রংপুর ব্যুরো:
রংপুরের পীরগাছা থানাধীন ৫নং ছাওলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ পশ্চিম ব্রাহ্মণীকুন্ডা গ্রামের মৃত্যু মানিক উল্লাহ আকন্দের ছেলে, তিন সন্তানের জনক শের আলী (৫০) কে রাতের আঁধারে অত্র গ্রামের “উকিল জহুরুল ইসলামের সাম্রাজ্য” নামে খ্যাত হাজী কৃষি খামারের পূর্ব-দক্ষিণ কর্ণারে গলাকেটে হত্যার পরবর্তী লাশ ফেলে রাখা হয়। নিহতের বড়ভাই আফছার আলী অভিযোগ করে বলেন, উকিল জহুরুল দীর্ঘদিন যাবত আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন।
ইতিপূর্বে আমরা ভূমিদস্যু জহুরুল গং-এর বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করেও কোন ধরনের কূল-কিনারা পাইনি। তিনি আরও বলেন, আজ কয়েক বছর ধরে আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত! আমরা গরীব তাই আমাদের পাশে কেউ নেই। ইতিপূর্বে জহুরুল উকিলের অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তারা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছিল।
আফছার আলী আরও বলেন, গত দুই বছর পূর্বে জমি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে জহুরুল উকিলের গুন্ডাপান্ডারা আমার হাত পা ভেঙ্গে আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছে, দীর্ঘ সময় চিকিৎসা করার পর আমি বেঁচে আছি, এটাই অনেক। শের আলীর অপর বড়ভাই শাহার আলী অভিযোগ করে বলেন, গতকাল ১৭ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বড়ভাই এন্তাজ আলীকে ফোন করে শের আলী বলেন, জহুরুল উকিল, রায়হান, বাতেন, ফিরোজ, বাচ্চু, খাইরুলসহ আরও কয়েকজন মিলে তার হাত পাঁ বেধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
একথা বলার সাথে সাথেই তার ফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন সন্ত্রাসীরা। পরে আমরা পীরগাছা থানায় ফোন করে বিষয়টি জানালে, থানা পুলিশ আমাদেরকে ১৮ মার্চ সকালে থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে বলেন। কিন্তু আজ সকাল দশটার দিকে জানতে পারি আমার ভাইকে গলা কেটে হত্যা করে হাজী কৃষি খামারে মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই, আমরা জহুরুল উকিলের ফাঁসি চাই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলীশান গেইট ও কাঁটা তারের বেড়ায় ঘেরা, হাজী কৃষি খামারের কলা বাগানের ভিতরে পীরগাছা থানা পুলিশ ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত উৎসুক জনতার মধ্যস্থলে পড়ে আছে শের আলীর গলাকাটা নিথর দেহ।
হাজী কৃষি খামারের সাইনবোর্ডে প্রদেয় নাম্বারে কল দিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের বিষয় জানতে চাইলে, হাজী কৃষি খামারের মালিক জহুরুল উকিলের বড়ভাই ফিরোজ-উল-আলম বলেন, খামারে হত্যা বা কারো মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি রাজশাহীতে আছি, তবে এ বিষয়ে এটা ভালো বলতে পারবেন আমার ছোট ভাই উকিল জহুরুল ইসলাম। আপনার যা জানার প্রয়োজন আছে, তার নিকট জানতে পারেন বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এই হত্যার বিষয় জানতে চাইলে ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ জহুরুল উকিলের সাথে মৃত মানিক আকন্দের সম্পত্তি দখল করাকে কেন্দ্র করে মামলা মোকদ্দমা চলছিল। ইতিপূর্বে জহুরুল উকিলের লোকজনের কাছে তাদের নির্যাতনের ঘটনাও স্বীকার করেন তিনি। চেয়ারম্যান নজির হোসেন আরও বলেন, জহুরুল উকিলের প্রতিষ্ঠিত হাজী কৃষি খামারটি প্রায় পুরোটাই নিহত শের আলীদের ছিল এটা গ্রামের সবাই জানে। তবে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে সেটি পুলিশ প্রশাসন অবশ্যই খুঁজে বার করবে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাসুমুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডের বিষয়ে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে, মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবার থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন খুব দ্রুত অপরাধী-কে আইনের আওতায় আনা হবে।