রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক: রৌমারীর ছাটকড়াইবাড়ি-ঝগড়ারচর বেড়িবাঁধটি বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ২০টি গ্রামের। দূর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ। সাধারণ মানুষ পায়ে হেটে হাটবাজারে যাতায়াত করছে। এতকিছুর পরও বাঁধটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৩ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রৌমারী উপজেলাধীন দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী থেকে ঝগড়ারচর ডিসি সড়ক পর্যন্ত ক্ষুদ্র পানি সম্পদের (পাবসস) সোয়া ৬ কি:মি: বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে গত কয়েক বছর আগে। প্রতিবছর বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে খাদের সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বাঁধটি ভেঙে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গভীর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় আওয়াল মেম্বার, নজরুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, পাপু মিয়া, নুর মোহাম্মদ, জেসমিন আক্তার, আব্দুল বাতেন, আয়নাল হক, আবুল হাশেম, মোত্তালিব, আবদুল হাকিম, মতিয়ার রহমান ও সাখাওয়াত হোসেন জানান, বাঁধটির পূর্ব পাশে প্রায় ৩’শ মিটার ভেঙ্গে জিঞ্জিরাম নদীতে চলে যায়। এর মধ্যে চারটি ভাঙা স্থানে বাশেঁর সাকোঁ দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে জনসাধারণ।
দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সদস্যরা তাদের টহল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চোরাচালান রোধ প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকের মাথারঘাম পায়ে ফেলানো কষ্টার্জিত সোনার ফসল সর্বনাশা পাহাড়ি ঢলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল বিলীন হয়ে যায় প্রতি বছর। মানবেতর জীবন যাপন করে কৃষক পরিবার।
বাঁধটি না থাকায় ওই অঞ্চলের কৃষকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। বেরিবাঁধটি নির্মাণের পর থেকেই ওই সীমান্ত এলাকার মানুষ সড়ক পথে অটোভ্যান, রিক্সা, অটোবাইক, মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেল দিয়ে সহজে স্বল্প সময়ে হাটবাজার ও অফিস আদালতে যাতায়াত করত।
ক্ষুদ্র পানি সম্পদের বেড়িবাঁধটি পাবসস কমিটির ৪৫৭ জন সদস্য ও ৬০০ উপকারভোগীর মাধ্যমে ২০০১ সালে কাজ শুরু করা হয় এবং শেষ হয় ২০০৪ সালে। বেড়িবাঁধটি নির্মাণের ফলে বাঁধের পশ্চিম পাশে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানি থেকে রক্ষা হতো।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩ লাখ ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৩ লাখ টাকা বেড়িবাঁধটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই অল্প বরাদ্দ দিয়ে বাঁধটির সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বাঁধটিতে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি স্লুইস গেট ও দু’টি রেগুলেটর থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গা থাকার কারনে এলাকাবাসির কোন কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে ঝগড়ারচর (পাবসস) কমিটির সভাপতি জোবাইদুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধের ভিতরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। প্রতিবছর বেরিবাধেঁর ভাঙা দিয়ে পানি প্রবেশ করে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে।
ঝগড়ারচর (পাবসস) কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, বেরিবাধঁটি বন্যার পানিতে ভেঙ্গে যাওয়ায় জমির ফসল নষ্টসহ চরম দূর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসি। তবে বাঁধটি বর্ষা মৌসুমের আগে মেরামত না করলে বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করা যাবে না এবং দূর্ভোগও কমবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও উপসহকারী আমিনুল ইসলাম কাজল জানান, ওই ব্লকে ১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। বন্যার পানিতে প্রতিবছর ফসল নষ্ট হচ্ছে। তাই বেরিবাঁধটি সংস্কার করা খুবই জরুরি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মেজবাহ উল বলেন, বোয়ালমারী ও ঝগড়ারচর বেড়িবাঁধটি সরেজমিনে পরিদর্শনে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ আসতে চেয়েছেন। তবে বাঁধটির অবস্থা খুবই খারাপ। রৌমারীতে ক্ষুদ্র পানিসম্পদের বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে এই বাঁধটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বরাদ্দের জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান জানান, এলাকাবাসি আবেদন দিলে আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।