঁশের টুকরো কঞ্চি দিয়ে তৈরি করে নেয় তার যুদ্ধাস্ত্র। মনে আশা রাখে যদি কখনো যুদ্ধে যেতে পারি।
এভাবে দিন চলছিল, মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে যুদ্ধে।মাহেদা
লোকজনদের কাছ থেকে খোঁজ নেয় যুদ্ধ কেমন চলছে। সে নামাজ রোজা কিছু না পড়লেও যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে প্রতি রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে দেশ ও মুক্তিযেদ্ধাদের জন্য। শুক্রবারে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছিল রাতের শেষ দিকে(তাহাজ্জুদের সময়) দোয়া কবুল হয়।তাই সে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে দোয়া করে।
আরো কয়েক দিন যায়….
আজ ঘুম থেকে উঠেই মাহেদা চলে যায় রাখাল কাকার কাছে, কাকা তাকে কিছু মিষ্টি নিমকি খেতে দেয়, খেয়ে চলে যাওয়ার সময় যখন সে ঘর থেকে বেড় হয়ে গিয়েছে, তখন হঠাৎ রাখাল কাকা পিছল থেকে ডাক দেয়,
মাহেদা…শুনতো?
কি কাকা বলেন
নে মা তোর পছন্দের রসমালাই খেয়ে যা?
না কাকা আজ তো অনেক খেলাম,অন্য দিন।
না রে মা, এখনি খেয়ে যা আমার মনটা কেমন জানি করছে তু খা মা।
মাহেদা মজা মজা করে রসমালাই খেয়ে বিদায় নিল। ঘুরতে থাকে বাজারে অন্যান্য দিনের মতো।
দুপুর বেলা হঠাৎ বাজারের পূর্ব দিক থেকে গুলির শব্দ শুনা যায়। মাহেদা চমকে উঠে কি হলো? একটু এ গুতেই শুনতে পেল, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাজারে আক্রমণ করেছে।অনেক লোককে মারছে দোকান, গুদাম ,ঘর বাড়ি পেড়িয়ে দিচ্ছে। সবাই বলছিল লুকিয়ে পরতে মাহোদা লুকিয়ে পরে কলেজের এক কোনে। তখন তার চিন্তা হচ্ছিল কখন জানি কাকে হত্যা করে এই নর পশুর দল।চিন্তা উৎকন্ঠা আর হতাশায় কাটে তার ৫-৬  ঘন্টা সময়। সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানীরা চলে গিয়েছে শুনতে পেরে।
সেজা দৌড় দেয় বাজারে।
গিয়ে দেখে কি ভয়ংকর কান্ড চার দিক যেন ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।কত দোকান, গুদাম, ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।কত অসহায় নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে।একটু এগিয়েই দেখে রাখাল কাকার গুলিবিদ্ধ লাশটা পরে আছে দোকানের সামনে, দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। রাখাল কাকার শোকে সে নির্বাক হয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
একটু সামনে গিয়েই দেখতে পায় পরে আছে দর্জি জহুরলাল কাকার গুলিবিদ্ধ লাশ।মাহেদার সামনে ভেসে ওঠে জহুরলাল কাকার কথা তিনি কতো ভালো মানুষ ছিলেন, উনার কাছে থাকা পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে মাহেদার জন্য জামা তৈরি করে দিত। দুই ঈদ পূজোয় তিনি মাহেদাকে নানা রকম জামা তৈরি করে দিতেন।যেদিন ভালো রোজগার হতো তিনি মাহেদাকে রসমালাই খাওয়াতেন। আর বলতেন ‘মাহেদারে আমারও যদি একটি মেয়ে থাকতো ঠিক তোর মতোই আদর করতাম আসলে সে তোর মতোই হত’।
এই সকল কথা ভেবে ভেবে মাহেদার বুকটা কাঁদছিল, আজ আর সেই মানুষগুলো নেই যারা মাহেদাকে অনেক বেশি আদর করতো।এখন আর কোনদিন রাখাল কাকা বলবে না ‘মাহেদা আয় রসমালাই খেয়ে যা,সারাজীবন রসমালাই খাওয়ানোর মতো সেই রাখাল কাকা আর বেচে নেই তিনি দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন। মাহেদা প্রতিজ্ঞা করে আর কোন দিন সে রসমলাই খাবে না। আর কখনো জহুরলাল কাকা বলবে না আজ ঈদ/পূজা নে তোর নতুন জামা,
আর বলবে না কয়েক দিনে যে টুকরো কাপড় জমেছিল সেগুলো দিয়ে তোর জন্য একটি জামা তৈরি করেছি।
বলতে বলতে মাহেদা নিরব হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর একা একাই বলে…
 ‘আমার কোন আফসোস নেই আমার কোন দুঃখ নেই আমার এই প্রিয় মানুষদের কে হারিয়ে, আমি আনন্দিত আমার প্রিয় মানুষেরা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন। আমিও তাদের একজন।
জহুরলাল কাকা বলতেন না উনার মেয়ে হলে তিনি আমার মতো আদর করতেন হ্যাঁ আমি উনারই মেয়ে আমি শহিদের মেয়ে।শুধু আমি জহুরলাল কাকার মেয়ে আমি রাখাল কাকারও মেয়ে আমার দুই বাবা এবার যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। আমার আরো অনেক বাবা ভাই আজকে দেশের জন্য শহিদ  হয়েছেন, তিন বছর আগে আমার বাবা মা উনারাও দেশের জন্য শহিদ হয়েছিলেন, আমার কোন দুঃখ নেই কোন কষ্ট নেই আমার অনেক বাবা মা ভাই দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন।
এ কথাগুলো চিৎকার দিয়ে বলছি যা সমগ্র বাজার বাসী এলাকা বাসী শুনছিল, ভীর জমে গিয়েছিল তখন বাজারের মধ্যে।
 কথা শেষ করে মাহেদা সকলকে বলল ‘যাও তোমরা সবাই যাও আমি আমার শহিদ বাবা মাদের কাছে ঘুমাবো যাও তোমরা যাও’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews