তাজ চৌধুরী, দিনাজপুর
মোসাম্মৎ রেবেকা খাতুন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলেন একজন সেলাই মেশিন অপারেটার। সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দুটো পা হারান তিনি। তার বাম পা কেটে ফেলতে হয় হাঁটুর ওপর থেকে এবং ডান পা গোড়ালির ওপর থেকে। দুদিন তিনি ছিলেন ধ্বংসস্তূপের নিচে।
ওই ঘটনায় তার মাসহ পরিবারের আরও ৫ জন সদস্যকে হারিয়েছেন রেবেকা খাতুন। তবে তাদের কারো মৃতদেহই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রেবেকা খাতুন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত রোগীদের মধ্যে হাসাপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া সর্বশেষ রোগী। হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯০ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে তাকে। তার দুই পায়ে অপারেশন হয়েছে ৮ বার। হাসপাতালে তিনি কাটান ১০ মাস।
কিন্তু দুই অঙ্গ হারালেও রেবেকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এক অঙ্গ হারানোর। সেসময় বিজিএমই’র সিদ্ধান্ত ছিল যার একটি অঙ্গহানি হবে তিনি পাবেন ১০ লাখ টাকা, আর যিনি দুটি অঙ্গ হারাবেন তিনি পানের ১৫ লাখ টাকা। রেবেকা পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা।
এদিকে তার দুই পায়ের কেটে ফেলা জায়গাগুলোতে হাড় বেড়ে গেছে। তার আবার অপারেশন করানো জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু আর্থিক কারণে অপারেশন করাতে পারছেন না। আরেকটি অঙ্গহানির ক্ষতিপূরণ পেলে তিনি বেড়ে যাওয়া হাড় কাটতে অপারেশন করতে পারবেন।
হাসপাতাল থেকে কৃত্রিম পা দেয়া হলেও রেবেকা খাতুন তা ব্যবহার করতে পারেননি কখনোই। কারণ তার কথায়, ওই কৃত্রিম পা খুবই ভারি এবং ব্যবহার করতে খুবই যন্ত্রণা বোধ হয়। এখন তার দেখাশোনার সব দায়িত্ব তার স্বামীর।
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে ছোট্ট মাটির ঘরে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন জাগো নিউজের দিনাজপুর প্রতিনিধি।
রেবেকা জানান, রানা প্লাজার ৬ তলায় নিউ ওয়েব পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তার দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি রেবেকা। এরইমধ্যে দুই মেয়ের মা হয়েছেন রেবেকা। স্বামী মো. মোস্তাফিজার রহমান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনিই রেবেকার একমাত্র ভরসা।
রেবেকা খাতুন বলেন, আমার স্বামীর সেবাতেই আমি বেঁচে আছি।
রেবেকার কাছে সেই ভয়াল স্মৃতি ও বর্তমানে বেঁচে থাকার কষ্টের কথা শোনার পর কথা হয় তার স্বামী মো. মোস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, স্ত্রীর এই অবস্থার কারণে দূরে কাজ পেলেও করতে যেতে পারেন না। পঙ্গু স্ত্রীসহ দুই মেয়ের দেখাশোনা তাকেই করতে হয়। শত কষ্টেও স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে চান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, এই ঘটনা যদি আমার বোনের হতো, আর যদি আমার ভগ্নিপতিরা ছেড়ে চলে যেত তাহলে আমার কেমন লাগত। তাই আমি যেকোনো অবস্থাতেই আমার স্ত্রীর পাশে থাকতে চাই।
তাদের দুই মেয়ে ছিদ্রাতুল মুনতাহা (৬) পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে, আর ছোট মেয়ে মাদানী আননুরের বয়স (২) বছর।
বড় মেয়ে ছিদ্রাতুল মুনতাহা তার মায়ের কলে বসে বলছিল সবার মা তাদের মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে। কিন্তু তুমি কেন পারো না মা?
এ সময় কোনো উত্তর দিতে পারেননি রেবেকা খাতুন। উত্তর দিতে না পারলেও চোখ ছল ছল করে ওঠে রেবেকার।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। মোসাম্মৎ রেবেকা খাতুন দুটি পা হারালেও একটি অঙ্গহানির ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আরেকটি অঙ্গহানির ক্ষতিপূরণ যাতে পান সেবিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..