নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। আসছে শীত মৌসুমে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকতে দেখা গেলেও বিস্তার দ্রুতই কমে আশঙ্কামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। পাশাপাশি সংক্রমণের তুলনায় বর্তমানে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় বিষয়টি আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে নোবেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৫ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত ৩১ থেকে ধীরে ধীরে ছুটি শিথিল করা হয় এবং বর্তমানে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ছাড়া সব কিছু প্রায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে এসেছে। আর এই পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে মানুষের মধ্যেও সচেতনতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এর ফলে আশঙ্কার মাত্রাও বেড়ে গেছে। যেহেতু পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কামুক্তর পর্যায়ে আসেনি তাই আসছে শীতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েব (তরঙ্গ) শুরু হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর শীত মৌসুমে চীনের উহান শহর থেকে এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে আসন্ন শীতে বাংলাদেশে করেনার দ্বিতীয় তরঙ্গ দেখা দিতে পারে। তাই এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওবায়দুল কাদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, করোনার সংক্রমণ দেশজুড়ে কমে এসেছে এ কথা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অনেক দেশে করোনার সংক্রমণে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে। বর্তমান পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত অবস্থা দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগা বা অবহেলা না করার অনুরোধ করছি। যেকোনো সময়ে সংক্রমণ প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি বিসিএসআইআর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এ ভাইরাস দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে রূপান্তরের হার প্রায় সাত শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এ হার প্রায় ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৫ ধরনের স্বতন্ত্র করোনা ভাইরাসের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
দেশে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৭০২ জন। আর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪ জন। শনাক্তের তুলনায় বর্তমানে মৃত্যুর হার বেশি। বর্তমানে সংক্রমণের হার ১৩/১৪ শতাংশ। আর ১১ সেপ্টেম্বরের হিসেবে মৃত্যুর হার ১,৩৯ শতাংশ। এই হার ৫ শতাংশের নীচে নেমে আসলে আশঙ্কামুক্ত বলা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, সংক্রমণ কিছুটা কম মনে হলেও মৃত্যুর হার ততটা কমেনি। শীতের সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। কারণ শীতেই করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল। আসলে মানুষ তো স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। এখনও সংক্রমণের হার ১৩/১৪ শতাংশ। এই হার ৫ শতাংশের নীচে নেমে আসলে বলা যাবে আমরা আশঙ্কামুক্ত।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রামাটিক্যালি দেখলে হয় তো বাড়ার শঙ্কা থাকে। কিন্তু আমি মনে করি দেশের মানুষ এ বিষয়ে অনেকটাই সচেতন হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলাটাতে তারা অভ্যস্ত হতে পেরেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা আছে বলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এ্ই জায়গাটায় সরকার মানুষকে সচেতন করতে পেরেছে। তবে পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত হতে হলে ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতে হবে। সেই সময় পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য সচেতনতাটা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।