1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
রংপুরে ওসির বাসার কাজের মেয়ের লাশ নিয়ে ধ্রুম্রজাল
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি প্রনয়ন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস চাপায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন নামঞ্জুর জেল হাজতে প্রেরন ফুলবাড়িতে যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্রবাহিনী দিবস উদযাপিত বাসে উঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ ছাত্রদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাইন্সল্যাব এলাকা আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম পুঠিয়ায় সাথী ক্লিনিককে ১০ হাজার জরিমানা, সাংবাদিকের হুমকি নড়াইলে মদ্যপানে ১স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু,আরও ১ জন হাসপাতালে ভর্তি রাজশাহীতে গোপনে মৃত ব্যাক্তির জমি বিক্রয়ের অভিযোগ

রংপুরে ওসির বাসার কাজের মেয়ের লাশ নিয়ে ধ্রুম্রজাল

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ৬.৫৭ পিএম
  • ১৩৯ বার পঠিত

রংপুর ব্যুরো:

রংপুরে মুন্সিপাড়াস্থ পাঠশালার মোড়ে ওসির বাসার কাজের মেয়ে মৌসুমি (১৫)হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওসি ময়নুলের বিরুদ্ধে। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মনেয়া কিশোরী মৌসুমি পেটের দায়ে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা ময়নুলের মুন্সিপাড়াস্থ পাঠশালার মোড়স্থ বাসায়।

রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমের ছাদে মৌসুমি (১৫) নামের কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল বেলা। ওই কিশোরী কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশে কর্মরত ওসি ময়নুলের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করত। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্যাতন পরবর্তী হত্যা করে পুলিশ বিল্ডিং নামে পরিচিত ‘প্রয়াস এপার্টমেন্ট’ এর ৬ তলা ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে কিশোরীর মরদেহ। এলাকাবাসী বলেন, ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং কয়েক জন ব্যাংকার ও সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মিলে প্রয়াস এপার্টমেন্ট নামক বিলাসবহুল এই আবাসন তৈরি করেছেন।

সেখানেই প্রায় ৭/৮ মাস যাবৎ গৃহ-পরিচারিকার কাজ করে আসছিল সুন্দরী কিশোরী মৌসুমী। সে রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট ইউনিয়নের মোশাররফ হোসেন এর মেয়ে। মৌসুমির বাবা খুব সাধাসিধে মানুষ, স্ত্রী কল্পনা আক্তারের মৃত্যুর পর তিনি আরও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। সে কারণেই মেয়ের মারা যাওয়ার খবরটুকু দেয়া হয়নি হতভাগ্য পিতাকে! এমনকি জানাযায় কিংবা কবরস্থ করতেও দেখা যায়নি তাকে। অনেকটা লুকোচুরি করেই কবরস্থ করেন মামা মঞ্জুরুল ও ওসি ময়নুলের আস্থাভাজন সুরুজ পিয়ন। দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে স্কুলের বারান্দায় খুব একটা যাওয়া হয়নি মৌসুমির! ক্ষুধার কষ্ট নিবারণে প্রায় ৫/৬ বছর বয়সেই ঢাকায় গিয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে সে। রংপুর মহানগরীর ১২নং ওয়ার্ড রাধাকৃষ্ণপুর মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম ভুট্টোর ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুরের বাসায়। হঠাৎ করেই মামা মঞ্জুরুল-এর পিড়াপিড়িতে সেখান থেকে মৌসুমি চলে আসে নানার বাড়িতে। মৌসুমির বিয়ের অজুহাতে ৪০ হাজার টাকাও নেন মামা মঞ্জুরুল ও তার পরিবার। পরে রাধাকৃষ্ণপুর মাস্টার পাড়ার আ: জলিল এর পুত্র সিরাজুল ইসলাম ওরফে সুরুজ (রংপুর সরকারি কলেজে কর্মরত পিয়ন) এর মাধ্যমে তার পূর্ব পরিচিত ওসি ময়নুলের (প্রয়াস এপার্টমেন্ট’র ২য় তলা) বাসায় কাজ নিয়ে দেন ৮/৯ মাস পূর্বে।

মৌসুমির খালা মমতাজ সাংবাদিকদের বলেন, ওরা তিন ভাই বোন, মৌসুমি সবার বড় ওর বয়স ছিল ১৫ বছর, মীম ৯ বছর সব ছোট ওর ভাই কবির ৭ বছর বয়স। তিনি আরও জানান, মৌসুমি ছোট বেলায় সমাজকল্যাণ এতিমখানায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। তার মা কল্পনা কুমিল্লার ভবের চরে থাকাকালীন সময়ে মারা যান। এবং ওখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে।

