মো: ইউসুফ,লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর ভোলা-বরিশাল সড়করে বেহাল অবস্থা, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ২১ জেলার মানুষ। এ রুটে প্রতিদিন চলছে শত-শত বালু, পাথর ও যাত্রীবাহী যানবাহন। যার কারনে সড়কটির কার্পেটিং উঠে, খানা-খন্দক সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। লক্ষ্মীপুর থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০.৫ কিলোমিটার সড়কটি ২০১৩ সালে সর্বশেষ মেরামত করা হয়। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে শুধু রিপায়ারিং করা হলেও ভারী যান চলাচলের কারনে তা টিকছে না। নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়কের চার লেনের কাজ চলার কারনে প্রতিদিন মজুচৌধুরীর হাট থেকে শত শত বালু ও পাথরবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। যার কারনে সড়কের কোন সংস্কারই টিকছেনা। এ সড়ক দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ভোলা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, বরগুনা, যশোর, ফিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাটসহ ২১ জেলার মানুষ লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট হয়ে লঞ্চ, ফেরী দিয়ে যাতায়াত করে। এ রুটের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় রয়েছে বিশাল ১০টি বালু মহাল। এ ছাড়াও রয়েছে লঞ্চ, ফেরী ও মাছ ঘাট। এ লঞ্চঘাট ও ফেরীঘাট দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আসছে রড ও সিমেন্ট। মজুচৌধুরীর হাট থেকে প্রতিদিন ১০-১৬ চাকার ভারী ট্রাক ও লরী দিয়ে নোয়াখালী-কুমিল্লা ফোর লেনের কাজে বালু ও পাথর নেয়া হয়। এ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চাঁদপুর এলাকায় বালু, পাথর, রড ও সিমেন্টবাহী যানবাহন চলাচলের কারনে এ সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকার কারনে প্রতিদিনই গাড়ি উল্টে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে সাময়িক সড়কটি মেরামত করলেও টিকচেনা অতিরিক্ত ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে। এ সড়কে চলাচলকারীরা বর্ষায় কাঁদা ও গ্রীম্মে ধুলার মধ্যে চরম ভোগান্তিতে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটি আর সড়কের অবস্থানে নেই, এটি একটি মাড়াই দেওয়া ফসলের ক্ষেতে পরিনত হয়েছে। ব্যস্ততম এ সড়কে দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী করে চলাচল করতে হয় হাজার-হাজার মানুষকে। আসছে ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হবে। ব্যস্ততম আঞ্চলিক এ মহাসড়কটির নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবী জানান এলাকাবাসী।
এদিকে নদীতে অতিরিক্ত ¯্রােতের কারনে ঢাকা-আরিচা সড়কে ফেরী সার্ভিস বন্ধ থাকার কারনে এ সড়কে ভারী ও হালকা যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এতে করে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কাঁদা ভর্তি গর্তে যাত্রীবাহী বাস, বালুবাহী ট্রাক-লরী, লেগুনা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা আটকে যাচ্ছে। এ সময় ট্রাকের সামনের দিক সড়কে কার্পেটিংয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে দেখা যায়। পরে শ্রমিকরা চাকার নিচ থেকে কাঁদা সরিয়ে ট্রাক নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেও যাত্রীবাহী বাস, লেগুনা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা গুলোকে যাত্রী নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয় মহিন উদ্দিন,কালাম জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দকে ভরা। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত-শত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক চলাচল করে। এখন সড়কটির এমন অবস্থা যাতে রিকশা চলতেও কষ্ট হয়। বড়-বড় ট্রাক, লরী, বাস ও পিকআপ চলতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। সন্ধ্যার পরই সড়কটি পুরো অন্ধকার হয়ে পড়ে। তখন যানবাহন গুলো পুরো মৃত্যু ঝুঁকিতে চলাচল করে।
ট্রাক চালক সামিম জানান, প্রায় ৩ বছর ধরে সড়কটির অবস্থা বেহাল। গত ৮ মাস থেকে সড়কের বড়-বড় গর্তে পানি জমে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই এসব গর্তে আটকে গাড়ি বিকল হয়ে সড়কের দুপাশে জানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা দূর্ভোগ পোহাতে হয় চালক ও যাত্রী সাধারণের।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সড়কটি লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০.৫ কিলোমিটার (চার লেন) ৩৬ ফুট প্রশস্ত করার জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা টেন্ডার হয়েছিলো। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে তুলনামুলক বিবরনী (চিএস) পাশ না হওয়ার কারনে কাজের কার্যাদেশ পাচ্ছেনা ঠিকাদার। কার্যাদেশ না পাওয়ার কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারছেনা। সড়কটির বরিশাল, লায়েরহাট, ভেদরিয়া, ভোলা, ইলিশা, মজুচৌধুরীর হাট-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়ক (৮০৯) অনুমোদন হয়েছিলো। কিন্তু অন্য অংশে কাজ চললেও লক্ষ্মীপুর অংশে কাজ হচ্ছেনা।
লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক জানান, এ সড়কটির গত বছর ১৯ ডিসেম্বর টেন্ডার হয়েছিলো, যার কারনে সড়কটি সংস্কার কাজ করা যাচ্ছেনা। সড়কটির টেন্ডার হওয়ার কারনে রিপেয়ারিংয়ের কোন টেন্ডার না হওয়ায় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় যত দ্রুত সম্ভব (চিএস) পাশ হওয়ার পরই সড়কের কাজ শুরু করা যাবে।