চট্টগ্রামের রাউজানের হাজী পাড়ায় জুমার নামাজ পড়তে এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ মুছা নামের এক প্রবাসী।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাউজান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ঢেউয়া হাজীপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ মুছা (৪৫) স্থানীয় মৃত কবির আহমদের পুত্র। দুই সন্তানের জনক মুছা ওমানের ওয়াইলজায় থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মুছা অনেকটা গোপনে শুক্রবার সকালে নিজ বাড়িতে আসেন। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান ইকবাল ও সাইদুল হকের কয়েকজন অনুসারী তাকে দেখে ফেলেন। মুছা নামাজ পড়ে বের হতেই আওয়ামীলীগের ১০-১২ জন নেতা কর্মী তার ওপর হামলা করে এবং বেধড়ক অমানুষিক পিটুনি দেয়। নজিরবিহীন পিটুনি খেয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুছার শশুর মোহাম্মদ মিয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাই ২৪ বছর ধরে ওমানে থাকেন। গত একমাস আগে সে দেশে এসেছে। মা বাবার কবর জিয়ারত করতে সে রাউজানে গিয়েছিলো। মোহাম্মদ মিয়া জানান মুসাকে আমি রাউজান যেতে বাধা দিয়েছিলাম। কারণ রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনা ছিলো তাকে মেরে ফেলার। কিন্তু আমার মেয়ের জামাই মুসা আমাকে বলেন হাজী পাড়া আওয়ামীলীগের নেতা শাহজাহান ইকবালের বাসায় গিয়েছি এবং তাকে জানিয়েছি শুধু মাত্র মা বাবার কবর জিয়ার করে চলে আসবো। শাহজাহান ইকবাল আশ্বাস দেন রাউজানে মুসাকে কেউ কিছু করবেনা, যে আশ্বাস পেয়ে মুসা রাউজানে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে জানলাম এটি একটি ফাঁদ ছিলো এবং শাহজাহান ইকবাল ও সাইদুল হকের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী আগে থেকে ওতপেতে ছিলো এবং নামাজ পড়ে বের হওয়ার সাথে তারা আমার মেয়ের জামাই মুসার ওপর হামলা করে অমানুষিক নির্যাতন করে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
তবে এর অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জানান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের জন্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পক্ষে শাহজাহান ইকবাল ও সাইদুল হক তার কাছে বিশাল একটি এমাউন্ট দাবী করেছিলেন। কিন্তু মুসা তা দিতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে তারা মুসার ক্ষিপ্ত ছিলেন। তিনি আরও জানান দেশে আসলেও এলাকায় যেতে পারতেন না। দীর্ঘদিন পর গতকাল বাড়িতে গিয়েছেন। আর গিয়েই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বর্বরতার শিকার হয়েছেন। আর এখন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
মুসার ভাই তৌফিক জানান মুসা এর মধ্যে কয়েকবার দেশে আসলেও এলাকায় আসেননি। হাটহাজারীর শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। এক মাস আগেই তিনি দেশে এসেছেন। আগামী ৫ তারিখ তার আবার ওমানে চলে যাওয়ার কথা ছিলো। ’কিন্তু এই নষ্ট রাজনীতি তাকে বাঁচতে দিলো না।’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি আমার ভাইকে নিয়ে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান ইকবালের সঙ্গে তার শহরের অফিসে দেখা করেছিলাম। তাকে আমার ভাই বলেছিলেন, তিনি আজকে বাবার কবর জিয়ারত করতে এলাকায় যাবেন। তাকে যেন তিনি প্রটেকশন দেন। তিনি আমার ভাইকে কথাও দিয়েছিলেন। আর এখন শুনলাম উনার নেতৃত্বে আজকে জুমার নামাজের পরই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
যদিও রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি )// জাহেদ হোসেন বলেন, মুছা নামের একজন মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল আজকে। সেখানে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
দিনে দুপুরে শত শত মানুষের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়াই কিভাবে হার্ট অ্যাটাকের মৃত্যু বললেন রাউজান থানা ওসি জাহেদ হোসেন। প্রভাবশালীদের বাচাতে এবং ধামাচাপা দিতে রাউজানের ওসি জাহেদ হোসেনের এমন মন্তব্য বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।