মৌসুমির মরদেহ গোসল করিয়েছেন শাহনাজ, রোকসানা, শহর বানু, পাশে তার নানি হাসনা বানু উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাধাকৃষ্ণপুরের স্থানীয়রা জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি সে মারা যাবার সপ্তাহ খানেক আগে বাড়িতে চলে আসে এবং ওসি ময়নুলের বাসায় কাজ করবে না বলে মামা মঞ্জুরুলসহ পরিবারের লোকজনদের জানায়। পরে সিরাজুল ইসলাম ওরফে সুরুজ পিয়ন তাকে ময়নুলের বাসায় যাওয়ার জন্য ডাকতে আসলে সে যাবেনা বলে জানায় এবং কান্নাকাটিও করে। সুরুজের চাপে তার না যাওয়ার কারণ বিস্তারিত বলার পরেও, নাছোড়বান্দা সুরুজ পিয়ন তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে আবার নিয়ে যায় ময়নুলের বাসায়। সেই যাওয়াই মৌসুমির শেষ যাওয়া! ক’দিন যেতে না যেতেই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে তার লাশ মেলে রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়াস্থ বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমের ছাদে। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রাধাকৃষ্ণপুরের একাধিক নারী পুরুষ জানান, ওসি ময়নুলের স্ত্রীর পরকিয়ার বিষয় জানতো মৌসুমি! সে কারণে সে ভয়ে ছিল ওখানে যাইতে চাইত না। মৌসুমির চলে আসা, পূণরায় যাইতে না চাওয়া এবং ভয়ের মূল কারণ সুরুজ পিয়নকে বিস্তারিত বলেছিল সে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌসুমির এক মামা বলেন, আমার ভাগনি মৌসুমিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যা করে কৌশলে লাশ স্কুলের বাথরুমের ছাদে রাখা হয়েছিল, অপরদিকে মৌসুমির আরেক মামা ট্রলি ড্রাইভার মঞ্জুরুলকে ডেকে পুলিশ একটি “মৃত্যু সংবাদ অবহিতকরণ প্রসঙ্গে” শিরোনামে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। সেই কাগজটা যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারবেন মৌসুমি আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ যেভাবে লিখে নিয়েছেন। অথবা মঞ্জুরুল যেভাবে লিখে দিয়েছেন যে, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রয়াস এপার্টমেন্ট এর ছয়তলা ছাদ থেকে মৌসুমি পড়ে গিয়ে মারা গেছে! আবার এটাও লেখা আছে সে আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, মৌসুমি যদি ছয়তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে, তাহলে যে জায়গায় লাফ দিয়ে মারা গেছে সেখানে রক্তে ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা যতটুকু দেখেছি মুন্সিপাড়া বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে লাশের আশেপাশে রক্তের কোন ছিটেফোঁটা ছিলনা! এছাড়াও ওসি ময়নুলের তিন সন্তানের জননী স্ত্রী মিনা’র পরকিয়ার বিষয় জানতো মৌসুমি, তাদের অপকর্ম ঢাকতেই হত্যা করা হতে পারে তাকে।

রংপুর মহানগরীর ১২নং ওয়ার্ড রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মোজার পুত্র সাব ঠিকাদার, জাহাঙ্গীর জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি’২৩ রাত আনুমানিক ১২টার পরে আবার এলাকাবাসী ভাতিজা সিরাজুল ইসলাম ওরফে সুরুজ পিয়ন আমাকে অনুরোধ করে বলেন চাচা, আপনার বাসায় একটু বসবো। পরে আমার ঘরে বসেন, স্থানীয় সোহান, সিরাজ, আজিজুল সাতাও, আবুল কালাম, মঞ্জুরুল ও তার পরিবার এবং উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের ওসি ময়নুল। ওসি সাহেব আমার সামনে বলেছেন, ঘটনার দিন রাতে তিনি যখন বাসায় আসেন তখন মৌসুমিকে রুমে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, আপনাদের কারো কোন দাবীদাওয়া থাকলে আমাকে বলবেন। আমি চেষ্টা করবো আপনাদের দাবী পূরণের জন্য।

উল্লেখ্য: গত ১৩ ফেব্রুয়ারি’২৩ সকালে স্থানীয়রা রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমের ছাদে তরুণীর মরদেহ দেখতে পেয়ে, জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের বাড়ি নামে পরিচিত “প্রয়াস এপার্টমেন্ট” এর কারো সাথেই এলাকাবাসীর তেমন কোন সম্পর্ক নেই। স্থানীয়দের সাথে তেমন মিশেন না এই বাসার মানুষ। তবে প্রায়ই রাতে এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে কান্নাকাটি ও চিৎকার চেচামেচি শোনা যেত। পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম জানান, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের আয়া সুমাইয়া স্কুলে গিয়ে বাথরুমের উপরে মরদেহের পা দেখতে পান। পরে স্কুল সংলগ্ন সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসির বাসায় গিয়ে বলেন। ফেরদৌসী খবর পেয়ে আমাকে জানালে আমি দ্রুত স্কুলে যাই, তখন সময় আনুমানিক সকাল ৯টা আমি গিয়ে শুনি পুলিশ এসে তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে গেছেন। ঘটনার দিন সরেজমিন পরিদর্শন করেন, আবু বক্কর সিদ্দিক উপপুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আরপিএমপি, রংপুর। মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহফুজার রহমান, পিবিআই ইন্সপেক্টর রায়হান। এছাড়াও রংপুর মেট্রোপলিটন, জেলা পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি মৌসুমিকে মাটি দেবার সময়েও সাদা পোশাকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।

এলাকাবাসী প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ তরুণির লাশ উদ্ধারের সময় আমরা দেখেছি তার দুই পায়ের রগ কাটা ছিলো। আমাদের ধারণা হয়তো তাকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানান, তার মৃত নিশ্চিত করতেই পায়ের রগ কাটা হতে পারে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া জরুরী। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করা নাহলে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবো। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা: আয়শা পারভিন জানান, মৌসুমির পোস্টমোর্টেম করা হয়েছে, ভিসেরা রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। এবং ধর্ষণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছেনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জানান, ভাই আমি ওই সময় থানায় ছিলাম না তাই এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারছি না। তবে ইউডি মামলা হয়েছে, মামলা নং-১৬ তারিখ ১৩/০২/২০২৩ইং, পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে। এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। বিষয়টি স্যারেরা দেখছেন ওনারাই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews